পানাহারের শুরুতে, মাঝে ও শেষে পঠিতব্য ১০টি দুআ
দয়াময় আল্লাহ আমাদের জন্য নানা রঙবেরঙের এবং হরেক সাধের খাদ্য ও পানীয় দান করেছেন! প্রতিনিয়ত আমরা সেগুলো গ্রহণ করে জীবন ধারণ করি, সুস্থ থাকি এবং আমাদের রসনা তৃপ্ত করি। এখানেই শেষ নয়, আমরা যে খাবার ও পানীয় গ্রহণ করি তা আমাদের শরীর অভ্যন্তরে প্রবেশ করার পর এর নির্যাস ও প্রয়োজনীয় উপাদানটুকু থেকে যায় আর বাকি উচ্ছিট অংশটুকু পেশাব ও পায়খানার রাস্তা দিয়ে বের হয়ে যায়।
এই মেশিনারিজ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন মহান আল্লাহ। খাবার ভিতরে প্রবেশ করার পর যদি তা বের না হত তাহলে আমরা আমাদের সারা জীবনের সঞ্চিত সব কিছু দিয়ে হলেও তা বের করার জন্য পাগল হয়ে যেতাম। সুবহানাল্লাহ! তাহলে কি এ জন্য সেই মহান স্রষ্টা ও অতি দয়ালু আল্লাহর প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞ হওয়া উচিৎ নয়?
এই কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সর্বনিম্ন উপায় হচ্ছে, খাওয়ার শুরুতে আল্লাহর নাম নেয়া এবং খাবার শেষ তার প্রশংসা করা। কৃতজ্ঞতা আদায় করা সভ্যতা ও শিষ্টাচারের অন্তর্ভুক্ত। তাই আসুন, আমরা এ বিষয়ে হাদিসের আলোক সংক্ষিপ্ত দিকনির্দেশনা জেনে নি।
পানাহারের শুরুতে পঠিতব্য দুআ:
পানাহারের শুরুতে আল্লাহর নাম নেয়া তথা ‘বিসমিল্লাহ’ বলা সুন্নত। যেমন: হাদিসে এসেছে, মা আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ طَعَاماً فَلْيَقُلْ بِسْمِ اللَّهِ، فَإِنْ نَسِيَ فِي أَوَّلِهِ فَلْيَقُلْ بسمِ اللَّهِ فِي أَوَّلِهِ وَآخِرِهِ
“তোমাদের কেউ যখন খাওয়া শুরু করে সে যেন বলে, বিসমিল্লাহ (অর্থ: নামে শুরু করছি) আর যদি, শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে ভুলে যায় তাহলে সে যেন বলে: “বিসমিল্লাহি ফি আওয়ালিহি ওয়া আখিরিহি” (অর্থ: শুরুতে ও শেষে আল্লাহর নামে)
[সুনানে আবু দাউদ-হিসনুল মুসলিম]
অন্য বর্ণনায় এসেছে:
بسم الله أَوَّلَه وآخرَه
বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু (অর্থ: শুরুতে ও শেষে আল্লাহর নামে)।
এ ক্ষেত্রে ৩টি সতর্কতা:
ক. খাবার শুরুতে কেবল ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ করা সুন্নত;পূরা ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ নয়। কারণ এ ব্যাপারে যতগুলো হাদিস বর্ণিত হয়েছে সবগুলোতে কেবল এতটুকুই এসেছে। তাই হাদিসের বাইরে এর অতিরিক্ত পাঠ না করাই ভালো।
খ. আমাদের দেশে নিম্নোক্ত দুআটি খাওয়ার শুরুতে আওয়াজের সাথে পড়ার কথা বলা হয় বা কোন কোন দুআ শিক্ষার বইয়েও লেখা আছে:
بسم آلله وعلى بركة آلله
“বিসমিল্লাহি ওয়া আলা বারাকাতিল্লাহ।”
(আল্লাহর নামে এবং আল্লাহর বরকতের উপর খাওয়া শুরু করলাম)। এই দুআর মধ্যে কেবল ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠের কথা বিভিন্ন সহিহ হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে। কিন্তু ২য় অংশ (আলা বারাকাতিল্লাহ) কোন হাদিসে আসে নি। সুতরাং খাওয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ এর সাথে অতিরিক্ত এ শব্দটুকু যুক্ত করা বিদআত।
গ. কোন কোন দুআ শিক্ষার বইয়ে খাবার সামনে এলে নিম্নোক্ত দুআটি পড়ার কথা বলা হয়:
اللهم بارك لنا فيما رزقتنا وقنا عذاب النار
“আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফী-মা রাযাক্বতানা ওয়া ক্বিনা আযাবান্নার” (হে আল্লাহ, তুমি আমাদেরকে যে রিজিক দান করেছো তাতে বরকত দাও এবং আমাদেরকে রক্ষা করো জাহান্নামের আগুন থেকে) কিন্তু মুহাদ্দিসদের দৃষ্টিতে এ হাদিসটি সহিহ নয়। তারা বলেছেন, এর বর্ণনা সূত্রে মুহাম্মদ বিন আবিয যুআইযাআহ (محمد بن أبي الزعيزعة) নামক যে বর্ণনাকারী আছে সে অত্যধিক দুর্বল (ًضعيف جدا)। সুতরাং এ হাদিসটি আমল যোগ্য নয়।
পানাহারের মাঝে দুআ:
পানাহারের প্রথমে ও শেষে দুআ পাঠের ব্যাপারে একাধিক হাদিস বর্ণিত হলেও মাঝখানে বিশেষ কোন দুআ পড়ার কথা হাদিসে আসে নি। তাই খাওয়ার মাঝখানে কোন ধরণের দুআ পড়ার সুন্নত নয়।
পানাহার শেষে পঠিতব্য দশটি দুআ:
পানাহার শেষে আল্লাহর নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ স্বরূপ তাঁর প্রশংসা করা সুন্নত এবং তা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি উপায়। যেমন হাদিসে এসেছে, আনাস রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«إنَّ اللهَ ليرْضَى عَنِ العبْدِ أنْ يأكلَ الأكلَةَ فيحمَدَه عليها، أو يَشْربَ الشَّرْبَةَ فيحمَدَه عليها»
“নিশ্চয় আল্লাহ ঐ ব্যক্তির প্রতি সন্তুষ্ট হন যে ব্যক্তি খাবারের পর আল্লাহর প্রশংসা করে (আল হামদুলিল্লাহ পাঠ করে)। অনুরূপ পান করার পর আল্লাহর প্রশংসা করে (আল হামদুলিল্লাহ পাঠ করে)।
[সহিহ মুসলিম]
মুহাদ্দিসগণ এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন,
الأَكْلَةَ، وهِيَ المرَّةُ الواحدَةُ مِنَ الأَكْلِ كالغَداءِ والعَشاءِ،
হাদিসের শব্দ الأَكْلَةَ অর্থ: একবার খাওয়া। যেমন: দুপুর বা রাতের খাবার।
অর্থাৎ সকাল, দুপুর বা রাতের একবার খাওয়া শেষ করার পর আল হামদুলিল্লাহ পাঠ করাই যথেষ্ট। প্রতি লোকমা খাওয়ার পর অথবা প্রতিবার পানি পান করার পর আল হামদুলিল্লাহ বলতে হবে (যেমন: কিছু মানুষ করে থাকে) হাদিসের তা উদ্দেশ্য নয়।
যাহোক, নিম্নে পানাহার শেষ করার পর পঠিতব্য দশটি দুআ (আরবি টেক্সট, বাংলা উচ্চারণ ও অনুবাদ সহ) উপস্থাপন করা হল:
১) খাওয়ার শেষে আল্লাহর প্রশংসা করার সুন্নত। এর সর্বনিম্ন স্তর হল, আলহামদুলিল্লাহ (সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য) বলা। পূর্বোক্ত হাদিসটির আলোকে মুহাদ্দিসগণ এ কথা বলেছেন।
২) মুআয ইবনে আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
« مَنْ أكَلَ طَعَامَاً، فَقَالَ: الحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أطْعَمَنِي هَذَا، وَرَزَقنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي وَلاَ قُوَّةٍ، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: «حديث حسن »
“যে ব্যক্তি আহার শেষে এই দোয়া পড়বে:
الحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أطْعَمَنِي هَذَا، وَرَزَقنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي وَلاَ قُوَّةٍ
উচ্চারণ: আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আত্ব্আমানী হা-যা অরাযাক্বানীহি মিন গাইরি হাওলিম মিন্নী অলা ক্বুউওয়াহ।
অর্থ: সেই আল্লাহর যাবতীয় প্রশংসা যিনি আমাকে এ খাওয়ালেন এবং জীবিকা দান করলেন, আমার কোন চেষ্টা ও সামর্থ্য ছাড়াই) সে ব্যক্তির পূর্বের সমস্ত (ছোট) পাপ মোচন করে দেওয়া হবে।’’ [আবু দাউদ ৪২০৩, দারেমি ২৬৯০, শাইখ আলবানি হাদিসটিকে হাসান বলেছে]
