জুম্মার খুৎবা- ০১/০১/২০২১।
Table of Contents
দীর্ঘ গবেষনার পর নামাজের মাসায়েল সম্পর্কে
ড.আবুল কালাম আজাদ বাশার
সম্মানিত ভাইয়েরা আমাদের নামাজের ভিতরে যে অসঙ্গতিগুলো আছে তা নিয়ে কথা বলছিলাম আমাদের ভুল গুলোকে আমরা সংশোধন করে নিতে চাই। আমরা আজকে কথা বলবো ইনশাআল্লাহ আমরা যখন তাশাহুদ পড়ার জন্য বসি তখন আমাদের হাত রানের উপরে কিভাবে রাখতে হবে কিভাবে রাখা সুন্নত আমাদের বাংলাদেশে মানুষ অধিকাংশ মানুষকে আমরা দেখতে পাই। তারা উভয়েই হাত রানের উপরে একভাবে রেখে দেয়। কেউ হাঁটুর উপর রাখে কেউ রানের উপর রাখে। হাঁটুর উপর হাটুর উপরে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন হাদিস আছে রানের উপর রেখেছে এমন হাদিস আছে দুটোই আছে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন আল্লাহ হাবিব যখন তাশাহুদ পড়তে বসেতেন ডান হাত রাখতেন ডান রানের উপরে, বাম হাত রাখতেন বাম রানের উপরে, তাহলে রানের উপরে রাখা হাদিস স্পষ্ট।
ইবনে ওমর (রা.) রাসুল সাঃ যখন নামাজে তাশাহুদ এর জন্য বসতেন, তার হস্তদ্বয় তিনি রাখতেন তার হাটুর উপরে। তাহলে হাটুর উপরে রাখার হাদিস আছে রানের উপরে রাখার হাদিস আছে।
ছোট কালে শুনেছি হাটুর উপরে হাত রাখলে নাকি আল্লাহ কেচি দিয়ে আঙ্গুল কেটে ফেলবেন। আপনারা শুনেছেন এরকম কথা শোনার লোক অনেকে আছে। আমরা ছোটকালে যে শুনেছি হাটুর উপরে রাখলে চলবে না। আল্লাহ আঙ্গুল কেটে ফেলবেন একথার কোন ভিত্তি নাই। রানের উপরে রাখার হাদিসও সহিহ, হাটুর উপরে রাখা ও হাদিস সহিহ। হাটুর উপর রাখতেন এটার হাদিস হচ্ছে সহিঃ মুসলিম হাদিস নম্বর ১১৯৭, আর রানের উপর রাখতেন সহিঃ মুসলিম হাদিস নম্বর হচ্ছে ১১৯৬।
মুহাম্মাদ ইবনু রাফি’ ও ‘আব্দ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ….. আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায়ের সময় যখন বসতেন (বৈঠক করতেন) তখন দু’হাত দু’ হাঁটুর উপর রাখতেন। আর ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির পার্শ্ববর্তী (শাহাদাত) আঙ্গুল উঠিয়ে ইশারা করতেন এবং বাঁ হাত বাঁ হাঁটুর উপর ছড়িয়ে রাখতেন।
সহীহ মুসলিম – হাদিস নম্বরঃ ১১৯৬
(ইসলামী ফাউন্ডেশন ১১৮৫, ইসলামীক সেন্টার ১১৯৭)
১৯৭-(১১৫/…) আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ….. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের মধ্যে “তাশাহহুদ’ পড়তে যখন বসতেন তখন বাঁ হাতটি বা হাঁটুর উপর এবং ডান হাত ডান হাঁটুর উপর রাখতেন। আর (হাতের তালু ও আঙ্গুলসমূহ গুটিয়ে আরবী) তিপ্পান্ন সংখ্যার মতো করে শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন।
সহীহ মুসলিম – হাদিস নম্বরঃ ১১৯৭
(ইসলামী ফাউন্ডেশন ১১৮৬, ইসলামীক সেন্টার ১১৯৮)
এবার আমরা তাশাহুদ এর শেষে দুরুদ শরীফ পড়ি। দুরুদ শরীফ এর পরে আমরা নামাজের শেষ রাকাতে যদি হয়, শেষ বৈঠক যদি হয় অথবা দুই রাকাত বিশিষ্ট নামাজ হলে একমাত্র বৈঠক হবে। দুরুদের পরে আমরা যেটা পড়ি এটা কি আমরা বলি দোয়ায়ে মাসুরা।
কি বলি আমরা?
দোয়ায়ে মাসুরা।
এখন দোয়ায়ে মাসুরা পড়া, এটা আল্লাহর হাবিব কর্তৃক নির্ধারিত কোন দোয়া একটাই এমন মোটেও নয়। আমাদের দেশে আমরা আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাছীরও পড়ে থাকে, এটা মক্তবে মুখস্থ করা হয়েছে। কিন্তু এর আরও যে দোয়া আছে, সেগুলোর খবর আমরা অনেকে রাখি না। রাখে না তো সাধারন মানুষ রাখেনা হাজারো মোহাদ্দেছ, বড় আলেম। একটা পাইসে খুটা গাইরা দিছে। এবং এটাকে অনেকে জরুরি মনে করে।
একবার সাভারে জুমা পড়াই ওখানে আমাকে এক মুসল্লী, এক কলেজের টিচার উনি বললেন যে হুজুর তারাবির নামাজে আমি লক্ষ্য করেছি যে তাশাহুদ পড়ার পরে দুরুদ শরীফ কোনরকমে শেষ করতে পারি কিন্তু আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাছীরও এটা শুরু করতে পারিনা, এর আগেই ইমাম সালাম ফিরায়ে ফেলে!
আমি বললাম হতে পারে বলল কেন হতে পারে?
নামাজ হবে।
বললাম হ্যাঁ নামাজ হবে।
কারণ ইমাম যদি শুধু দূরুদ শরীফ পড়ে সালাম ফিরিয়ে দেয় সে উত্তম কাজ বর্জন করেছে কিন্তু কোন হারাম কাজ করেনি। ওয়াজিব তরক করেনি, কারণ দুরুদ শরীফ এর পরে যে দোয়ায়ে মাসুরা আছে এটা নির্ধারিত নয়।
এটা এক শব্দ হতে পারে। আপনারা যেটা পড়েছেন সেটা আছে ভিন্ন ভিন্ন কি দোয়া আছে সেটাও আছে কিন্তু সহিহ মুসলিম শরীফের একটি হাদিস হাদিস নম্বর হচ্ছে ৭৮৫।
আবদ ইবনু হুমায়দ এর সনদে মানসূর হতে একই হাদীস অবিকল বর্ণিত হয়েছে। তবে এ বর্ণনায় শেষ অংশ হচ্ছেঃ অতঃপর সালাত আদায়কারী তার ইচ্ছানুযায়ী অথবা নিজের পছন্দমত যে কোন দু’আ পড়তে পারে।
সহীহ মুসলিম – হাদিস নম্বরঃ৭৮৫
(ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭৮২, ইসলামিক সেন্টারঃ ৭৯৪)
ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত দরুদ শরীফ পড়ার পর নামাজীকে এখতিয়ার দেয়া হয়েছে, যে কোন দোয়া করার অধিকার রাখে। সুবহানাল্লাহ সুবহানাল্লাহ। ইসলাম যে কত সুন্দর দেখেন, নামাজ হলো এমন একটা ইবাদত। যেটার মাঝে আল্লাহর সাথে কথা বলা যায়।
সালাত নিয়ে যে জুমার বয়ান করেছি সেখানে বলা হয়েছে না যে নামাজে দাঁড়ালে আল্লাহর সাথে কথা হয়। এ নিয়ে সহিহ বুখারী উল্লেখিত হাদীস রয়েছে যে, ব্যক্তি নামাজে দাঁড়ালে আল্লাহর সাথে কথা বলে, সুবহানাল্লাহ।
নামাজে যতক্ষণ আপনি এক নিষ্ঠ, এদিক সেদিক মন না দিয়ে নামাজ পড়তে থাকবেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন আল্লাহর দিকে তাকিয়ে থাকে সুবহানাল্লাহ।
এভাবে তাকিয়ে থাকে যে আমার বান্দা নামায পড়তেছে। আপনি আল্লাহর সাথে কথা বলবেন, আল্লাহ শুনবে। আপনার সাথে কথা হচ্ছে পুরা নামাজ টাতেই। রাসুলুল্লাহ সাঃ আপনাকে এখতিয়ার দিয়েছে। যে তুমি তাশাহুদ পড়ার পরে দুরুদ শরীফ পড়ো, পড়ার পরে তুমি আল্লাহর সাথে কথা বলতেছ, এবার যদি আমি নির্ধারিত একটা দুয়া শিখিয়ে দিই অথচ তোমার দরকার আছে ভিন্ন দোয়া।
তোমার মাইয়াটা বিয়ে হয় না। কথা কি বুঝেন নাই তোমার ছেলেটা বিদেশ যাবে ভিসাটা লাগতেছে না, অথচ দালালকে ৫ লক্ষ টাকা দিয়ে রাখছো। তোমার দরকার হলো যে আল্লাহ আমার ছেলের ভিসার ব্যবস্থাটা করে দাও, তুমি অসুস্থ কোন ডাক্তার কাজ হচ্ছেনা ঔষধে, তোমার দরকার সুস্থতা। তোমার দরকার ছেলের চাকরি, অযথা মামলা দিয়ে হয়রানি করতেছে। তুমি নির্দোষ, তোমার দরকার বিপদ থেকে মুক্তি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন দুরুদ শরীফ পড়ার পড়ে, তুমি এবার ইচ্ছেমত আল্লাহর কাছে বল, সুবহানাল্লাহ।
তুমি এবার বল, আল্লাহ আমার রিজিক কমে গেছে, আমার রিজিক বাড়িয়ে দাও। দুই সিজদার মাঝখানে রিজিকের দোয়া আছে না।
আল্লাহুম্মাগফিরলি, ওয়ারহামনি, ওয়াহদিনি, ওয়া আফিনি, ওয়ারযুকনি দোয়াটা দোয়াটা আছে কিনা।
কেউ কেউ বলে দুনিয়ার কিছু চাওয়া যাবে না। এগুলা হল বাজে কথা, দলিল নেই। কোথায় পেলেন আপনি এটা দুনিয়ার কথা চাওয়া যাবে না, দুই সেজদার মাঝখানে তো আপনি রিজিক চাইতেছেন।
রিজিক কি আখেরাতের জিনিস নাকি?
আপনিতো দুনিয়াটাই চাইতেছেন। কেন চাওয়া যাবে না। শ্রেষ্ঠ দোয়া কোরআনের দোয়া, রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানা, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানা, ওয়াকিনা আজাবান্নার।
আল্লাহ দুনিয়াতে কল্যাণ দাও, তো দুনিয়ার জিনিস পাওয়া যাবে না বললো কে?
রুকু এবং সিজদাতে কোরআন তেলোয়াত নিষেধ। কিন্তু আপনি তাশাহুদ পড়ে দুরুদ শরীফ শেষ করে যদি আপনি এখন মনে করেন যে জানে মানে শ্রেষ্ঠ দোয়াটা করব, আল্লাহ দুনিয়াতে কল্যাণ দাও আখেরাতে করলাম দাও জাহান্নাম থেকে বাঁচিয়ে দাও। এর ভিতর সব দোয়া আছে নাকি নাই?
আছে।
এর ভিতরে দুনিয়ার সব দেওয়া আছে আপনার মেয়ের বিয়ে হওয়া টা কি কল্যাণ নয়। আপনার বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে মামলা থেকে বেঁচে যাওয়া টাকি কল্যাণ এর ভিতরে আছে না। ছেলের ভিসাটা লাগতেছে না আল্লাহ এই ব্যবস্থাটা করো দুনিয়ার কল্যাণ এর ভিতরে কি আছে না। কোনটা নাই, আপনি আপনার দিলে দুনিয়ার কোন কল্যাণ টা আপনি চাচ্ছেন, সেটা রেখে ওইযে রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানা, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানা, ওয়াকিনা আজাবান্নার পড়েন দোয়ায়ে মাসুরা হিসেবে, আল্লাহ তাআলা সেটা দিবেন আপনি পেয়ে যাবেন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখানে এখতিয়ার দিছেন, ও আল্লাহর বান্দা তুমি এবার আল্লাহর কাছে মন খুলে যা চাওয়ার চেয়ে নাও সুবহানাল্লাহ।
কারণ দুরুদ পড়ার পরে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়। আপনাকে এখতিয়ার আর দিয়েছে দুরুদ পড়ার পরে। সাহাবী বলেছেন নামটা মনে নেই, যে রসুল সা. এর সাথে মসজিদে নামাজ পড়লাম, আবু বক্কর ওমর তিনজন হাজির নামাজের পরে বসে আছি দোয়া দুরুদ তসবি। একপর্যায়ে আমি কয়েক মর্তবা দুরুদ শরীফ পড়লাম দুরুদ শরীফ পড়ে এবার আমি আল্লাহর কাছে হাত তুললাম আমি ব্যক্তিগতভাবে দোয়া শুরু করলাম আল্লাহর হাবিব হয়তো আমার দিকে খেয়াল রেখেছেন।
যখন তিনি দেখলেন আমি আল্লাহর কিছু প্রশংসা করলাম সালাতের পরে তাজবি পড়লাম তারপর রাসুলের উপর দুরুদ পরলাম তারপরে আমি এবার দোয়া করতে থাকলাম রসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেছে তুমি সিস্টেম ঠিক রেখেছো, এখন তুমি যা চাইবে তাই পাবে।
তুমি চাও চাও বেশি করে চাও, কারণ দুরুদ হচ্ছে আল্লাহর কাছে এমন প্রিয় একটি জিনিস। এটা পড়ার পরে আল্লাহ তাআলার রহমত দিয়ে ঢেকে দেয়। এর জন্য নামাজের মাঝে দোয়া মাসুরার জায়গায় রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম এর বর্ণিত যে হাদীসগুলো আছে সেগুলা পড়বেন আর যদি আপনি এর বাহিরে গিয়ে কিছু পড়তে চান সুযোগ আছে।
আমি তখন স্কুলের টিচার ভাইকে বললাম এমনত হতে পারে, ইমাম সাহেব ওই হাদিসটা পড়ছে, উনি জানে যে আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি আমি বাধ্য নই।
রাসুল সাঃ আমাকে এখতিয়ার দিয়েছে, উনি ভাবসে লম্বা নামাজ 20 রাকাত তারাবি নামাজ পড়ছি পড়ছি সব সুন্দর এখানেও যদি লম্বা টা পড়ে সময় বেশি লাগবে ছোট একটা পড়ি সময় কম লাগবে অধিকার তো আছে উনি দুরুদ শরীফ শেষ করে বললেন আল্লাহুম্মাগফিরলি ওয়ারহামনি।
অসুবিধা তো নাই উনি ছোট দোয়া আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দাও আমার উপর রহম করো। শুধু এটুকুই হয়ে গেল না রাসূল সাঃ অধিকার দিয়েছেন আপনার মনে যেটা চাই আপনি সেটা দোয়া করুন। কিন্তু যে দোয়ায়ে মাসুরা আপনি পড়ছেন এটা যদি আপনি পরেন কোন অসুবিধা নাই, কিন্তু এটা কি একমাত্র দোয়া হিসেবে নির্ধারণ করা যাবে না।
এবার আপনি সালাম ফিরালেন, এখন সালাম ফিরানোর পরে ইমামের করণীয় কি?
মনে রাখবেন সালাম ফিরানোর পরে নামাজ শেষ। আমরা যে সালাম ফিরানোর পরের দোয়া পড়ে পার্সোনালি দোয়া করি সবাই মিলে দোয়া করি এগুলা কি নামাজের অংশ?
না, এগুলো নামাজের অংশ না, সালাম ফিরিয়েছেন নামাজ শেষ। হাদিস হলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন তাকবিরে তাহরীমার মাধ্যমে নামাজ শুরু। তুমি নামাজে প্রবেশ করবা তাকবিরে তাহরীমা দিয়ে, আল্লাহু আকবর’ বলার সাথে সাথে দুনিয়ার সাথে আর সম্পর্ক রাখা আর যাবে না। তুমি আল্লাহর হয়ে যাও। এখন থেকে তোমার দুনিয়ার কারো সম্পর্কে আর নাই, তোমার বাবা এসে যদি জিজ্ঞেস করে কেমন আছো জবাব দেয়া যাবে,
না আর ভালো আছি।
মসজিদের ইমাম সাহেব আপনার মুরুব্বি আপনি নামাজে দাড়িয়ে আছেন, আপনার কাছে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় বুঝে নাই যে আপনি নামাজে দাড়িয়ে আছেন। আসসালামু আলাইকুম সালাম দিসে, অলাইকুমুস সালাম বলা যাবে।
আপনার কি দুনিয়ার সাথে সম্পর্ক আছে সবকিছু শেষ। আপনি এখন শুধু আল্লাহর সুবহানাল্লাহ সুবহানাল্লাহ।
নামাজের থেকে শ্রেষ্ঠ ইবাদত আর নাই। কারণ বান্দা যখন নামাজে দাড়াই তখন আল্লাহর হয়ে যায়, আল্লাহর হয়ে যায়।
আমরা হই না কারণ আমরা থাকি নামাজে মন থাকে অনেক দূরে মন থাকে ভাতের পাতিলে মন থাকে, এখানে সেখানে আমরা আল্লাহর হতে পারিনি। যার কারণে আমরা নামাজের মজা পাই না। নবী মোহাম্মদ নামাজে দাঁড়াতেন দুই পা ফুলে যেত, কিভাবে সম্ভব। পা ফুলে গেছে, এমন রুকু দিতেন যে সিজদার কথা ভুলে গেছ্ এমন সেজদা দিচ্ছে, মা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন আমি মনে করি এই বুঝি মারা গেছে, উঠে না কেন।
আমি পায়ের মাঝে চিমটি কাটলাম, চিমটি দিলে পা নাড়া দিতেন। তখন বুঝতাম যে মারা যায়নি কিভাবে সম্ভব কারণ নামাজে দাঁড়াইয়া আল্লাহর সাথে একাকার হয়ে যায়, এমনভাবে পড় তুমি যেন আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছ। সুবহানাল্লাহ।
আমার ভাইয়েরা, এখন তাকবীর আপনি নাম আবার যখন সালাম ফিরিয়ে ফেলবেন নামাজ শেষ। তাহরিম তাহলিল, তাহারিম মানে হারাম করা তাহলীল মানে হালাল করা। যখনই আপনি সালাম ফিরিয়ে ফেললেন, আপনি এবার কথা বলা একটু পান হওয়া এবার আপনি সালামের জবাব দেয়া এবার আপনি দুনিয়ার বৈধ যত কাজ সব আবার জায়েজ হয়ে গেছে
আমার ভাইয়েরা সালাম ফিরালেন তাহলিল হয়ে গেল। সালাম ফিরানোর মাধ্যমে নামাজ শেষ, কিন্তু বড় পরিতাপ বড় পরিতাপ আমাদের দেশে মুসল্লিদের জন্য, সালাম ফিরানোর পরেও তারা নামাজ শেষ করে না, রাসুল সাঃ বলেছেন শেষ। তারা মুখে মুখে কয় হুজুর হুজুর আপনার সাথে একমত কিন্তু ইমাম যদি মোনাজাত টা না করে চাকরিটা থাকেনা।
এটা নিয়ে দরকার হলে মারামারি করব মাথা ফাটানো যায় দুই পক্ষ বেশি করে ফাঠাও বেশি হইবো। অথচ মুখে বলে সালাম ফিরালে নামাজ শেষ। তাহলে বুঝা গেল সালাম ফিরানোর পরে যা করলেন ওইটা নামাজের অংশ না। তাহলে সেটা নিয়ে ঝগড়া কেন?
এখন সালাম ফিরানোর পরে আমরা কি করব?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেটা করেছেন সেটাই করব। সালাম ফিরানোর পর বিশ্ব নবী কি করতেন, সালাম ফিরানোর পরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দিকে ঘুরে বসতেন, এই সুন্নাহ আমাদের দেশে মারা গেছে। আমরা শুধু আসরের নামাজ এবং ফজরের নামাজে ফিরে বসি, অথচ এটা না।
হযরত সামুরা বিন যনদুব বলেন, সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ৭৯৭, নাসিঈ হাদিস নং ১৩৩৭। রাবিয়ি হলেন, হযরত সামুরা বিন যনদুব তিনি বলেন
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামাজ পড়তেন, নামাজ শেষ করে বা সালাম ফিরিয়ে আমাদের দিকে ফিরে বসতেন।
অন্য হাদীসে পাওয়া যায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফিরানোর পরে ডান দিকে ফিরে বসতেন এজন্য সাহাবারা ডান পাশে বসা বেশি পছন্দ করতেন এজন্য সাহাবারা ডান দিকে দোড়িয়ে এসে ডান দিকে জায়গা নিতেন, যেন ফিরিয়ে যেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চোখটা যেন আমার চেহারার উপর সবার আগে পরে। সুবহানাল্লাহ
আল্লাহর হাবিব আমাদের দিকে ফিরে বসতেন, কিন্তু আমাদের তো অনেক ব্যস্ততা আমাদের এত সময় কই, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম না হয় বেকার ছিলেন কোন কাম-কাজ ছিল না। ঠিক না ……..
আমরা তো ব্যস্ত, মহাব্যস্ত। চা এর দোকানে বসে গল্প করার মত অনেক সময় আমাদের আছে। নামাজ শেষ করে ধীর-স্থিরভাবে কিছু তাসবিহ পড়বো সময় নাই। কিন্তু নামাজ শেষ করে মসজিদের বাহিরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গল্প করার অনেক সময় হাতে আছে। আমরা ফজর আর আসর নামাজ কে বেছে নিলাম, কারন এটাতে সুন্নাত নামাজ পড়ে নাই। অন্য নামাজের পরে সুন্নত আছে, তাই তাড়াহুড়া করলাম। অন্য নামাজের পরে সুন্নত আছে তাই আপনি টের পাইলেন, নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম টের পান নাই।
আপনি শুধু বুঝলেন শরীয়ত, অথচ শরীয়ত প্রণেতা যিনি। রাসুল (সাঃ) এর মত মহাব্যস্ত কে আছে, ১১জন নারীর স্বামী দুইজন মারা গেছেন ৯ জন একসাথে আছে, নয়টা পরিবার সামলাতে হবে মদিনার প্রেসিডেন্ট দেশের প্রধান নয় তো শুধু, বিচার-আচার লাগলে তা আবার কে করে। উনি আবার মদিনার প্রধান বিচারক বটে।আবার যুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধের প্রধান সেনাপতি কে?
এখন আবার সেক্টর আলাদা দেশের, দেশ চালায় প্রধানমন্ত্রী কবর জিয়ারত করেন আব্দুল হামিদ ঠিক উনি প্রেসিডেন্ট। আবার বিচারের জন্য প্রধান বিচারপতি যুদ্ধের জন্য আছে প্রধান সেনাপতি সেক্টর আলাদা। কিন্তু বিশ্বনবী সেক্টরের প্রধান, তারপর নামাজ দাড়ালে সময় চলে যায় তাড়াহুড়া নাই।
নামাজ শেষে কি দোয়া পড়তেন?
সালাম ফিরেয়ে ফিরে বসে। তারপরে ফিরে বসার পরে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পড়তেন আল্লাহু আকবার, কি পড়তেন?
আল্লাহু আকবার পড়তেন।
তারপর পড়তেন
اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَالإِكْرَامِ
ইবন আব্বাস বলেন, আমরা যারা নামাজের পরে আসতাম কোন দিন দেরি দেরি হয়ে গেছে এসে দেখি জামাত পাব কি পাব না নাকি শেষ এর দিকে মসজিদের বাহিরে থাকলে যদি সবার মিলে আল্লাহু আকবার শব্দটা শুনতাম তাহলে বুঝতাম নামাজটা শেষ হয়ে গেছে। শুধু আল্লাহ আকবার ইমাম বলবে, বুজেছি নামাজ চলছে।
ইমাম আল্লাহু আকবার বলছে, কিন্তু যখন সবাই মিলে একসাথে বলে আল্লাহু আকবার বুঝতে হবে সালাম ফিরেয়ে ফেলছে।
রাসুল সাঃ এর নামাজ শেষ এটা আমরা বুঝতে পারতাম। সালাম ফিরানোর মাধ্যমে সহিঃ মুসলিম হাদিস নম্বর ১২০৩। আল্লাহর রাসূল সাঃ একবার আল্লাহু আকবার পড়তেন আর আস্তাগফিরুল্লাহ আস্তাগফিরুল্লাহ আস্তাগফিরুল্লাহ তিনবার পড়তেন। নামাজটা যেভাবে পড়া দরকার সেভাবে পড়তে পারিনি ও আল্লাহ্ তোমার কাছে ক্ষমা চাই।
কি চিন্তা,সালাম ফিরিয়ে আল্লাহ তোমার কাছে ক্ষমা চাই আল্লাহ তোমার কাছে ক্ষমা চাই, আপনার মনে যদি এই অনুভূতি টা থাকে, যে আপনি নামাজটা সাধ্য পরিমাণ ভালো করার চেষ্টা করছেন আপনার সাধ্যের আলোকে নামাজ পড়ার পর সালাম ফিরিয়ে। আপনি আল্লাহর কাছে বলেন, আল্লাহ ক্ষমা চাই।
আরে ভাই আমারে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আপনি হরেক রকমের তরকারি রান্না করে খাওয়াইছেন আমি দেখেছি আপনার খেদমতে কোনো ত্রুটি নাই যতটা দরকার সব করেছেন। আমার হাত ধোয়ার জন্য গরম পানি খাওয়ার জন্য গরম পানি, তোয়ালে টিস্যু যা দরকার খাবার-দাবার একবারে বিনয়ের সাথে খাওয়ায়।
আমার গরম পানি দিয়ে আবার হাতটা ধুয়ে আপনি বলতেছেন হুজুর হুজুর আসলে পারি নাই মাফ করে দিয়েন।
আপনার খাবারের চেয়ে বিনয় দেখে খুশি হব বেশি। আরে ভাই আমারে এরকম খাওয়ানোর আরও কতজন আছে এটা শুধু বললাম উদাহরণ এর জন্য।
আমারে আপনার চেয়ে বেশি খাওয়া হইছে এরকম লোক ও আছে কিন্তু আমি খাবার দেখে এতটা বেশি খুশি না, কিন্তু কিন্তু আপনার বিনয় দেখে আমি এর চেয়ে বেশি খুশি আর পেটটা ভরে গেছে। আপনি যদি শুটকি দিয়ে খাওয়াইলেও আমি খুশি হয়ে যেতাম, এই বিনয় টা দেখে। আর আপনি যদি এক তরকারি না ১৫/২০তরকারি খাওয়াইছেন আপনি বলেন হুজুর এই খাবার জীবনে দেখছেন।
অথবা আপনি এমন একটা ভাব দেখাচ্ছেন যে এটা না বললেও এটা বাদ দিয়ে বুঝাইতেছেন এই হুজুর আরেক টুকরা দেশী মুরগী দেশি মুরগী হুজুরের জন্য হুজুররা এইগুলো…….. বুঝেন নাই ব্যাপারটা।
আপনি আপনার ছেলেকে বলতেছেন বড় টুকরা টা দে এটাতো বঙ্গোপসাগর থেকে ধরে নিয়ে আসছি মাছ এমন মাস কি সচারচর হুজুর দেখে কোনদিন আমি আপনার এই মাছ খাইলে বদহজম হবে আমার মন চাবে যেন বমি করে দেই আমি আপনার উপর বিরক্ত আমার দরকার নাই, আপনাকে মনে মনে আমি বেয়াদব বলব ঠিক কিনা।
আপনি নামাজ পড়ার পর যদি ভাবেন আমাকে বেহেশত না দিয়ে, দেয় কাকে?
আল্লাহ আপনার নামাজ চেহারার দিকে ফিরিয়ে দিবেন, তোর নামাজ আমার প্রয়োজন নাই।
আর যদি আপনি আপনার নামাজটাকে সুন্দর করে শেষ করে বলেন, আস্তাগফিরুল্লাহ আপনার মনে অনুভূতি থাকে। আল্লাহ যে ভাবে পড়া দরকার সেভাবে পড়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাই, আর আল্লাহর কাছে বিনয় লোক খুব বেশি পছন্দের।
বিশ্ব নবী সালাম ফিরাই কি পড়তেন?
এজন্য বিশ্ব নবী সালাম ফিরাই কি পড়তেন?
আল্লাহু আকবর আর তিনবার আস্তাগফিরুল্লাহ পড়তেন এই সুন্নত বাংলাদেশ মরে গেছে এই সুন্নত গুলো মরে গেল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পড়তেন নামাজের সালাম ফিরেয়ে পড়তেন, ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ তেত্রিশ বার আলহামদুলিল্লাহ্ ৩৪ বার আল্লাহু আকবার এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পড়তেন আয়াতুল কুরসি, আয়াতুল কুরসি পড়বেন।
হাদীসে পাওয়া যায় আবু উমামা বলেন আল্লাহর হাবীব বলেন নাসাঈ এর হাদিস দ্বারা হাদিস আল্লাহর হাবীব বলেছেন, যে ব্যক্তি ফরজ, ফরজ নামাজের পর আয়তুল কুরসী পড়বে তার জান্নাতে যাওয়ার পথে বাধা হবে তার মৃত্যু সুবহানাল্লাহ সুবহানাল্লাহ এখন আয়তুল কুরসী কখন আপনি না ব্যস্ত সময় কই আল্লাহর হাবিব আর কত দোয়া পড়তেন, আপনার নামাজ সুন্দর আপনার ইসলাম সুন্দর।