নবিজীর (সা:) যুগে নারীদের ঈদ
ঈদ এবং জুম্মার নামাজের যেমন আছে ধর্মীয় গুরুত্ব, তেমনি আছে সামাজিক আবেদন। জুম্মার দিন মুসলিমদের সাপ্তাহিক সম্মেলন, দুই ঈদের দিন বার্ষিক সম্মেলন। সাধারণ মুসলিমদের মধ্যে অন্যান্য ওয়াক্তের নামাজের যতোটা না গুরুত্ব আছে, তারচেয়ে বেশি গুরুত্ব এই দুই নামাজের। সমাজের প্রায় প্রত্যেক পুরুষ এই দুটো নামাজ সাধারণত মিস করে না।
অনান্য নামাজে খুতবা দেয়া হয় না, কিন্তু এই দুই নামাজে খুতবা দেয়া হয়। মুসলিমদের সমসাময়িক বিষয়গুলো নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা করা হয় এই দুই নামাজে। তাছাড়া মুসলিমদের সামাজিক সম্প্রীতির একটি উপলক্ষ্য হলো ঈদ এবং জুম্মার নামাজ।
নবিজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুগে নারীরাও ঈদের দিন ঈদগাহে যেতো। তারাও যে মুসলিম উম্মাহর এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ, সেটার একটি প্রতিচ্ছবি ছিলো ঈদগাহর ময়দান। নবিজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুগে মুসলিমদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসবে নারীদের অংশগ্রহণ ছিলো স্বতস্ফূর্ত।
ঈদের দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নারীদেরকে ঈদগাহে উপস্থিত হবার জন্য নির্দেশ দিতেন। এই নির্দেশনা ছিলো সকল নারীর জন্য; এমনকি ঋতুবর্তী (হায়েজকালীন/পিরিয়ড) নারীদের জন্যও। ঋতুবর্তী নারীদের জন্য নামাজ মাফ, পরবর্তীতে স্বাভাবিক হবার পরও তাদের নামাজ ঐ সময়ের মিস হওয়া নামাজ পড়তে হয় না। অথচ, তাঁদেরকেও পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদগাহে যেতে বলেন। তারা ঈদগাহর ময়দানে পৃথকভাবে অবস্থান করতেন, তবে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুআয় অংশগ্রহণ করতেন।
[সহীহ বুখারী: ৯৮১]
ঈদগাহে ঈদের নামাজ পড়তে গেলে তো খোলা ময়দানে গিয়ে নামাজ পড়তে হবে। সেক্ষেত্রে পরিপূর্ণ পর্দা করতে হবে। কিন্তু, অনেক নারী সাহাবীর ওড়না ছিলো না। তারাও কি ঈদগাহে যাবে? ওড়না ছাড়া তারা কিভাবে যাবে? যাদের ওড়না নেই, তাদের না গেলে হয় না?
একজন নারী সাহাবীর মনে এমন প্রশ্ন জাগলো। তিনি রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের কারো কারো তো ওড়না নেই।”
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জবাব দিলেন:
“তাহলে তার সাথীর উচিত তাকে নিজের ওড়না পরিয়ে দেয়া।”
[সহীহ বুখারী: ৩৫১]
অর্থাৎ, নিজের ওড়না না থাকলে কী হবে?
তার বান্ধবী যেনো তাকে একটি ওড়না দেয়, ঐ ওড়না দিয়ে যেনো সে নামাজে অংশগ্রহণ করে। ঈদের নামাজ নারীদের জন্যও যে গুরুত্বপূর্ণ, তাদের কোনো এক্সকিউজ দেখানোর যে সুযোগ নেই, এই বিষয়টি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুগের নারীদের কাছে ছিলো স্পষ্ট। রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশনা, কোনো অজুহাতকে (হায়েজকালীন/পর্দার প্রশ্নে) প্রশ্রয় না দেয়ার মধ্য দিয়ে ফুটে উঠে নারীদের ঈদের নামাজে অংশগ্রহণের উৎসাহিত করার বিষয়টি।
একবার ঈদের নামাজ শেষে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যথারীতি খুতবা দিলেন। তখনকার সময় তো মাইক ছিলো না, লাউডস্পিকার ছিলো না। ঈদের নামাজে হাজার-হাজার সাহাবী জমায়েত হয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লক্ষ্য করলেন পেছনে থাকা নারী সাহাবীরা তার খুতবা ঠিকমতো শুনতে পাননি।
তিনি বিলাল (রাদিয়াল্লাহু আনহু) –কে সাথে নিয়ে নারীদের নিকট গেলেন। সেখানে গিয়ে তাদেরকে উপদেশ দিলেন, সাদকা করার ব্যাপারে উৎসাহিত করলেন। রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে নারী সাহাবীরা তাদের শরীর থেকে অলংকারাদি খুলে সাদকা করেন।
[সহীহ বুখারী: ১৪৪৯]
রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুগের নারীরা যেমন ঈদের দিন ঈদগাহে উপস্থিত হতেন, বর্তমান সময়ে বিভিন্ন দেশের নারীরাও সেই ‘সুন্নাহর’ অনুসরণ করেন।
নবিজীর (সা:) যুগে নারীদের ঈদ