পাত্রী দেখতে গিয়ে দ্বীনদার যুবকের প্রশ্ন
বিয়ের পাত্রী দেখতে গিয়ে এক দ্বীনদার যুবকের ব্যতিক্রমী ৩টি প্রশ্ন অতঃপর যা ঘটলো কল্পনাতীত!!
এক মা তার ছেলের জন্য বিয়ের ব্যাপারে এক ধার্মিক মেয়ের সাথে সাক্ষাতের আয়োজন করল। ছেলে ও মেয়ে দুইজনই আলাদা একটি রুমে নিজেদের সাথে কথা বলার সুযোগ পেল।
ছেলে মেয়েটিকে প্রথমে প্রশ্ন করতে আশ্বস্ত করল।
মেয়েটি ছেলেকে অনেক প্রশ্নই জিজ্ঞেস করল।
সে তার দৈনন্দিন জীবন, শিক্ষাদীক্ষা, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, স্বভাব, পছন্দের বিষয়, অবসর, অভিজ্ঞতা আরো অনেক কিছু সম্পর্কে জানতে চাইল।
ছেলেটি মেয়ের হাসিমুখে ভদ্রতার সাথে সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেল।
এরপর মেয়ে জানতে চাইল, “আমার সম্পর্কে আপনার কোন প্রশ্ন আছে?
“জি, আমার মাত্র তিনটি প্রশ্ন আছে।”
ছেলেটি উওরে বলল। মেয়েটি ভাবল, “ও, শুধু তিনটি প্রশ্ন!”
কাকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসেন
ছেলেটির প্রথম প্রশ্ন ছিল, “আপনি কাকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসেন, যার চাইতে বেশি ভালবাসা আর কাউকে সম্ভব না?”
সে বলল, “এটা তো খুব সহজ প্রশ্ন। অবশ্যই আমার মাকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসি।”
যেকোন সুরার অর্থ বলতে পারেন?
ছেলেটির দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল, “আপনি বলেছেন যে, আপনি কুরআন মাজিদ পড়েন। আপনি কি আমাকে আপনার পছন্দমত যেকোন একটি সুরার অর্থ বলতে পারেন?”
এটা শুনে মেয়েটি একটু বিব্রত হল এবং বলল, “আমি এখনো জানিনা। কিন্তু শীঘ্রই আমি শিখে ফেলব ইনশা আল্লাহ। আমি একটু ব্যস্ত থাকি তো।”
কেন আপনাকে আমার বিয়ে করা উচিত?
ছেলেটির তৃতীয় প্রশ্ন ছিল, “বিয়ের ব্যাপারে আমি বেশ কয়েকজন মেয়ের সাথে কথা বলেছিলাম, যারা আপনার চেয়ে সুন্দর ছিল। তো আপনি কি বলবেন, কেন আপনাকে আমার বিয়ে করা উচিত?”
এটা শুনে মেয়েটি ভীষণ ক্ষেপে গেল এবং রাগী গলায় তার পিতামাতাকে বলল, “আমি এই ছেলেকে মোটেই বিয়ে করবনা। সে আমাকে অপমান করেছে।
আমার সৌন্দর্য নিয়ে খোঁটা দিয়েছে।
“ছেলের মা বাবাও সেখানে উপস্থিত ছিল এবং বিয়ে নিয়ে আর কোন কথাবার্তা না বলেই তারা প্রস্থান করল। এবারে ছেলের পিতামাতা সত্যিই ছেলের উপর ক্রুদ্ধ হল,বলল!
“তুমি মেয়েটিকে কী বলেছ যে মেয়েটি রেগে গেল?
এই ফ্যামিলি অনেক ভাল, মর্যাদাপূর্ণ, তুমি যে রকম ধার্মীক খুঁজছো, সেরকমই।
কী বলেছ তাকে তুমি?”
ছেলে বলতে লাগল,
“প্রথমে তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, সে সবচেয়ে বেশি ভালবাসে কাকে। সে উত্তর দিল যে, তার মাকে।”
এটা শুনে তারা আশ্চর্য হলেন, বললেন, “তো এটাতে ভুল কোথায়?”
