জান্নাত থেকে প্রথম মানব নেমে এলেন পৃথিবীতে, সাথে প্রথম মানবীও। এ এক নতুন জীবন। কোথায় থাকবেন, কীভাবে থাকবেন কিছুই জানা নেই। এমনও নয় যে এখানে এসেই অনেক সঙ্গী সাথী পেয়ে যাবেন। সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে নতুন অভিজ্ঞতা। পৃথিবীর বুকে পা পড়লো দুই শ্রেষ্ঠ মাখলুকের। না, একসাথে এক জায়গায় তারা নেমে আসেননি। দুই প্রান্তে দুজন। কেউ জানেননা তার অপর সঙ্গী কোথায় আছেন, কীভাবে আছেন? কেমন হবে তাদের এই যাত্রা?
একটা বর্ণনায় পাওয়া যায় আদম আ. নেমেছিলেন বর্তমান শ্রীলংকায় এবং হাওয়া আ. নেমেছিলেন বর্তমান জেদ্দায়। যাহোক, মূলকথা দুজন নেমেছিলেন দুই ভিন্ন জায়গায়। এবার একে অপরকে খুঁজার পালা। এই বিশাল পৃথিবীতে কোথায় খুঁজবেন একে অপরকে? বর্তমানের মতো তখন এমন নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাও ছিলোন আর নাইবা ছিলো কোনো যানবাহন। একা দুই ভিন্ন জায়গায় দুইজন মানুষ একে অপরকে খুঁজতে লাগলেন। নতুন জীবনের শুরু হলো এক ভিন্ন এডভেঞ্চারের মাধ্যমে। একটাই শঙ্কা জাগে মনে, অবশেষে তাদের দেখে হবেতো?
হ্যা, তাদের দেখা হলো। বহুদিন পর, বহু প্রতিক্ষার পর, বহু শঙ্কা কাটিয়ে অবশেষে মানবজাতির প্রথম জুটির আবার মিলন ঘটলো। এ এক আবেগময় মুহূর্ত। এমন কোনো সাহিত্য তৈরি হয়নি যা এই মুহূর্তকে বর্ণনা করতে পারে। প্রথম মানব অবশেষে দেখা পেলেন প্রথম মানবীর। আর তাদের এই স্মরণীয় মুহূর্তকে নিজের বুকে আজও ধারণ করে রেখেছে আরাফাতের প্রতিটি বালুকণা। দুজনেই রবের শুকরিয়া আদায় করলেন। এই মিলন কখনোই সম্ভব হতোনা যদি তাদের রবের হুকুম না হতো।
আল্লাহ তার কথা রাখলেন। ওহীর মাধ্যমে একে একে আদম আ. কে নির্দেশনা দিতে লাগলেন। ওহীর সূচনা এখান থেকেই। কীভাবে কী করতে তার সবই আল্লাহ তাকে জানিয়ে দিলেন। দুজনে মন দিলেন সংসার গড়ায়। একে একে তাদের কুল জুড়ে এলো অনেক সন্তান সন্তুতি। পৃথিবীর বুকে বাড়তে লাগলো শ্রেষ্ঠ মাখলুকদের সংখ্যা। এদেরই বংশধররা একদিন রাজত্ব করবে পুরো পৃথিবী জুড়ে। খেত কৃষির মাধ্যমে নিজেদের আহারের ব্যবস্থা করলেন তারা। সবই আল্লাহর শেখানো পদ্ধতিতে। পাশাপাশি আরো একটা কাজ করলেন আদম আ.। তিনি তৈরি করলেন কাবা ঘর। এটাও আল্লাহর নির্দেশেই।
আদম আ. এর সন্তানদের মধ্যে দুজনের নাম ছিলো হাবিল ও কাবীল। এর মধ্যে হাবিল খুব উদারমনের হলেও কাবীল ছিলো একটু হিংসুটে স্বভাবের। হাবিলের অনেক কাজেই তার হিংসা হতো। একবার কোনো এক কারণে তারা আল্লাহর জন্য কুরবানি করলো। তখনকার নিয়ম ছিলো কুরবানির জিনিষ পাহাড়ের উপর রেখে আসলে আসমান থেকে একটা আগুনের ফুলকি এসে যদি তা নিয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে কুরবানি কবুল হয়েছে। দুজনেই একই কাজ করলো। হাবিল কুরবানি করলেন একটি দুম্বা আর কাবীল কিপটামি করে সামান্য খাদ্য। এবার দেখার পালা কার কুরবানি কবুল হয়?
অবশেষে হাবিলের কুরবানি কবুল হলো। একটা আগুনের ফুলকি এসে তার দুম্বাটাকে নিয়ে গেলো। আর এটা সহ্য হলোনা হিংসুটে কাবীলের। সে রাগের বশে হাবিলকে হত্যা করতে উদ্যত হলো। রাগ আর হিংসা দুইটাই মানুষকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। কাবিল হত্যা করলো হাবিলকে। পৃথিবীর বুকে প্রথম মানব হত্যার সূত্রপাত এখান থেকেই। আর যার সূত্রপাত হয়েছিলো স্রেফ হিংসা থেকে। ওয়া মিন শাররি হাসিদিন ইযা হাসাদ।
যখন আদম আ. এর পৃষ্ঠদেশ থেকে অনাগত সব আদম সন্তানদের সৃষ্টি করা হলো তখন দাউদ আ. এর দিকে নির্দেশ করে আদম আ. বললেন, ইনি কে? আল্লাহ বললেন, ইনি দাউদ। দাউদ আ. এর হায়াত খুব কম দেখে আদম আ. তার একহাজার বছরের হায়াত থেকে চল্লিশ বছর তাকে দিয়ে দিলেন। মালাকুল মউত এসে যখন তাকে তার মৃত্যুর সংবাদ দিলো তখন তিনি বললেন, আরে তোমাদের ভুল হচ্ছে কোথাও।
আমার আরো ৪০ বছরের হায়াত বাকি আছেতো। তখন তাকে আগের ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়া হলো। অর্থাৎ প্রথম মানব ও প্রথম নবী আদম আলাইহিসালাম ৯৬০ বছর এই পৃথিবীতে জীবিত ছিলেন।