বিয়ে ও বাস্তবতা
বিয়ে করলেই কোনো মানুষ পূর্ণরূপে শুদ্ধ হয়ে যাবে। বিয়ে করলেই বুযুর্গ কিংবা ওলী আল্লাহ হয়ে যাবে, তার চরিত্র থেকে ফুলের ঘ্রাণ কিংবা মধুর স্বাদ উপচে উপচে পড়বে। সে-ব্যক্তি সাঈয়ুদুনা ইউসুফ আলাইহিস সালামের মতো ফুলেল ও নিষ্পাপ-নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারী হয়ে যাবে। সে জান্নাতুল ফেরদৌসের উচ্চ মাকামে পৌঁছে যাবে- মোটের ওপর বিষয়টা আসোলে অতোটা সরল নয়।
তার মানে কি চরিত্র সংরক্ষণে বিয়ের গুরুত্ব নেই? অবশ্যই আছে। নিজেকে পবিত্র রাখার জন্য, একটা পবিত্র বন্ধনের জন্য বিয়ের বিকল্প অবশ্যই নেই। বিয়ে নিঃসন্দেহে একটা চরিত্র-শুদ্ধ রাখার সেরা মাধ্যম !
কিন্তু যেভাবে বিয়ে নিয়ে বাড়াবাড়ি হচ্ছে যে, বিয়ে করলেই দো-জাহানের অশেষ ও অসীম নেকি হাসিল করে এরপর তরতর করে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান দুনিয়ায় থাকতেই হয়ে যাবে, বিষয়টি কি আসোলোই তাই? অবশ্যই না!
এই যে ধরুন পরকীয়া, এই পরকীয়া কি অবিবাহিতরা করে? করে তো তারাই, যে বা যারা বিয়ে করেছে, যার স্ত্রী আছে স্বামী আছে কিংবা কারো একাধিক প্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানও আছে ; এমন লোকজনই তো পরকীয়া করে। তারা তো বিয়ে করছে, তা হলে পরকীয়া করে ক্যান?
তার বা তাদের চরিত্রের এই হাল ক্যান?
নিশ্চয়ই এটা তার সুদুরপ্রসারি চারিত্রিক-মানসিক সমস্যা।
বিয়ে করলেই যদি মুত্তাকি-মুহসিন হয়ে যেতো, তা হলে পরকীয়ার মতো ভয়াবহ সংক্রমক ব্যাধি আমাদের সমাজকে ঘিরে রাখার কোনো প্রশ্নই ওঠতো না! এই পরোকীয়ার বিষবাষ্পে অসংখ্য-অগণিত সংসার-পরিবার ভাঙতো না।
বিয়ে করা অবশ্যই উত্তম একটি কাজ, এবং তা ইবাদতেরও অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু সেই কাজ করার জন্যে থাকা চাই যথেষ্ট প্রস্তুতি, গঠন করা উচিত নিজের ব্যক্তিত্ব-চরিত্র । বিয়ে-পূর্ব যদি কেউ ধৈর্য ধারণ করে চরিত্রের হেফাজত করা শিখতে পারে তবেই তার জন্য বিয়ে করাটা স্বার্থকতা। না-হয় নিভু নিভু চরিত্র নিয়ে বিয়ে করা মানে অন্য একজন মানুষকে অশান্তির অনলে ডুবিয়ে দেওয়া। একটা পরিবার ও সমাজ ধংস করা।
এই সমাজ অবশ্যই পবিত্র আর ভালো মানুষদের মূল্যায়ন করতে পারে না। ভালো মানুষের অনুকূলে নয় এই সমাজব্যবস্থা। সুতরাং এই সমাজে চাইলেই আপনার বা আমার ইচ্ছেতে বিয়ে করতে পারি না। পারবো না। পারছি না।
তা হলে কী করার?
হ্যাঁ একটা বিষয় তো করণীয় আছে, যা করে যাচ্ছে আমাদের অনেকেই – তা হলো শখের বয়সে সবর করা। একজন মানুষের দায়িত্ব নেওয়ার মতো মানসিকতা, যোগ্যতা অর্জন করা। ( নারী-পুরুষের উভয়ই একে অন্যের দায়িত্ব নিতে হয়, হবে)। উন্নত ব্যক্তিত্ব-চরিত্রের প্রশিক্ষণের আওতায় আসা। না হয় বিয়ে করে লাভ নেই! যেই লাউ সেই কদু-ই হবে আমাদের অবস্থা !!
বিয়ে করা মানেই সব না। বিয়েই জীবনের মানে না। জীবনের উদ্দেশ্য না। জীবনের উদ্দেশ্য বিশাল-বিস্তৃত।
আমার কাছে বিয়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কন্ট্রিবিউশান।
সমাজের জন্য।
মানুষের জন্য।
জীবনের জন্য।
দ্বীনের জন্য।
অবশ্য একজন বিশ্বস্ত এবং উত্তম জীবনসঙ্গী এক্ষেত্রে সাপোর্টিভ ভূমিকা রাখতে পারে- যা নিঃসন্দেহে বলা যায়, এবং তা সত্যও বটে !!