ছেলেটি বলল,
“প্রকৃত বিশ্বাসী হচ্ছে সে, যে আল্লাহ ও তার রাসুলকে যেকোন কিছুর চাইতে সবচেয়ে বেশি ভালবাসে।
যে স্ত্রীলোক আল্লাহ ও তার রাসুলকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসে, সে আমাকে ভালবাসবে এবং সম্মান করবে। তাদের ভালবাসার কারণে আমার সাথে সে বিশ্বস্ত থাকবে এবং এই ভালবাসার কারণে আমরাও নিজেদেরকে নিজেদের ভালবাসা শেয়ার করতে পারব, যে ভালবাসা লোভ লালসা,সৌন্দর্য অথবা অন্য সকল জাগতিক বস্তুর ঊর্ধ্বে।”
ছেলেটি বলতে লাগল,
“আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল যে, আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, সে যেন তার পছন্দমত কোন একটি সুরার অর্থ আমাকে শোনায়। সে বলতে পারেনি।
কারণ তার এখনো সময় হয়ে উঠেনি। তখন, আমার এই হাদীসটা মনে হয় যে, “সকল মানুষ মারা যায়, তবে তারা ব্যতীত, যাদের জ্ঞান আছে।”
সে তো বিশ বছরেরও বেশি সময় পেয়েছে।
অথচ তার এখনো জ্ঞান অর্জন করার সময় হয়নি! আমি কি করে এমন মেয়েকে বিয়ে করতে পারি, যে এখনো তার দায়িত্ব ও অধিকার সম্পর্কে জানেনা।
সে বাচ্চাদেরকে কী শিক্ষা দিবে। একজন মা-ই তো তার বাচ্চাদের জন্য সর্বোত্তম শিক্ষক। এবং এমন এক স্ত্রীলোক, আল্লাহকে দেওয়ার মত সময় যার হয়না, স্বামী ও সন্তানদেরকে দেওয়ার মত সময় তার নাও হতে পারে।
আমার তৃতীয় প্রশ্ন ছিল যে, বিয়ের ব্যাপারে আরো কিছু মেয়ের সাথে আমার সাক্ষাত হয়েছে যারা তার চেয়ে সুন্দর ছিল। তো তাকে কেন আমার বিয়ে করা উচিত। মূলত এ কারণেই সে ক্রুদ্ধ হয়েছিল।”
ছেলের মা-বাবা এখানে আপত্তির সুরে মন্তব্য করল,
“এভাবে বলাটা তো অপ্রীতিকর। তুমি কেন এটা বলতে গেলে?
“ছেলে উত্তর করল,
“আমি এটা এ উদ্দেশ্যে বলেছিলাম যে, সে তার রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে কিনা।
যখন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে, জিজ্ঞেস করা হয়েছিল পূণ্যবান হওয়ার গুণ গুলো সম্পর্কে, তখন তিনি বলেছিলেন, “রাগান্বিত হয়োনা,
রাগান্বিত হয়োনা, রাগান্বিত হয়োনা।
কারণ, রাগ শয়তান হতে আসে।”
যে মেয়ে কোন অপরিচিত ব্যক্তির সাথে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা, যার সাথে সে মাত্রই কথা বলেছে এবং তাদের সব কথাবার্তা তার পিতামাতাকে মুহূর্তেই
বলে দিল, সে কী করে সারাজীবন ধরে, তার স্বামীর সাথে এসব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে থাকতে পারবে।”
এর থেকে শিক্ষা…..
১) অবশ্যই, আপনার ভালবাসা হবে আপনার রব ও তার রসুলের জন্য সকল কিছুর ঊর্ধ্বে।
২) আহা, দুঃখজনক! এখনো আমাদের সময় হয় নি কোরআন বুঝে বুঝে অর্থ পড়ার,তাফসীর, তরজমাসহ,আমরা আজ এতোটাই ব্যস্ত,দুনিয়াবি কাজে!!
৩) “রাগ” শয়তানের ওয়াসওয়াসা! অবশ্যই, শয়তান হতে আসে!
যে রেগে গেল সে অবশ্যই, অবশ্যই হেরে গেল।
আল্লাহ আমাদের এমন সঙ্গী দান করুন, যে চক্ষুশীতল করবে এবং জান্নাতে যাওয়ার উত্তম মাধ্যম হবে।
-ওয়ামা তাওফিকী ইল্লাহ বিল্লাহ
“আমিন”ইয়া আল্লাহ
সংগৃহীত ও সংকলিত