৩) আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খাওয়া শেষে যখন তার সামনে থেকে খাবারের খাঞ্চা তুলে নেওয়া হত তখন তিনি বলতেন:
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِىْ كَفَانَا وَأَرْوَانَا، غَيْرَ مَكْفِىٍّ، وَلاَ مَكْفُوْرٍ
উচ্চারণ: আল হামদুলিল্লা হিল্লাযী কাফানা ওয়া আরওয়ানা, গাইরা মাকফিয়্যিন ও লা মাকফূর।”
“সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদেরকে যথেষ্ট খাইয়েছেন, আমাদেরকে পরিতৃপ্ত করেছেন, না এর থেকে বেশী প্রয়োজন আছে, না অকৃতজ্ঞতার কোন কারণ আছে।” (সহিহ বুখারি হা/৫৪৫৯)
৪) খাওয়া শেষ তিনি কখনো বলতেন,
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّنَا، غَيْرَ مَكْفِىٍّ، وَلاَ مُوَدَّعٍ، وَلاَ مُسْتَغْنًى رَبَّنَا
উচ্চারণ: আল হামদুলিহি রাব্বিনা, গাইরা মাকফিয়্যিন ওয়ালা মুওয়াদ্দিয়িন ওয়ালা মুসতাগনান রাব্বানা।
“সকল প্রশংসা আমাদের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। এর থেকে না বেশী প্রয়োজন, না এ (খাদ্য-পানীয়) পরিত্যাগ যোগ্য, না এর থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকা যায়- হে আমাদের রব।”
(সহিহ বুখারি হা/৫৪৫৯)
৫) আবু উমামা রা. কর্তৃক বর্ণিত উক্ত হাদিসটি (৪ নং দুআ) সহিহ বুখারিতে এভাবেও বর্ণিত হয়েছে,
الْحَمْدُ لِلَّهِ كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ غَيْرَ مَكْفِيٍّ وَلَا مُوَدَّعٍ وَلَا مُسْتَغْنًى عَنْهُ رَبَّنَا
উচ্চারণ: “আল হামদুলিল্লাহি কাসীরান ত্বয়্যিবান মুবারাকান ফীহী গাইরা মাকফিয়্যিন ওয়ালা মুওয়াদ্দিয়িন ওয়ালা মুসতাগনান আনহু রাব্বানা।”
“আল্লাহর জন্য অনেক পবিত্র ও বরকতময় সকল প্রশংসা….।” (বুখারি, হা/৫৪৫৮)
৬) আবু আইয়ুব আল আনসারি (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কিছু খেতেন বা পান করতেন, তখন এ দুআ পড়তেন,
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَ وَسَقَى ، وَسَوَّغَهُ ، وَجَعَلَ لَهُ مَخْرَجًا
‘‘আলহামদুলিল্লা-হিল্লাযী আত্ব‘আমা ওয়াসাকা- ওয়াসাও্ ওয়াগাহূ ওয়াজা‘আলা লাহূ মাখরাজা-’’ (সমস্ত প্রশংসা সে আল্লাহর জন্য যিনি খাইয়েছেন, পান করিয়েছেন, অতি সহজে তা উদরস্থ করিয়েছেন এবং [মলদ্বার দিয়ে অপ্রয়োজনীয় অংশ] বের হওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। (সুনান আবু দাউদ, শাইখ আলবানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন, সিলসিলা সহিহা, হা/২০৬১।
৭) ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إذا أكل أحدُكم طعامًا فلْيَقُل: اللهمَّ بارِكْ لنا فيه وأطعِمْنا خيرًا منه، وإذا سُقِيَ لبنًا فلْيَقُل: اللهمَّ بارك لنا فيه وزِدْنا منه،
“তোমাদের কেউ খাবার খেলে সে যেন এ দু‘আ পড়ে:
اللهمَّ بارِكْ لنا فيه وأطعِمْنا خيرًا منه
“আল্ল-হুম্মা, বারিক লানা ফীহি, ওয়া আত্ব’য়িমনা খাইরান মিনহু”
অর্থ: “হে আল্লাহ, এতে আমাদের জন্য বরকত দান কর এবং আমাদেরকে এর চেয়ে উত্তম খাবার দাও।”
আর যাকে আল্লাহ দুধ পান করান সে যেন এ দুআ পড়ে:
اللّهُمَّ بَاركْ لنَا فيهِ وَزِدْنَا مِنهُ
“আল্ল-হুম্মা বারিক লানা ফীহি ওয়া যিদনা মিনহু”
অর্থ: “হে আল্লাহ, এতে আমাদের জন্য বরকত দাও এবং তা আরও বেশি করে দাও।”(সহিহ আবু দাউদ, হা/৩৭৩০)
৮) “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট খাবার পেশ করা হলে তিনি বলতেন, বিসমিল্লাহ (আল্লাহর নামে) আর খাওয়া শেষ করে বলতেন,
