নারী অধিকার না কি অন্যকিছু?
আপনি জানলে অবাক হবেন, খ্রিস্টান ধর্মগুরুরা ‘ম্যাকন কাউন্সিলে’ সমবেত হয়েছিল এ বিষয়ে গবেষণা করার জন্য: নারী কি শুধু একটি দেহ; নাকি রূহ বিশিষ্ট দেহ? শেষে তারা অধিকাংশের মতামতের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্তে আসে যে, নারী হচ্ছে- রূহবিহীন(!); শুধু ব্যতিক্রম হচ্ছেন মরিয়ম আলাইহিস সালাম।
৫৮৬ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে নারীকে নিয়ে গবেষণার জন্য একটি সেমিনার ডাকা হয়। উক্ত সেমিনারের আলোচ্য বিষয় অনেকটা ‘ম্যকন কাউন্সিলের’ সভার মতোই ছিলো। অষ্টম হেনরির শাসনামলে আমরা যাদের লিগ্যাল(!) ফ্রেইমওয়ার্ক ইউজ করি সেই ইংরেজ পার্লামেন্ট একটি আইন পাস করে, সে আইনে নারীর জন্য ‘নিউ টেস্টামেন্ট’ পড়া নিষিদ্ধ করা হয়; কারণ নারী নাপাক। আবার ইংরেজ আইনে ১৮০৫ সাল পর্যন্ত পুরুষের জন্য নিজের স্ত্রীকে বিক্রি করে দেয়া বৈধ ছিল। স্ত্রীর মূল্য নির্ধারণ করা হয় ছয় পেনি।
বিজ্ঞাপন, ম্যাগাজিন – সব জায়গায় নারীদের উপস্থিতি। তাও আবার নামমাত্র কাপড়ে। যেন নারী কোনো প্রদর্শনের বস্তু। গাড়ির শোরুম বা বিজ্ঞাপনে বিকিনি পরা মেয়েদেরকে “শোপিস” হিসাবে রাখা হয়; কেউ যদি “সমানাধিকার” এর কথা বলে জাঙ্গিয়া পরা পুরুষ মডেলদের গাড়ির শোরুমে/বিজ্ঞাপনে রাখার দাবি জানান কেউ তাহলে তিনি নিশ্চই হাসির পাত্র হবেন।
এই যে নারীর প্রতি এই অসৌজন্যতা এগুলোর কারণ কি?
একটাই কারণ, ভোগ। সমানাধিকারের কথা বলে বলে নারীকে মানুষ থেকে পণ্যের কাতারে নিয়ে গিয়েও কথিত নারীবাদীরা শ্রান্ত হয় নি। আরো অধিকার চাই। কেমন অধিকার?
যে অধিকার নারীর সম্মানহানি ঘটায় সে অধিকার?
যে অধিকার নারীকে পণ্য বানায় সে অধিকার?
যে অধিকার নারীকে মায়ের জাতি থেকে ভোগের জাতি বানায় সে অধিকার?
এগুলো তাহলে ইসলামের বিপরীতে আপনাদের উত্তাপন করা নারী অধিকার? চুরের হাত থেকে সম্পদ রক্ষার নামে সম্পদ লুকিয়ে না রেখে বরং চোরের আস্তানায় নিয়ে ফেলে আসা খুব বুদ্ধিমানের কাজ? হয়তো আমারই ভুল হচ্ছে, জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে হয়তো এ অধিকারের মর্ম বুঝতে পারছিনা! আমি বরং অন্য প্রসঙ্গে যাই।
একটা কথা শুনতে শুনতে কান জালাপোড়া করছে আমার। কথাটা হলো, ইসলাম নাকি নারীকে যথাযথ অধিকার দিতে চায় না! ইসলাম নাকি নারীকে সম্মান দেয়না!
ইসলাম নারীকে পর্দা করতে বলে। কেন?
কারণ ইসলাম চায়না নারীরা ভোগ্য পন্য হোক। ইসলাম চায়না নারীরা পর পুরুষের লোলুপ দৃষ্টির স্বীকার হোক। ইসলাম চায়না নারী পথেঘাটে লাঞ্ছিতা, ধর্ষিতা হোক। তাইতো আল্লাহ বলছেন,
“হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মু’মিনদের নারীদেরকে বলঃ তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবেনা। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”
[আহযাব: ৫৯]
যেহেতু পাশ্চাত্যের সো কল্ড নারীবাদীরা জাতির মস্তিষ্ক থেকে আল্লাহর অস্তিত্বই মুছে দিতে চায়; আর তাই পুরুষ ছাড়া তাদের কাছে ভিন্ন কোনো মানদণ্ড থাকে না। ফলশ্রুতিতে তারা বাধ্য হয় পুরুষদের মাঝেই নিজেদের মূল্য খুঁজে নিতে। অথচ সমাধান একমাত্র ইসলামেই। ইসলাম এসেছে মানুষকে অন্যের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে এক আল্লাহর দাসত্বে ফিরিয়ে নিতে।
আল্লাহ বলছেন,
“আর নারীদের তেমনি ন্যায়সংগত অধিকার আছে যেমন আছে তাদের উপর পুরুষদের; আর নারীদের উপর পুরুষদের মর্যাদা রয়েছে। আর আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।”
[সূরা বাকারা: ২২৮]
যখন জাহিলিয়াতের যুগে কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেয়া হতো তখন ইসলাম নিয়ে এসেছিলো নারীর সম্মান আর মর্যাদা। এ ব্যাপারে ইসলামের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী হচ্ছে-
“যে ব্যক্তি বালেগ হওয়া পর্যন্ত দুইজন মেয়েকে লালন-পালন করবেন সে ও আমি কিয়ামতের দিন এভাবে আসব (তিনি আঙ্গুলসমূহকে একত্রিত করে দেখালেন)”।
[সহিহ মুসলিম :২৩১]
তবুও কি বলবেন ইসলাম নারীকে সম্মান দেয় না? আপনাদের দেয়া সম্মানই প্রকৃত সম্মান?
বললেই বা কী?
সত্য চিরদিন সত্যই, আপনারা স্বীকার করলেও যেমন সত্য না করলেও তেমন সত্য।