পর্দা না করার শাস্তি সম্পর্কিত কিছু হাদিস উল্লেখ করা হল। পর্দা শব্দটি ইসলামের বিধিবিধানের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ইসলাম মানুষের জন্য এমন কিছু ফরজ নিয়মকানুন করে দিয়েছে যা পালনে বেহেশতি সুখ পৃথিবীতেই অনুভূত হয়। আর এর লঙ্ঘনের ফল হয় অশান্তি আর চিরস্থায়ী জাহান্নাম।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “ দু’ শ্রেণীর মানুষ জাহান্নামী হবে: – যারা গরুর লেজ সদৃশ বেত দ্বারা মানুষকে প্রহার করে এবং যে সব নারী এত পাতলা পোশাক পরিধান করে যে তার ভেতর দিয়ে শরীরের অংশ দেখা যায় এবং উটের কুঁজের মতন কেশ বিন্যাস করবে। এ নারী জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না, যা বহুদূর থেকে পাওয়া যায়।”
[সহীহ মুসলিম হাদিস নং: ২১২৭,মুসনাদে আহমাদ, হাদীস:৮৬৬৫]
২) রাসুল [সা.] বলেছেন, তিন শ্রেণীর মানুষের উপর জান্নাত হারাম অর্থাৎ এই তিন শ্রেণীর মানুষ কখনোই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।প্রথম শ্রেণী হলো- যারা কোনো প্রকার নেশাদারদ্রব্য পান বা গ্রহণ করে।দ্বিতীয় শ্রেণী হলো- যে বা যারা পিতা-মাতারঅবাধ্য, এই শ্রেণীভূক্ত মানুষরাওজান্নাতে যাবে না।তৃতীয় শ্রেণী হলো-দাইউস। ঐ দাইউস ব্যক্তি যে তার পরিবারে পর্দা প্রথা চালু রাখেনি। পরিবারের সদ্যসের মাঝে বেপর্দা ছিলো, বেহায়াপনা ছিলো কিন্তু সে বাধা প্রদান করেনি। পরিবারের কর্তা হিসেবে বেপর্দা-বেহায়াপনা বন্ধ না করার জন্য এই শাস্তি পাবে সে।
[মুসনাদে আহমাদ: ২/৬৯]
৩) আর সুগন্ধি আকর্ষণের এমন একটি মাধ্যম যা দৃষ্টি-অবনত ব্যাক্তিকেও আকৃষ্ট করে। সুতরাং এ বিষয়ে কতটা সতর্ক থাকা দরকার তা নিজেরাই ভেবে দেখি। হাদীস শরীফে এসেছে, ‘‘প্রত্যেক চোখ যিনা করে। আর কোন নারী যদি সুগন্ধি ব্যবহার করে কোন মজলিশের পাশ দিয়ে যায় তাহলে সেও নযরের যিনা বা সরাসরি যিনার প্রতি প্রলব্ধুকারী হিসেবে গণ্য হবে।
(জামে তিরমিযী, হাদীস:২৭৮৬)
৪) রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
“কোনো পুরুষ কোনো নারীর সাথে নির্জনে মিলিত হলে নিঃসন্দেহে তাদের তৃতীয়জন হয় শয়তান। (অর্থাৎ তখন শয়তান তাদের মনে কুমন্ত্রণা দেয়)।”
(জামে তিরমিযী,হাদীস : ১১৭১)
৫) রাসুল(সঃ) ইরশাদ করেন, খবরদার তোমার বেগানা স্ত্রীলোকের ঘরে প্রবেশ করো না। জনৈক সাহাবী জিজ্ঞাসা করেন ইয়া রাসুলুল্লাহ(সঃ) স্বামীর ভাইদের (ভাসুর, দেবর, বেয়াই ইত্যাদি) সম্পর্কে কি নির্দেশ?
রাসুল(সঃ) ইরশাদ করেন তারা তো স্ত্রীর জন্য মৃত্যুতুল্য। অর্থাৎ মহাবিপদতুল্য।
(তিরমিজিঃ ১/২২০)
৬) উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামা(রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি এবং মাইমুনা(রাঃ) রাসুল(সঃ) এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় অন্ধ সাহাবী ইবনে উম্মে মাখতুম(রাঃ) সেখানে আসতে লাগলেন। তখন রাসুল(স) বললেন তোমরা তার থেকে পর্দা করো, আড়ালে চলে যাও। আমি বললাম ইয়া রাসুলুল্লাহ তিনি তো অন্ধ। তিনি তো আমাদের দেখতে পাচ্ছেন না।
তখন রাসুল(স) বললেন তোমরাও কি অন্ধ?
তোমরা কি তাকে দেখতে পাচ্ছো না?
(আবু দাউদ ২/৫৬৮)
৭)রাসুল(সঃ) বলেন নারী হল গোপনীয় সত্ত্বা। যখন সে ঘর থেকে বের হয় তখন শয়তান তার দিকে দৃষ্টি উচু করে তাকাতে থাকে।
(তিরমিযি১/২২২)
৮) রাসুল(সঃ) বলেন , আমার পরে নারী ফিতনা (পরীক্ষা) পুরুষদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ করবে।
(বুখারি ও মুসলিম)
৯) ভ্রু প্লাক করা ও পরচুল পরা হারাম !! বর্তমান সময়ের ফ্যাশন সচেতন বোনেরা অনেকেই ভ্রু প্লাক করে থাকেন এবং নানা রঙের নানা ধরনের পরচুলও ব্যাবহার করে থাকেন। অথচ যারা এমন করেন, রাসুল (সাঃ) তাদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন। কাজেই বোনেরা আল্লাহর ভয়ে এই ধরনের গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকুন।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আল্লাহর অভিশাপ হোক সেই সব নারীদের উপর, যারা দেহাঙ্গে উল্কি উৎকীর্ণ করে এবং যারা করায়, এবং সেসব উপর, যারা ভ্রু চেঁছে সরু (প্লাক) করে, যারা সৌন্দর্য মানসে দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে, যারা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে পরিবর্তন আনে।’
জনৈক মহিলা এ ব্যাপারে তার (ইবনে মাসউদের) প্রতিবাদ করলে তিনি বলেন, ‘আমি কি তাকে অভিসম্পাত করব না, যাকে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) অভিসম্পাত করেছেন এবং তা আল্লাহর কিতাবে আছে?
আল্লাহ বলেছেন, “রাসুল যে বিধান তোমাদেরকে দিয়েছেন তা গ্রহন কর, আর যা থেকে নিষেধ করেছেন, তা থেকে বিরত থাক।
(সূরা হাশরঃ৭)”
ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যে মহিলা পরচুল লাগিয়ে দেয় এবং যে পরচুলা লাগাতে বলে, আর যে মহিলা অঙ্গ প্রত্যঙ্গে উল্কি উৎকীর্ণ করে ও উল্কি উৎকীর্ণ করতে বলে তাদেরকে অভিশাপ করেছেন।
[সহীহ বুখারির ৫৫০৭ থেকে ৫৫২৪ নং হাদিস দেখুন]
১০) রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “নারীরা হচ্ছে চাদর এবং যদি সে গৃহের বাইরে যায় তবে শয়তান খুশি হয় (তাকে বিভ্রান্ত করতে পারবে বলে)। সে (নারী) আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে না যতটা সে গৃহে থেকে করতে পারতো।”
[ইবনে হিব্বান ও ইবনে আবী খুযাইমাহ, আলবানী এটিকে সহীহ বলেছেন, সিলসিলা আস সহীহাহ ২৬৮৮]
এবং তিনি (সাঃ) নারীদের মসজিদে সালাত আদায়ের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয়ে বলেছিলেন, “তাদের গৃহই তাদের জন্য উত্তম।”
[আবু দাউদ ৫৬৭]
১১) রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “আমি পুরুষের জন্য নারীর চেয়ে বড় আর কোন ফিতনাহ রেখে যাচ্ছিনা। আর, বনী ইসরাইলের প্রথম ফিতনাহই ছিলো নারী সংক্রান্ত। সুতরাং লোকদের উচিত তাদের পরিবারকে ফিতনাহ এবং ফিতনাহর উপকরণ থেকে দুরে রাখা। [ফতোয়ায়ে আল-মার’আহ আল মুসলিমাহ : ২/৯৮১]
১২) আবু হুরায়ররা (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “মহান আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি যে নারী ঈমান রাখে, তার মাহরামের সঙ্গ ছাড়া একাকিনী এক দিন এক রাতের দূরত্ব সফর করা বৈধ নয়।’’.
[সহীহ বুখারীঃ হাদীস ১০৮৮, সহীহ মুসলিমঃ ১৩৩৯, জামে তিরমিযীঃ হাদীস ১০৭০, সুনানে আবু দাউদঃ হাদীস ১৭২৩, ইবনে মাজাহঃ হাদীস ২৮৯৯, মুসনাদে আহমদঃ হাদীস ৭১৮১, ৭৩৬৬, ৮২৮৪, ৮৩৫৯, ৯১৮৫, ৯৩৭৪, ৯৮৪৮, ১০০২৯, ১০১৯৭, মুওয়াত্তা মালিকঃ হাদীস ১৮৩৩]