اللهمَّ إنك أطعمتَ و سقيتَ ، و أغنَيتَ و أقنَيْتَ ، هدَيتَ و اجتبَيت ، اللهم فلك الحمدُ على ما أعطيتَ
উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আত্ব’আমতা, ওয়া সাক্বাইতা, ওয়া আগনাইতা ও আক্বনাইতা, ওয়া হাদাইতা। আল্লাহুম্মা ফালাকাল হামদু ‘আলা মা আ’ত্বাইতা।”
অর্থ: “হে আল্লাহ, তুমি পানাহার করিয়েছো, অভাব দূর করেছো, দরকারের চেয়েও বেশি প্রস্তুত করেছো, পথ দেখিয়েছ এবং সুব্যবস্থা করেছো।”
অত:এব হে আল্লাহ, তুমি যা দান করেছো তার জন্য যাবতীয় প্রশংসা তোমার।” [মুসনাদে আহমদ, নাসাঈ, সহিহুল জামে, হা/৪৭৬৮]
অন্য বর্ণনায়, و اجتبَيت এর পরিবর্তে وأحييتَ (ওয়া আহইয়াইাত: অর্থ: তুমি জীবিত রেখেছ) এসেছে। [আল কালিমুত ত্বাইয়েব, ১৯০-সহিহ]
৯) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা যখন কোন নিয়ামত গ্রহণ করার জন্য হাত বাড়াবে, তখন بِسْمِ اللَّهِ বিসমিল্লাহ (আল্লাহর নামে শুরু) বলবে। তারপর তৃপ্তি নিয়ে খাবার শেষ করার পরে বলবে:
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي هُوَ أَشْبَعَنَا ، وَأَنْعَمَ عَلَيْنَا وَأَفْضَلَ
উচ্চারণ: “আল হামদু লিল্লাহিল্লাযি হুয়া আশবা’আনা ওয়া আন’আমা ‘আলাইনা ফা আফদ্বালা।”
অর্থ: “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাদেরকে পরিতৃপ্ত করেছেন এবং আমাদেরকে নিয়ামত দান করেছেন যা অনেক উত্তম।” [সহিহ ইবনে হিব্বান, হা/৫২১৬, তবে এ
হাদিসটিকে শাইখ আলবানি জঈফ বলেছেন-যঈফুত তারগিব, হা/১৩০৩। তিনি ছাড়াও অনেক মুহাদ্দিস এটিকে মুরসাল হিসেবে যঈফ এর মধ্যে গণ্য করেছেন]
১০) খাওয়ার পরে ব্যাপকভাবে প্রচলিত নিম্নোক্ত দুআটি সহিহ/হাসান কিংবা জঈফ হওয়ার ব্যাপারে মুহাদ্দিসগণের মধ্যে মতবিরোধ লক্ষ করা যায়। আবু সাঈদ রা. হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানাহার শেষে বলতেন,
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنَا وَسَقَانَا وَجَعَلَنَا مُسْلِمِينَ
“সকল প্রশংসা ঐ আল্লাহ জন্য, যিনি আমাদেরকে পানাহার করিয়েছেন এবং আমাদেরকে মুসলিম বানিয়েছেন।”
[ইবনে হাজার আসকালানী বলেন, এ হাদিসের সনদ হাসান, দ্রষ্টব্য: আল ফুতুহাতুর রাব্বানিয়াহ ৫/২২৯, পক্ষান্তরে শাইখ আলাবানি জঈফ বলেছেন। দ্রষ্টব্য: জঈফ ইবনে মাজাহ, হা/৩২৮৩।
যাহোক, উক্ত হাদিসটি জঈফ/দুর্বল ধরে নিলেও যেহেতু তার অর্থটা সঠিক সেহেতু তা মাঝে-মধ্যে পাঠ করতে অসুবিধা নেই। তবে যেহেতু অন্যান্য একাধিক দুআ সহিহ হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে সেহেতু সেগুলো পড়া নি:সন্দেহে অধিক উত্তম। ৯ নং দুআর ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য]
সংক্ষেপ কথা হল, পানাহারের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’, বলতে ভুলে গেলে যখন খাবার মাঝে স্বরণ হবে তখন “বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু” এবং খাবার শেষে আল হামদুলিল্লাহ বা এ বিষয়ে যে কোন একটি দুআ পাঠ করা হাদিস সম্মত। এর মাঝখানে বিশেষ কোন দুআ হাদিস সম্মত নয়।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাঁর দেয়া রিজিক ও নিয়ামত ভোগ করার আগে তার নাম স্বরণ করার এবং শেষে তার প্রশংসাবাণী উচ্চারণ করার পাশাপাশি সারা জীবন যেন আমরা সুস্থ ও সবল অবস্থায় কেবল তাঁর দাসত্ব করতে পারি সে তাওফিক দান করুন। আমিন।
আল্লাহু আলাম।