পর্ণ সাইটের বর্তমান বাজার ও পরিণতি
আচ্ছা, বলতে পারবেন কি জনপ্রিয় পর্ণ সাইটগুলোতে প্রতিদিন কতজন মানুষ ভিজিট করে?
একটু আন্দাজ করেন তো। লাখ খানেক? উহু,ধারে কাছেও না। দশ লাখ?
না। এক কোটি? তবুও অনেক কম।
আচ্ছা থাক এতো চাপ নেয়া লাগবেনা, আমিই নাহয় বলে দিচ্ছি। ফোর্বস এর তত্ত্ব মতে প্রতিদিন প্রায় ৮১ মিলিয়ন, দ্যাট মিনস ৮ কোটি মানুষ শুধুমাত্র একটি পর্ণ সাইটে ভিজিট করে! আর প্রতি সেকেন্ডে পর্ণ সাইট গুলোতে ভিজিটর সংখ্যা প্রায় ২৮ হাজার জন! প্রতি মাসে টপ পাঁচটি পর্ন সাইটে ভিজিটর সংখ্যা প্রায় ৬০০ কোটির মতো।
এই যে এতো সংখ্যক ভিজিটর সেখানে কী জন্য ভিজিট করে? নিশ্চই হাওয়া খেতে নয়? পর্ণ এর বিস্তার কিছুটা হলেও অনুধাবন করতে পারছেন কি?
চলেন আরো একটু ঘুরে আসি।
সারা দুনিয়ার পর্ণ ব্যবসা কত টাকার জানেন?
প্রায় ৯৭ বিলিয়ন ডলারের! এটাতো বললাম ওয়ার্ল্ড ওয়াইড হিসাব। আমার সোনার দেশের খবর জানেন? কয়েকবছর আগের এক তথ্যমতে প্রতিদিন শুধু পাড়ার গান লোডের দোকানগুলোতে প্রায় ৩ কোটি টাকার পর্ণ ভিডিও বিক্রি হয়! ক্যাফে, হোটেল, আর অন্যান্য সোর্সের কথা ধরলে সংখ্যাটা নিতান্ত কম হবে না। বাংলাদেশে ‘ব্রেইভম্যান ক্যাম্পেইন’ নামের একটা জরিপে দেখা গেছে দেশের স্কুলগামী কিশোরদের প্রায় ৬১.৬৫% পর্ণগ্রাফিতে আসক্ত। এতো গেলো কয়েকবছর আগের হিশেব। এই হিশেবটা ধরে বর্তমানের কথা একবার চিন্তা করে দেখেনতো।
এবার আসি মূল কথায়, আপনারা হয়তো জেনে থাকবেন যে, আমাদের মস্তিষ্কে Reward Center নামে একটা অংশ আছে। এর কাজ হলো আনন্দ অনুভূতি দেয়া, বেচে থাকার প্রেরণা দেয়া। আর সে এই কাজটা করে ডোপামিন নির্গমনের মাধ্যমে। আপনি যদি কোনো কাজ করে আনন্দ পান তাহলে রিওয়ার্ড সেন্টার ডোপামিন নির্গমন করে।
আর যে কাজটা করে প্রথমবার ডোপামিন নির্গমন হয়েছিলো মস্তিষ্ক সেই কাজটা বারবার করতে মন চায়। ফলে পর্ণ যারা দেখে তারা একটার পর একটা দেখতেই থাকে। এর থেকে সহজে বেরিয়ে আসতে পারেনা। এভাবে আস্তে আস্তে তারা একদম আসক্ত হয়ে পড়ে।
পর্ণগ্রাফির প্রভাব অনেক বিস্তৃত। এটি ধীরে ধীরে ব্রেইন ওয়াশ করে। আসক্তরা একসময় পর্দার পারফর্মেন্স দেখতে দেখতে নিজে পারফর্মেন্স করার ইচ্ছা পোষণ করে। ফলে কোনো উপায় না পেয়ে শেষ পর্যন্ত নিরীহ একটা মেয়ের মাধ্যমে ইচ্ছার বাস্তবায়ন করে। এভাবে সমাজে ধর্ষণের সংখ্যা বাড়তে আছে। শুধু এটাই নয়, ওপারের অভিনেতাদের মত অনেকে নিজের স্বামী/স্ত্রীর সাথেও পারফর্ম করতে চায়।
কিন্তু সপ্তাহ ধরে শুটিং করা ৩০/৪০ মিনিটের একটা পর্ণ ভিডিও দেখে নিজের সঙ্গীর কয়েক মিনিটের পারফর্মেন্সে হতাশ হয়। অনেকে এনাল ও ওরাল সেক্সের মতো জঘন্য পদ্ধতিরও প্রয়োগ করতে চায়। ফলে সৃষ্টি হয় মনোমালিন্য।আর বর্তমানে ডিভোর্সের ক্রমবর্ধমান হারের এটাও একটা কারণ বটে।
আমাদের মস্তিষ্কের আরেকটা অংশের নাম হলো ফ্রন্টাল লোব। এটি মানুষের মনের ভাব, ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে। আর পর্ণ এই অংশের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে। নার্ভ সেল গুলো কখনো রিজেনারেট করতে পারেনা বলে অনেকে চাইলেও এ অবস্থা থেকে স্বাভাবিক ভাবে ফিরতে পারেনা।
আর তাই ইসলাম আমাদের গোড়াতেই সতর্ক করে দিয়েছে যাতে আমরা এতে আসক্ত হয়ে নিজেকে ধ্বংস করে না ফেলি। ইসলাম আমাদের শেখায় এজাতীয় সব কিছু থেকে দূরে থাকতে। ইসলাম বলে আমরা যেন এর ধারেকাছেও না যাই।
“যিনার কাছেও যেয়ো না, ওটা অত্যন্ত খারাপ কাজ এবং খুবই জঘন্য পথ।”
(বনী ইসরাঈল:৩২)
“…….চোখের যিনা হলো দেখা…..”
(বুখারী:৬২৪৩)
সুতরাং এই বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতার প্রয়োজন। যাতে আমাদের ভাই/বোন কিংবা সন্তানরা এই ভয়ানক জগতে প্রবেশ করতে না পারে। আমি শুধু সংক্ষিপ্ত আকারে এর প্রভাব তুলে ধরার একটা চেষ্টা করেছি। আর এটা এতো বিস্তৃত বিষয় যে এ নিয়ে বইয়ের পর বই লিখা সম্ভব। তাই চাইলেও এক লেখায় সব তুলে ধরা সম্ভব না। প্লিজ এই বিষয়টাকে গুরুত্ব দিন নয়তো আপনার ঘরেই হয়তো বেড়ে উঠবে বিকৃত মানসিকতার কোনো সন্তান।