আপনি যদি এমন স্থানে বাস করেন যেখানে মুসলিমদের সংখ্যা কম এবং আপনি একজন প্রাকটিসিং মুসলিম হয়ে থাকেন, তাহলে জীবনের কোনো না কোনো সময় হয়তো এসেছে যেখানে আপনি রোযা রেখেছেন আর আপনার চারপাশে সকলে খাবার গ্রহণে ব্যস্ত! আমি বহুবার এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি, হয়তো ছোটবেলায় স্কুলে ক্যান্টিনে সকলে দুপুরের খাবারের প্রস্তুতি নিচ্ছে আর আমি চুপচাপ একপাশে বসে ছিলাম কিংবা কর্মক্ষেত্রে যেখানে হয়তো গুরুত্বপূর্ণ মিটিং এ উপস্থিত থাকার জন্য দুপুরে আমাকে থাকতে হয়েছে এবং আমার সহকর্মীরা তাদের মধ্যাহ্নভোজনে ব্যস্ত ছিলো। নিঃসন্দেহে একজন মুমিন ব্যক্তির জন্য এমন অবস্থা রহমত স্বরূপ যা সম্পর্কে হয়তো ব্যক্তির স্বয়ং কোনো ধারণা পর্যন্ত নেই।
হয়তো অনেকে ভাববেন, রোযা রাখার সাথে ফেরেশতাদের কি সংযোগ থাকতে পারে! এ প্রশ্নের জবাব স্বরূপ বলতে পারি ফেরেশতাদের ঐ ব্যক্তির(রোযাদার) উপর প্রার্থনা করার বিষয়টি এক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে জড়িত। কিছু বিশেষ ঘটনা সমূহ আছে যা একজন রোজাদারের সাথে ঘটে থাকে তার অজান্তেই। আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনের দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখতে পারবো, তিনি ‘সুহুর’ কিংবা ‘সাহরী’ করার ব্যাপারে তার উম্মতকে তাগিদ দিয়েছেন।
অর্থাৎ, যদি একজন মুমিন ব্যক্তি রোযা রাখার ইচ্ছে পোষণ করে তাহলে সেই ব্যক্তি যেন পরদিন ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগেই তার সুহুর করে নেয়। বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেছেন,
তোমরা সাহরি খাও, কারণ সাহরিতে বরকত রয়েছে।
(বুখারি,১৮০১; মুসনাদ আহমদ,১১৮৭)
অর্থাৎ, আপনি রোযা রাখার নিয়তে এক গ্লাস পানি কিংবা শুধুমাত্র একটি খেজুর খেয়ে থাকেন সেক্ষেত্রেও আপনি সাহরীর হক আদায় করে ফেললেন। মুসনাদে আহমদের বর্ণনায় সাহরীর ফজিলত সম্পর্কে বলা আছে যে, মুসলমান ভোরের এ সময়ে জেগে আল্লাহ পাকের হুকুম মেনে সাহরি খেতে বসে;
আল্লাহ পাক খুশি হয়ে তাদের জন্য বিশেষ রহমত অবতীর্ণ করেন এবং মহান আল্লাহর ফেরেশতারা সাহরি গ্রহণকারীদের জন্য বিশেষ দোয়া করতে থাকেন।
(মুসনাদে আহমদ৩/১২; মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: হাদিস নং ৯০১০; সহিহ ইবনে হিব্বান: হাদিস নং ৩৪৭৬)
এমনকি কোনো রোজাদার ব্যক্তির আশেপাশে কেউ খাবার গ্রহণ করতে থাকলে ফেরেশতারা তখন রোজাদার ব্যক্তির জন্য প্রার্থনা করতে থাকে। আর এই প্রার্থনার সময়সীমা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত রোজাদার ব্যক্তির আশেপাশের মানুষ খাবার খেতে থাকে। সুবহানাল্লাহ! সুতরাং আপনি যদি একজন রোযাদার হয়ে থাকেন আর এমন পরিস্থিতি,পরিবেশে থাকেন যেখানে আপনার চারপাশের মানুষ খাবার গ্রহণ হচ্ছে ঠিক সে সময়ই ফেরেশতারা আপনার হয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে। হাদিস হতে পাওয়া যায়, উম্মে উমারা বিনতে কাব আল আনসারিয়্যা( রাদিআল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত,
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম একদিন তার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। তখন তিনি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম এর সামনে খাবার পেশ করেন। নবী কারীম (সাঃ) তখন তাকে বললেন, ‘তুমি খাও।’ তিনি বলেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি তো সায়িম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম তখন বলেন, ‘সায়িমের নিকট কেউ খাবার খায় তাহলে খাবার শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফেরেশতাগণ সায়িমের জন্য দোয়া প্রার্থনা করতে থাকেন।
(তিরমিজি, ৭৮৪: আল মাদানি প্রকাশনী)
সুতরাং,একজন রোযাদারে পাশে মানুষ যখন তাদের ক্ষুদার্ত সত্তাকে ভালো ভালো লোভনীয় সুস্বাদু খাবারে নিবারণ করতে ব্যস্ত ঠিক সে সময় আরশের মালিকের নির্দেশে ফেরেশতারা রোযাদারের জন্য প্রার্থনা করতে ব্যস্ত হয়ে পরে। ধীরে ধীরে সময় ঘনিয়ে আসে, যখন রোযাদার ইফতারের প্রস্তুতি নিতে থাকে আর সে সময় যে বা যারা রোযাদারকে ইফতার করানোর ব্যবস্থা করে রোযাদার ব্যক্তির উচিত ইফতার শেষে সেই ব্যক্তির জন্য চমৎকার দোয়া করা যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম আমাদেরকে শিখিয়ে দিয়েছেন,
أَفْطَرَ عِنْدَكُمْ الصَّائِمُونَ وَأَكَلَ طَعَامَكُمْ الْأَبْرَارُ وَصَلَّتْ عَلَيْكُمْ الْمَلَائِكَةُ
তোমাদের নিকট রোযাদারগণ ইফতার করেছে, সৎ লোকেরা তোমাদের খাদ্য খেয়েছে এবং ফিরিশতাগণ তোমার জন্য রহমতের দু‘আ করেছেন।
(সুনানে আবু দাউদ-৩৮৫৪)
আপনি যদি একটু লক্ষ্য করেন তাহলে দেখতে পারবেন আপনার সারাটা দিন জুড়ে সম্মানিত ফেরেশতাগণ সময়ে সময়ে রাব্বুল আলামীনের কাছে আপনার জন্য প্রার্থনা করছেন। আপনার অজান্তেই ফেরেশতাদের প্রার্থনায় আপনার নাম সামিল হতে থাকে যতক্ষণ আপনি-
রাতের শেষাংশে সাহরীর প্রস্তুতি নিয়ে খাবার খেতে থাকেন!
দিনে রোযা পালন করা অবস্থায় আপনার পাশে থাকা কেউ খাবার খেতে থাকে!
সে ব্যক্তির জন্য দোয়া করেন যিনি আপনাকে ইফতার করান আর বিনিময়ে ফেরেশতারা আপনার জন্য দোয়া করেন।
ফেরেশতাদের বিচরণ
মূলঃ ওমর সুলাইমান