Writing

প্রত্যয়ন পত্র – আরিফুল ইসলাম

ছোটো দরবার থেকে বড়ো দরবারে হাজির হতে হলে স্থানীয় অথোরিটির কাছ থেকে ‘প্রত্যয়ন পত্র’ লাগে। আপনি স্কুল ছেড়ে কলেজে যখন যাবেন, স্কুল প্রধান আপনার চারিত্রিক সার্টিফিকেট দিবেন। আপনি পাসপোর্ট বানাতে গেলে ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশন থেকে চারিত্রিক সার্টিফিকেট নিতে হবে।
বিভিন্ন প্রয়োজনে যখনই আপনি তুলনামূলক বড়ো জায়গায় যাবেন, ছোটো জায়গাগুলো থেকে আপনাকে ‘Letter of Recognition’ নিতে হবে। সেটার উপর ভিত্তি করে বড়ো প্রতিষ্ঠান আপনাকে প্রাথমিকভাবে বিচার করবে।

একটা ব্যাপার ভেবে আমি যেমন ভীতসন্ত্রস্ত হই, তেমনি আনন্দিতও হই। কিয়ামতের দিন বান্দা সরাসরি আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করবে। ওয়ান টু ওয়ান। আল্লাহ তাঁর বান্দার অতীতের অবস্থা সম্পর্কে অবগত। তাকে সেটার উপর ভিত্তি করে বিচার করবেন। বান্দার দোষত্রুটি আল্লাহ মাফ করে দিতে পারেন, অথবা তাকে পাকড়াও করতে পারেন।

আমি এই ভেবে আনন্দিত হই যে, আল্লাহর মুখোমুখি হবার সময় স্থানীয় অথোরিটির কোনো ‘প্রত্যয়ন পত্র’ লাগে না। স্থানীয় অথোরিটি হতে পারে- স্থানীয় শাসক বা স্থানীয় স্কলার।
যদি এমন হতো, স্কুল থেকে কলেজে যাবার সময় বা পাসপোর্ট বানানোর সময় যেমন স্থানীয় অথোরিটির সার্টিফিকেট লাগে, এমনটা যদি কিয়ামতের ময়দানে লাগতো, মুসলমানদের কী অবস্থা হতো?

প্রজার মৃত্যুর পর শাসক দেখবে সে তার শুভাকাঙ্ক্ষী ছিলো কি-না। যদি তার শুভাকাঙ্ক্ষী না হয়, তাহলে তাকে প্রত্যয়ন পত্র দিবে না। অন্যদিকে, স্থানীয় স্কলার দেখবেন, মৃত-ব্যক্তি তার আকীদা-মাজহাবের ছিলো কি-না। যদি না থাকে, তাহলে প্রত্যয়ন পত্র দিবেন? জীবিতাবস্থায় যারা মতের বিরুদ্ধের কাউকে জাহান্নামে প্রেরণ করতে চায়, তাদের হাতে যদি আল্লাহ সামান্য অথোরিটি দিতেন তাহলে তারা কী করতো!

ক্রিস্টিয়ানিটির ইতিহাস পড়লে দেখা যায় পাদ্রীরা এমন রিলিজিয়াস অথোরিটির দাবী করতো। তাদের দাবী অনুযায়ী তারা পাপমোচনের ক্ষমতা রাখতো। অর্থের বিনিময়ে তারা ‘Indulgence Certificate’ বিক্রি করতো। এই সার্টিফিকেট কিনলে নাকি পূর্বের পাপ মাফ হয়ে যায়!
মার্টিন লুথার ইন্ডালজেন্সের বিপক্ষে তার বিখ্যাত ‘নাইনটি ফাইভ থিসিস’ হাজির করেন। তিনি দেখান, চার্চের এমন ধর্ম ব্যবসা করার অধিকার নেই। এই অথোরিটি শুধু গডের।

মাঝেমধ্যে স্কলার-স্কলারদের মধ্যে কথার লড়াই, বিদ্বেষ দেখলে মনে হয় ইসলাম অথোরিটির ব্যাপারে কী সুন্দর বিধান দিয়েছে। যদি এমন বিধানের ছিটেফোঁটা স্থানীয় স্কলারকে দেয়া হতো, তাহলে হয়তো বড়ো বড়ো স্কলাররাই প্রত্যয়ন পত্র পেতেন না; চুনোপুঁটি তো দূরের কথা।

লিখেছেন

Picture of আরিফুল ইসলাম (আরিফ)

আরিফুল ইসলাম (আরিফ)

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture