আন্টি, আজ আপনাকে খুব কষ্ট থেকে মনের কিছু অব্যক্ত কথা বলছি। প্রতিবারই না হয় আপনি সবাইকে বলেন, কিন্তু আজ আপনাকে কিছু বলতে ইচ্ছে হচ্ছে।
আন্টি! আমি যতবারই কোন জায়গায় গিয়েছি, আপনার সম্পর্কে শুনেছি, যতবারই গিয়েছি ততোবারই আপনার সম্পর্কে অভিযোগ শুনেছি। যতবারই আমি কারো চোখে কিছু ভয়ের কারণ দেখেছি তার মধ্যে একটি ভয়ের কারণ ও ছিলেন আপনি। কিন্তু আমি ভেবেছি আন্টি আপনিতো বাঘ নন ,নন আপনি ভাল্লুক। তাহলে সবার কেন আপনার প্রতি এত অভিযোগ?
তার সত্যতা যাচাই করতে যখনই আমি এসেছি আপনার ধার প্রান্তে , তখনই অনেক কিছু আবিষ্কার করেছি ও উপলব্ধি করেছি। এমনকি আপনার সেই বিষ মাখানো তীরে অনেকবার নিজেও ক্ষতবিক্ষত হয়েছি।
১
মনে পড়ে আন্টি! সেই তামান্না আপুর কথা? আরে ওই যে যার বিয়ে না হওয়া নিয়ে, আপনি নানা কথা বলে বেড়াতেন। বিভিন্ন জনকে বিভিন্ন কিছু বুঝিয়ে বেড়াতেন। কি যেন বলছিলেন সেদিন তৌহিদ এর মা কে,”জানেন ভাবি ওই মেয়ের তিন-চারটা ছেলের সাথে সম্পর্ক আছে, তারা সকলে তাকে আশ্বাস দিয়ে একটাও বিয়ে করতে এলো না।
বেচারীর কপাল টাই খারাপ। “দুঃখ হলেও সত্যি এই যে আপনার সকল কথাই ছিল সেখানে বানোয়াট। ফলে যারাই সম্বন্ধ নিয়ে আসতো আপনার এই সিঁড়ি পত্র নিয়ে বিদেই হতো। জানেন উক্ত কারণ হিসেবে যখন ,আপনার এই কথাটি কোনো কারণে তামান্না আপুর কানে পৌঁছালো, তিনি অনেক কেঁদেছিলেন। মনে হচ্ছিল তাঁর প্রতি নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে যেন, আপনার কারণে বিষ বের হচ্ছে।
২
আন্টি মনে পড়ে কি আপনার ,সেই দম্পত্তির কথা। আরে ওই যে গত চার মাস আগে যাদের বিয়ে হয়েছিল। সোবান আঙ্কেলের ছেলে জারিফ এবং তার পুত্রবধূ সামিয়া ভাবির কথা বলছি। জারিফ আর সামিয়া বিয়ে হলেই, আপনার শুরু হয় নানা মাথা ব্যাথা। নতুন বউ দেখতে গিয়ে সেদিন কতইনা নাজেহাল করেছিলেন সামিয়া ভাবিকে। তার বড় জাঁ এর সামনে বলছিলেন-“কি মেয়ে আমাদের ছেলে সুন্দর বলেই কি পটিয়া নিয়েছিলেন?
“ঘরভর্তি মানুষের সামনে যেন সামিয়া ভাবীর মুখ অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল। এবং তার জাঁ মিটমিট করে হাসছিল। মাস দুই মাস যেতে না যেতেই, রাহেলা আন্টিকে গিয়ে বললেন-“কিগো আপা ছেলেকে বিয়ে করাইছেন আজ প্রায় দুই মাস হতে চলল, এখনো কোনো সুখবর দিলেন না যে!”আপনাদের বড় বউ বিয়ের দেড় মাসের মধ্যেই তো সুখবরটি দিল। তা আপনাদের নতুন বউয়ের কোনো সমস্যা আছে নাকি?
লজ্জায় রাহেলা আন্টির মুখ লাল হয়ে যাচ্ছিল। তিনি কোনো প্রতি উত্তর দিতে না পেরে, আপনাকে বলেছিল, কি যে বলেন আপা মাত্রই তো বিয়ে হল। আল্লাহ যখন ইচ্ছে হবে, আল্লাহ তখনই সুসংবাদ দান করবেন। ইনশাআল্লাহ। পর্দার আড়াল থেকে সামিয়া ভাবি আপনার কথাগুলো শুনে, গাল গড়িয়ে চক্ষু জল পরতে থাকলো। দেখে মনে হচ্ছিল যেন , শীতল সেই চক্ষু থেকে আক্ষেপের বিষ নিঃসৃত হচ্ছে আপনার জন্য।
৩
আন্টি আপনার আরো কি মনে পড়ে রফিক আঙ্কেলের কথা। ওই যে ফারহানা তার মেয়ে ছিল। কত টানা পোড়েন এর মধ্যেই না যাচ্ছিল তাদের সংসার। এরইমধ্যে ফারহানার জন্য সম্বন্ধ এলে, আপনি কত কিছুই না বলেছিলেন-মেয়ের বয়স অনেক হয়ে গেছে,যাক বাবা পরিশেষে সম্বন্ধ এলো তাহলে।
এরপর যখন ফারহানার মা এর সাথে দেখা হয়, সকলের সামনে জিজ্ঞেস করেছিলেন-
“তা ভাবী মেয়েরতো অনেক দিন পরে একটি সম্বন্ধ এলো। শুনেছিলাম ছেলে নাকি সরকারি চাকরি করে! কিন্তু আপনাদের অবস্থা যা…. মেয়েকে বিয়ের দিন কিছু দিতে পারছেন তো, ফার্নিচার , দাওয়াত? নাকি আবার ছেলে সকল কিছু দিয়ে বিয়ে করে নিয়ে যাচ্ছে! যদিও এমন ছেলে পাওয়া মুশকিল, তা কি আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে চাইবেন নাকি?
ছলছল চোখে ফারহানার মা আপনার দিকে চেয়ে ছিলো কিন্তু আপনাকে কিছুই বলেনি, মুচকি হেসে সেখান থেকে বিদায় নিয়েছিল। কিন্তু ফারহানার মা রফিক আঙ্কেলকে খোচাতে থাকে বলতে থাকে আমাদের মেয়ের এত দিন পর বিয়ে! অথচ আমরা কিছুই দিতে পারছিনা। পাশের বাসার ভাবিরা বলে কইয়ে বেড়াচ্ছে। কষ্টের যেন রফিক আঙ্কেলের হৃদয়ে আক্ষেপের বীজ বুনতে থাকে। দেখে মনে হচ্ছিল প্রতিটি আক্ষেপের ক্ষতের কারণ ছিলেন আপনি।
৪
আন্টি আপনার আরো কি মনে পড়ে, সেলিনা আন্টির কথা। যার চারটি মেয়ে ছিল। তিনি যখন আবার পঞ্চম বারের মতো গর্ভবতী হয়েছিলেন মনে পড়ে কি আপনি কি কি বলেছিলেন?
কি যেন বলেছিলেন, ও হ্যাঁ বলেছিলেন- “উনি তো শুধু মেয়ে জন্ম দিয়ে বেড়াবেন, উনার হাল অবস্থা দেখে মনে হয় এবারের টাও মেয়ে হবে। একটা ছেলের জন্য আহারে বেচারী”
জানেন আপনার এই কথাই সেলিনা আন্টির কত কষ্ট হয়েছিল? উনার প্রতিটি ক্রন্দন যেন হাহাকার করে দিচ্ছিল নিজেকে, দেখে মনে হচ্ছিল তার একটিই কারণ , আপনি!
৫
আন্টি আপনার আরো কি মনে পড়ে, ফাতেমা আপুর কথা। যিনি উগ্র ও দুনিয়াবী থাকা সত্ত্বেও যখন আল্লাহর অশেষ রহমতে দ্বীনের ছায়ায় ধাবিত হন এবং দ্বীন মোতাবেক নিজেকে একটু একটু গুছিয়ে নিতে শুরু করে ,পর্দায় ফিরে আসে ,মনে পড়ে কি আপনি তখন কি কি বলেছিলেন?
