বিশ্বের সন্ত্রাসবাদ

বিশ্বের সন্ত্রাসবাদ

১। অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ‘দাভিদ বেন গুরিয়ন‘। যে কিনা একটা সময় ইহুদিবাদি সন্ত্রাসী সংগঠন ‘হাগানার‘ প্রধান ছিল। হাগানা নামক এই সন্ত্রাসী সংগঠনটি ইজরাইল নামক অবৈধ রাষ্ট্রটি প্রতিষ্টা করতে অজস্র সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে অগণিত মানুষ হত্যা করেছে।

২। ইজরাইলের ষষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী ‘মোনাখেম বেগিন‘। যে কিনা ইসরায়েল প্রতিষ্টার পূর্বে ১৯৪৪ সালে ইহুদিবাদি সন্ত্রাসী সংগঠন ‘ইরগুনের‘ প্রধান হয়েছিল। তার নেতৃত্বে ইরগুন নামক এই ইহুদিবাদি সন্ত্রাসী সংগঠনটি প্যালেস্টাইনের পুলিশ স্টেশনগুলোতে হামলা চালিয়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে (প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পর ১৯২০ থেকে ১৯৪৮ সালের মে মাস পর্যন্ত প্যালেস্টাইন ব্রিটিশদের অধীনে ছিল)। ব্রিটিশ সরকার সে সময় ইহুদিবাদি সন্ত্রাসী সংগঠনটির প্রধান ‘মোনাখেম বেগিনকে’ জীবিত বা মৃত ধরিয়ে দেয়ার জন্য দশ হাজার পাউন্ড পুরুষ্কারও ঘোষনা করেছিল।

চতুর বেনিন তখন লম্বা দাড়ি লাগিয়ে ‘তালমুদ পণ্ডিত‘ ছদ্মবেশ ধারন করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যায়। এই বেগিনের নেতৃত্বেই ১৯৪৬ সালে কিং ডেভিড হোটেলে বোমা হামলা চালিয়ে একশোর মতো মানুষকে হত্যা করা হয়। যার মধ্যে ১৭ জন সাধারণ ইহুদিও ছিল। হামলার সময় ঐ হোটেলে অবস্থানরত ব্রিটিশ প্রশাসনের টাইপিস্ট ইহুদি নাগরিক ‘সুশানা‘ হামলার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অশ্রু ভেজা চোখে বলেন, আমার বস মিস্টার জ্যাকব ছিলেন একজন ব্রিটিশ ইহুদি, তিনি খুবই ভালো একজন মানুষ ছিলেন, এই মানুষটিকে ওরা হত্যা করল।

৩। ১৯৪৮ সালে জেরুজালেমের রাস্তায় জাতিসংঘের গাড়িবহরে হামলা চালিয়ে সুইডিশ কূটনীতিক ‘কাউন্ট ফলকি বার্নাডোট‘ কে হত্যা করে ইহুদি সন্ত্রাসীরা। তিনি মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ফিলিস্তিনে শান্তি প্রতিষ্টা করতে এসেছিলেন।

৪। সন্ত্রাসী এবং অবৈধ রাষ্ট্রটি জন্মের পর থেকে আজ অবধি জোরপূর্বক ফিলিস্তিনি নাগরিকদের ভিটেমাটি হতে উচ্ছেদ করে করে সেখানে ইহুদি বসতি স্থাপন করে চলছে। যারা বাড়াবাড়ি করছে তাদের হত্যা করছে।

৫। সন্ত্রাসবাদী এবং অবৈধ এই রাষ্ট্রটি গাজাকে অবরুদ্ধ করে সেখানে বিশ্বের সর্ববৃহৎ উন্মুক্ত কারাগার বানিয়ে রেখেছে। ইভেন, অবরুদ্ধ গাজাবাসির সাহায্যে ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা‘ নামে তুরস্ক যে ত্রানবাহি জাহাজ পাঠিয়েছিল, ইহুদিবাদি সন্ত্রাসী এই দেশটি সেই জাহাজে পর্যন্ত হামলা চালিয়ে ১০ জনকে হত্যা করে।

৬। ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা ‘মোসাদ‘ এবং ‘আমান‘ মিলে গুপ্ত হত্যার মাধ্যমে প্রায় ৩০০০ বিজ্ঞানি এবং রাজনৈতিক নেতাকে খুন করেছে। আজকের যে ইজরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী তার সৃষ্টিই হচ্ছে হাগানা, ইরগুন ও স্টার্ন গ্যাং নামক সন্ত্রাসী বাহিনী হতে। ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ইসরায়েল রাষ্ট্র ঘোষণার পর সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ‘হাগানা, ইরগুন ও স্টার্ন গ্যাং’ একীভূত হয়ে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী গড়ে তোলে।


যাইহোক, এমন বহু ঘটনা আছে, সেসব বলে লেখা বড় করতে চাই না। কথা হচ্ছে, এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রচুর মুভি বানানো যেতে পারে।

জাতিসংঘে বহুবার অবৈধ এবং সন্ত্রাসী এই রাষ্ট্রটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাবও উপস্থাপিত হয়েছে। কিন্তু ‘আমেরিকা‘ নামক গডফাদার রাষ্ট্রটির ভেটোর কারনে একটা প্রস্তাবও পাশ হয়নি।
আমেরিকার কথা যেহেতু উঠলই তাই তাদের ব্যপারেও একটু বলা দরকার। অবশ্য এসব এখন ওপেন সিক্রেট। শুধুমাত্র একবিংশ শতাব্দিতে এই আমেরিকা মিথ্যা অজুহাতে ইরাক, আফগানিস্তানে হামলা চালিয়ে লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে।

অস্র ও অর্থ সহায়তা দিয়ে সন্ত্রাসীদের দাড়ি টুপি পড়িয়ে তাদের হাতে মানুষকে হত্যা করাচ্ছে।
কিভাবে?

শুধু মাত্র একটা উদাহরণ দেই। যেই তালেবানদের বিরুদ্ধে আমেরিকা যুদ্ধ করেছে। সেই আমেরিকাই তালেবানদের সৃষ্টি করেছে। সময় পেলে অন্য একদিন এ বিষেয়ে বিস্তারিত লেখব, ইনশাআল্লাহ। এখানে সংক্ষেপে কিছুটা বলি।

সত্তর দশকের শেষের দিকে আফগানিস্তানে ক্ষমতাশীন ‘সরদার দাউদ খানকে’ সপরিবারে হত্যার মধ্যদিয়ে ‘পিপলস্ ডেমোক্রেট পার্টি অব আফগানিস্থান‘ (পিডিপিএ) এর নেতা ‘মোহাম্মাদ তারেকী‘ ক্ষমতা দখল করে নেয়। পিডিপিএ ক্ষমতায় এসে সমাজতন্ত্র বাস্তবায়নের কাজে হাত দেয়। ধর্মীয় আইনের পরিবর্তে মার্কসবাদী আইন প্রচলন করে। সোভিয়েত ইউনিয়নকে আফগানিস্তানে আমন্ত্রণ জানায়। যা কিনা সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাড়ায়।

আফগানিস্থানকে সোভিয়েত বলয়ের বাহিরে আনতে পাকিস্থানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হকের সাহায্যে আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ অস্র ও প্রশিক্ষন প্রদান করে মুজাহেদিন বাহিনী গড়ে তোলে। সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন প্রপাগান্ডার শক্তিশালী অস্ত্র হচ্ছে ধর্ম। কমিউনিস্টরা ধর্ম বিদ্বেষী এবং সৃষ্টিকর্তাকে মানে না, তারা ব্যাপক ভাবে এ ব্যপারটা প্রচার করতো।

আর এর দ্বারাই তারা প্রতিদ্বন্দ্বী সমাজতন্ত্রকে সফলতার সাথে ঘায়েল করেছে। সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন শক্তি আফগানিস্তানে সোভিয়েতকে পরাজিত করতে ধর্মকে ব্যাবহার করে সাধারণ মুসলিমদের মগজ ধোলাই করে মুজাহিদিন বাহিনী গড়ে তোলে।

পরবর্তীতে আমেরিকা ও ব্রিটেনের অর্থ সহায়তায় সীমান্তবর্তী এলাকার পাকিস্থানের প্রতিষ্টিত মাদ্রাসার ছাত্রদের কেন্দ্র করে তালেবান (ছাত্রদেরকে স্থানীয় পশতুনের ভাষায় ‘তালেবান’ বলা হয়) গড়ে ওঠে।


চিন্তার বিষয় হচ্ছে, নাটক সিনেমায় কেবল মগজ ধোলাইয়ের স্বীকার এবং প্রকল্প বাস্তবায়নকারী দাড়ি টুপি পরিহিত লোকদেরকেই দেখানা হয়। বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মূল উৎসকে আড়াল করে রাখা হয়। এ সকল নাটক সিনেমার নির্মাতারা সত্যিই যদি মানুষের কাছে সন্ত্রাসবাদ তুলে ধরতে চাইতো, তাবে পশ্চিমা এবং ইহুদিবাদি সন্ত্রাসবাদ নিয়েই সিনেমা তৈরি করতো। কিন্তু তা না করে, কেবল যারা কনভার্টেড হয়ে কিংবা অর্থের বিনিময়ে ফিল্ড পর্যায়ে কাজ করে থাকে তাদেরকেই পর্দায় উপস্থাপন করা হয়।

ফলশ্রুতি খুব সহজেই পোশাক পরিচ্ছদ এবং ধর্মকে এক্সপোস করে ইসলামকে ভিলেন হিসেবে দাড় করানো যায়। ব্যক্তিগত ভাবে আমি বিষয়টাক ভন্ডামি এবং মিডিয়া সন্ত্রাস বলে অভিহিত করে থাকি। যেভাবে ধর্মকে ব্যাবহার করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীরা সমাজতন্ত্রকে ঘায়েল করেছে। একইভাবে মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করা কিছু ধর্মান্ধ মানুষের মগজ ধোলাই করে, তাদের ব্যাবহার করে ইসলামকে ঘায়েল করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।

প্রশ্ন হচ্ছে কেন?

কারন সমাজতন্ত্র যেমন সাম্রাজ্যবাদ এবং পুঁজিবাদের জন্য বাধা, ইসলাম তার চেয়ে আরো বড় বাধা। কারণ ইসলাম বলছে, অন্যের সম্পদ দখল করো না। ইসলাম বলছে, শরীরের ঘাম শুকানোর আগেই শ্রমিকের ন্যয্য মজুরি পরিশোধ করে দেও। ইসলাম বলছে, নিজে যা খাও দাশ-দাশীদেরও তাই খেতে দেও, মানুষে মানুষে পার্থক্য সৃষ্টি করো না। প্রথম খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) সন্ধিপত্র স্বাক্ষর করতে প্যালেস্টাইন যাওয়ার সময় অর্ধেক পথ ভৃত্য উটের রশি ধরে টেনেছে আর বাকি অর্ধেক পথ নিজে উটের রশি ধরে টেনে দেখিয়েছে ইসলামের সাম্যতা।

রাসূল (সঃ) এর কথায় খাদিজা (রাঃ) নিজের সম্পদ মানুষের মাঝে বিলি করে দেখিয়েছে ইসলামের মহানুভাবতা। নিজে পিঠে করে ক্ষুধায় কাতর অসহায় মানুষের ঘরে খাবারের বস্তা পৌছে দিয়ে খলিফা ওমর দেখিয়েছে ইসলামি শাসকের দায়িত্বশীলতা। নিজের অপরাধি পূত্রকে দোর্রা মেরে খলিফা ওমর দেখিয়েছে ইসলামে আইন সবার জন্য সমান।
ইসলামের এই মহান বিষয় গুলো যে সামন্তবাদ থেকে উঠে আসা পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের জন্য মহাবিপদ তা বুঝতে তারা মোটেও কালক্ষেপণ করেনি।

এছাড়া পশ্চিমাদের ইতিহাস চক্রান্তের ইতিহাস। পূর্বেও চক্রান্ত করেছে এখনো করছে, কিন্তু আধুনিক সময়ে মানবতা নামক মুখোশ তাদের সকল চক্রান্ত আড়াল করে রেখেছে। আলেম সমজের দ্বারাই আজ ইসলামকে আজ কেবল মাত্র নামাজ-রোজা আর পারলৌকিকতার মধ্যে আটকে রাখা হচ্ছ। কারণ ইসলামের সামগ্রীকতা মানব শোষণের হাতিয়ার ‘সাম্রাজ্যবাদ এবং পুঁজিবাদের’ জন্য মৃত্যুর দূত।

বিশ্বের সন্ত্রাসবাদ - Islami Lecture
বিশ্বের সন্ত্রাসবাদ – Islami Lecture


ইদানিং দেখছি এক মুভির ট্রেলার নিয়ে বেশ সমালোচনা হচ্ছে, বয়কটের আহব্বান জানানো হচ্ছে। কারণ সেখানেও ইসলাম এবং কালেমার পতাকাকে ভিলেন হিসেবে চিত্রায়িত করা হচ্ছে। এ বয়কটের আহব্বান কে আমি স্বাগত জানাই। তারমানে এই না যে, জঙ্গিবাদে সমর্থন করছি। অবশ্যই জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে দাড়াতে হবে, কিন্তু তারচেয়ে বেশি আওয়াজ তুলতে হবে পর্দার আড়ালে থাকা সন্ত্রাস এবং জঙ্গীবাদ সৃষ্টিকারী পশ্চিমা চক্রান্তের বিরুদ্ধে।

সমগ্র বিশ্বের শান্তিকামী মানুষেরা যখন সন্ত্রাসবাদী ইজরাইলের কর্মকাণ্ডে নিন্দা জানাচ্ছে, তখন অবৈধ এই রাষ্ট্রটির বিরুদ্ধে জাতিসংঘে উপস্থাপিত প্রতিটা বিলে ইসরাইলের পক্ষে ভেটো দিয়ে মার্কিন শাসকগোষ্ঠী তাদের রক্ষা করেছে। সুতরাং তারা নিজেরাই যে সন্ত্রাসবাদী তা আর বোঝার বাকি থাকে না।

সন্ত্রাস নির্মূলের নামে পশ্চিমা গণহত্যা এবং মানবতা বিরোধী কর্মকাণ্ড হতে মানুষকে রক্ষা করতে, নাটক, সিনেমা, ডকুমেন্টারি, এবং লিখনিতে মানবতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা পশ্চিমাদের মুখোশ উন্মচন করা অতীব জরুরী।

লেখাটি সংগ্রহীত
লেখাটি লিখেছেন
প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন
মূল লেখাটি প্রকাশিত হওয়ার লিংক

Exit mobile version