প্রথম মানব ও নবী আদম
তিনি হলেন রবের প্রশংসাকারী প্রথম মানব। আর যার প্রশংসার জবাবে তার রবের বলা প্রথম কথাটি ছিলো ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ ইয়া আদাম’ অর্থাৎ আল্লাহ আপনার উপর রহম করুন হে আদম। এই যে আমি, আপনি আমরা সবাই হলাম তারই বংশধর যার রুহ গলা বেধ করার আগেই তার রব তার উপর রহমত বর্ষণ করেছিলেন।
তখনো আদম আ. কে সৃষ্টি করা হয়নি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ফেরেশতাদের ডেকে বললেন, ‘আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি প্রেরণ করতে চাই।’ ফেরেশতারা সবাই অবাক হয়ে বললেন, ‘আপনি কি এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যারা ফাসাদ করবে, রক্তপাত করবে? অথচ আমরাইতো আপনার গুণগান গাচ্ছি প্রতিনিয়ত।’ এবার আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বললেন, ‘আমি যা জানি তোমরা তা জাননা।’
আল্লাহ নিজ হাতে মাটি থেকে আদম আ. কে তৈরি করে রুহ প্রবিষ্ট করার আগে একজায়গায় কিছুক্ষণের জন্য রাখলেন। ইবলিশ হঠাৎ ভিন্ন কিছু দেখতে পেয়ে তাতে ঠোকা দিলো। এরপর সে আদম আ. এর চারিপাশে চক্কর দিতে দিতে বললো, ‘হুহ আমিতো একে কন্ট্রোল করতে পারবো।’ সে কথাটা বেশ দম্ব সহকারে বললো। যেন তার কাছে এই নতুন সৃষ্টিটা একদম তুচ্ছ।
এবার রুহ ফুকার পালা। এই কাজটা আল্লাহ নিজেই করলেন। আল্লাহ নিজেই তাকে তৈরি করলেন আর নিজেই তাতে রুহ ফুকে দিলেন। আহ! কত সম্মান তার। রুহ দেহের মধ্যে প্রবেশ করতে লাগলো। প্রথমে মাথা তারপর চোখ। আদম আ. চোখ খুলে তাকালেন। প্রথম চাহনি। এবার রুহ যখন নাকের কাছে পৌছালো তখন আদম আ. হাঁচি দিলেন। আর সেই সাথে বলে উঠলেন ‘আলহামদুলিল্লাহ’। প্রথম কথা প্রথম মানবের মুখ থেকে আর সেই কথাটা হলো রবের প্রশংসা। এবার আল্লাহ তার জবাবে বললেন, ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ ইয়া আদাম’।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এবার আদম আ. কে ফেরেশতাদের সামনে নিয়ে গেলেন যেখানে ইবলিশও উপস্থিত ছিলো। তিনি সবাইকে বললেন তারা যেন আদম আ. সিজদাহ দেয়। সবাই বিনা বাক্যে হুকুম তামিল করলো একমাত্র অভিশপ্ত ইবলিশ ছাড়া। সে অহংকার করলো আগুনের তৈরি বলে। প্রতিফলও পেয়ে গেলো সাথে সাথে। আল্লাহ তাকে জান্নাত থেকে বের করে দিয়ে বললেন, ‘যা তুই অভিশপ্ত।’ কিন্তু দাম্বিক ইবলিশ ক্ষমা না চেয়ে বললো, ‘আমাকে সুযোগ দিন।’ আল্লাহ তাকে সুযোগ দিলেন কিয়ামত পর্যন্ত। তবে তার কাছ থেকে তারা মুক্ত যারা ইমানদার।
এখন আল্লাহ আদম আ. কে জান্নাতে থাকতে দিলেন। একা একা জান্নাতে তিনি কেমন যেন শূন্যতা অনুভব করলেন। আল্লাহ বুঝতে পারলেন তার মনের কথা। তিনি এবার হাওয়াকে আ. সৃষ্টি করলেন তার পাজর থেকে। গিফট হিসেবে হাওয়াকে আ. পেলেন আদম আ.। এবার তার মনের দুঃখ গুচলো। স্ত্রী হলো একজন পুরুষের জন্য আল্লাহর দেয়া গিফট। একান্ত হতভাগা ছাড়া কেউ এই অমূল্য গিফটকে মূল্যায়ন করতে ভুল করার কথা না।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাদের দুজনকে জান্নাতে থাকতে দিয়ে বললেন, এখানে থাকো নিশ্চিন্তে আর ভুলেও ঐ গাছটার নিকটেও যেওনা। তারা থাকতে লাগলেন সুখে শান্তিতে। কিন্তু সহ্য হলোনা চিরশত্রু সেই ইবলিশের। নানা ফন্দিফিকিরের পর অবশেষে সে তাদের অন্তরে প্ররোচনা দিতে সক্ষম হলো। তারা ভুল করে চলে গেলেন সেই গাছের কাছে। এবার বুঝতে পারলেন খুব বড় ভুল হয়েগেছে। কিন্তু ততক্ষণে যে অনেক দেরী হয়ে গিয়েছিলো।
ভুলের ফলে তাদের লজ্জাস্থান উন্মোক্ত হয়ে পড়লো। তারা ব্যস্ত হয়ে পড়লেন গাছের পাতা দিয়ে নিজেদের ঢেকে রাখতে। তারা অনুতপ্ত হলেন আর মুখ দিয়ে কাতর স্বরে উচ্চারণ করলেন প্রথম ক্ষমা প্রার্থনা, ‘রাব্বানা জলামনা আনফুসানা….’। আর আমার রবও ঘোষণা করলেন, যাও তোমাদের ক্ষমা করে দিলাম। আর সাথে এও বললেন, ‘তোমরা পৃথিবীতে নেমে যাও। সেখানে আমার নির্দেশমত চলো। তাহলে আমি আবার তোমাদের এখানে ফিরিয়ে আনবো’।
তারা নেমে এলেন পৃথিবীতে আর শুরু হলো এক নতুন জীবন…..
প্রথম মানব ও নবী আদম (আলাইহিসালাম)
প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব