কখনো কি এরকম হয়েছে যে আপনি কাউকে সাহায্য করতে চাইছেন কিন্তু আপনার কাছে সাহায্য করার মতো অর্থ নেই-এই ধরুন আপনি যাত্রাপথে আছেন কিন্তু পকেটে টাকা নেই কিংবা এমন সময় আপনার কাছে আপনার ভাই সাহায্য চাইলো যখন মাসের শেষ, আপনার হাতে বেতন আসেনি কিংবা বাসা থেকে টাকা পাঠায়নি?
উত্তরটা অনেকেরই “হ্যা”, অনেকেই নেক নিয়ত পোষণ করেছেন,সাদাকা করতে গিয়েছেন কিন্তু পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে ব্যার্থ হয়েছেন।
যারা এরকম পরিস্থিতির শিকার,যাদের সীমিত আয় সাদাকার মতো কাজের নিয়ত ও আগ্রহকে আটকে দিচ্ছে, ধনীদের প্রচুর সাদাকা আদায় করতে দেখে সীমিত আয়ের যেই ভাইবোনেরা মন খারাপ করেন যে-“আমিও যদি পারতাম!”, তাদের জন্য আছে একটি সুখবর এবং একটি বিকল্প পন্থা।
প্রথমত সুখবরটি শুনে নেওয়া যাক।
আপনার আয় সীমিত, আপনার পকেট ফাঁকা কিংবা আপনি নিজেই অভাবী কিন্তু তারপরও আপনি নিয়ত করলেন আপনার থেকে অভাবগ্রস্ত কাউকে সাহায্য করবেন- এই যে আপনার নেক নিয়ত তা আপনার অন্তরের পরিচ্ছন্ন ইচ্ছার কথা আল্লাহর নিকট পৌঁছিয়ে দিলো এবং আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা হাদীসে কুদসীতে বলেন,
“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের চেহারা ও সম্পদের দিকে তাকান না, বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও কর্মের দিকে লক্ষ্য করেন।”
[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৭০৮]
অর্থাৎ,নিয়তের মাধ্যমে আপনি আপনার চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জন করে ফেলেছেন আর তা হলো আল্লাহর নজরে নিজের অবস্থান ঠিক করা।এটি সুসংবাদের একটি অংশ এবং অপর অংশ হলো আল্লাহর তরফ থেকে আসা প্রতিদান যার ব্যাপারে আল্লাহ বলেন,
“যে ব্যক্তি ভালোকাজের পরিকল্পনা করল, কিন্তু বাস্তবে সে কাজ করতে পারল না, সে ব্যক্তির জন্য সাওয়াব লেখা হবে।”
[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৫৪]
অর্থাৎ,সাওয়াবও পেয়ে গিয়েছেন আপনি। আপনার আমলনামার অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে সাদাকার সাওয়াব যার ব্যাপারে আপনি ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন কেবল।
এবার নজর দেওয়া যাক একটি বিকল্প পন্থার দিকে। আপনার বহু পূর্বেই আপনার আমার থেকে ঈমান ও আমলে বহুগুণে উত্তম সাহাবীগণ রাদিআল্লাহু আনহু নবীজী ﷺ এর নিকট এই ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, বলেছিলেন,
“ইয়া রাসূলাল্লাহ! ধনীরা তো সাওয়াব সব নিয়ে গেল! আমরা যেমন সালাত আদায় করি, তারাও করে। আমাদের মতো তারাও সাওম পালন করে। উপরন্তু তারা সম্পদও নাম করতে পারে।”
রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন,
“সদাকা করার মতো কিছুই কি আল্লাহ তোমাদের দেননি?
এক একবার সুবহানাল্লাহ বলা এক একটি সদাকা,
এক একবার আল্লাহু আকবার বলা এক একটি সদাকা,
এক একবার আল-হামদু লিল্লাহ বলা এক একটি সদাকা; এক একবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা এক একটি সদাকা,
সৎকাজের আদেশ একটি সদাকা
এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ একটি সদাকা।
স্ত্রীদের কাছে গমন করাও সদাকা!”
সাহাবায়ে কেরাম বললেন,
“ইয়া রাসূলাল্লাহ! কেউ তার প্রবৃত্তি চরিতার্থ করবে আর এতেও সে সাওয়াব পাবে?”
রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন,”বলো তো, যদি কেউ তার চাহিদা হারাম পন্থায় পূরণ করে, তবে কি তার গুনাহ হবে না?
সুতরাং হালাল পন্থায় জৈবিক চাহিদা পুরা করায় তার সাওয়াব হবে।”
[ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০০৬]
সুবহানাল্লাহ!
খেয়াল করুন, মুমিন হিসেবে আপনার হিসাবটাই অন্যরকম।সাদাকা কেবল আর্থিক সহায়তা প্রদানের মধ্যেই আল্লাহ পাক আমাদের জন্য সীমাবদ্ধ রাখেননি বরং সেটা তাসবিহ-তাহলিল-তাহমিদ থেকে শুরু করে নিজের স্ত্রীর সাথে রাত কাটানোর মধ্যেও রেখেছেন। মোটকথা হালাল পন্থায় থেকে যেকোনো ভালো কাজ করলে এবং ভালো কাজের উপদেশ দিলেও তা সাদাকা।
অতএব নিয়ত করুন, পারলে সাদাকা করুন আর না পারলে সবর এবং সাদকা সমতুল্য অন্যান্য ভালো কাজে নিমগ্ন থাকুন। মনে রাখবেন আমরা মুমিন এবং আমাদের প্রতিটি কাজে আল্লাহর বরকত আছে।
এবং নবীজী ﷺ ও বলেছেন,
‘‘মুমিনের ব্যাপারটাই আশ্চর্যজনক। তার প্রতিটি কাজে তার জন্য মঙ্গল রয়েছে। এটা মু’মিন ব্যতীত অন্য কারো জন্য নয়। সুতরাং তার সুখ এলে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। ফলে এটা তার জন্য মঙ্গলময় হয়। আর দুঃখ পৌঁছলে সে ধৈর্য ধারণ করে। ফলে এটাও তার জন্য মঙ্গলময় হয়।”
[রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ২৮]