বলেছিলেন-“আসলে চুটিয়ে প্রেম করেছিল তো, জনপ্রতি প্রতি মনে হয় ছ্যাঁকা খেয়েছে। যার কারণে বোরকার মধ্যে ঢুকেছে। এমন আরো কত দেখেছি ! ঠিকই দুদিন পরে আগের ভেসে চলে আসব। ন্যাকামি যত সব! এই মেয়েগুলো পারে..ও বটে!”
যদিও আপনার এই খোঁচা মূলক কথা গুলো ফাতেমা আপু কানে নেননি! কিন্তু তার রব যেসব লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন!
এমন আরো অনেক অনেক উদাহরণ আছে আন্টি আপনাকে নিয়ে। কেন আন্টি আপনাকে সব জায়গায় মাথা খাটাতে হবে! কেন সবার সব সম্পর্কে আপনার জানতে হবে এবং বাজে মন্তব্য করতে হবে? জানেন আন্টি, আপনাকে কৌতুকের ছলে নিয়ে আসা হয়েছে?
জানেন আপনাকে সিসি ক্যামেরার সাথে তুলনা করা হয়েছে? কেন আন্টি! আপনার ব্যক্তিত্ব বলতে কিছুই নেই?
ইসলাম কি আপনাকে যথার্থ সম্মান দেয়নি?
জানেন মহান রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন-
“ধ্বংস তার যে,মানুষের সামনে ও পিছনে বদনাম করে।”
[আল হুমাযাহঃ ১]
হায় আন্টি আপনার কি এখনো ভয় লাগছে না! এখনো কি আপনি বলে কয়ে বেড়াবেন! কেন আন্টি আপনাকে সকলের সম্বন্ধে মিথ্যা খবর ছড়াতে হবে কুৎসা রটাতে হবে এবং আপনার ধারালো বিষাক্ত তীর (কথার মাধ্যমে) ধারা আঘাত করতে হবে?
আপনি কি আরো জানেন মহান রাব্বুল আলামিন কি বলেছেন?
মহান আল্লাহ বলেন,
‘নিশ্চয়ই যারা সচ্চরিত্রবান সরলমনা মুমিন নারীদের ব্যভিচারের অপবাদ দেয় তারা দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য (আখিরাতে) আছে মহা শাস্তি।’
(সুরা: নুর : ২৩)
কি আন্টি ভয় লাগছে?
তাহলে আরো কিছু আয়াত ও হাদীস শুনুন-
মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন,
‘হে মুমিনগণ! তোমরা বেশির ভাগ অনুমান থেকে দূরে থেকো…।’
(সুরা : হুজুরাত : ১২)
রাসুল (সা.) বলেন, ‘একজন মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে হেয় মনে করে।’
(মুসলিম, হাদিস : ৬৪৩৫)
আল্লাহ বলেন, যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্যে পাপের বোঝা বহন করে
(সুরা আহযাব, ৫৮)।
জানেন আন্টি, যে ব্যক্তি অহেতুক অযথা মানুষকে কষ্ট দেয়, তার চেয়ে নিকৃষ্ট আর কেউ নেই।
রাসুল (সা.) বলেছেন, সেই ব্যক্তিই হচ্ছে প্রকৃত মুসলমান, যার হাত ও মুখ থেকে মুসলমান নিরাপদ থাকে
(বোখারি-১০, আহমদ-৬৫১৫,নাসায়ি-৪৯১০)।
অনুতাপ হচ্ছে আন্টি! কান্না আসছে?
নিজের সব সীমালংঘন এর জন্য নিজের প্রতি রাগ হচ্ছে?
তবে শুনুন, আল্লাহ বলেন: বলুন: –
” হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চই আল্লাহ সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করেন; তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু “
(সূরা যুমার : ৫৩)
সুতরাং ফিরে আসুন। দুনিয়ার বাহ্যিক সব অপ কথা পরিহার করুন। এবং সম্ভব হলে ক্ষমা চেয়ে নিন তাদের থেকে যাদের আপনি কষ্ট দিয়েছেন ও দুর্নাম ছড়িয়েছেন।
[বিঃদ্রঃ উক্ত লিখাটি কাউকে ছোট কিংবা হেয় করার জন্য নয়। দয়া করে ব্যাপারটি কেউ অন্যভাবে নিবেন না]