Q/AAbdullahil Hadi

নতুন জামা-কাপড় ধৌত করা ছাড়া পরিধান করা

বাজারের নতুন জামা-কাপড় ধৌত করা ছাড়া পরিধান করে কি সালাত শুদ্ধ হবে?
বাজারের নতুন জামা-কাপড় কি ধৌত করা জরুরি? অর্থাৎ তা ধৌত ব্যতিরেকে পরিধান করলে কি তাতে সালাত শুদ্ধ হবে?
নতুন জামা-কাপড় পরিধানের পূর্বে সুন্নত হল, দুআ পড়া। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা শিক্ষা দিয়েছেন। দুআটি হল,

اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ كَسَوْتَنِيهِ، أَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِهِ وَخَيْرِ مَا صُنِعَ لَهُ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهِ وَشَرِّ مَا صُنِعَ لَهُ»
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা লাকাল-হামদু আনতা কাসাওতানীহি। আসআলুকা মিন খইরিহি ওয়া খইরি মা সুনিআ’ লাহু। ওয়া আঊ’যু বিকা মিন শাররিহি ওয়া শাররি মা সুনিআ’ লাহু।
অর্থ: “হে আল্লাহ্! সব প্রশংসা আপনারই জন্য। আপনিই আমাকে এ পোশাক পরিয়েছেন। আমি আপনার কাছে এর কল্যাণ ও এটি যে উদ্দেশ্যে তৈরি হয়েছে তার কল্যাণ প্রার্থনা করি। আর আমি এর ক্ষয়-ক্ষতি এবং এটি যে জন্য তৈরি করা হয়েছে তার ক্ষয়-ক্ষতি থেকে আপনার আশ্রয় চাই।’ (আবু দাউদ, সহিহুল জামে/৪৬৬৬)

যদি নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে, নতুন কাপড়ে কোনও নাপাকি লেগেছে অথবা তাতে বাহ্যিকভাবে নাপাকি দেখা যায় তাহলে তা ধৌত করা জরুরি। অন্যথায় সালাত শুদ্ধ হবে না।

মোটকথা, নতুন জামা-কাপড়ে যদি বাহ্যিকভাবে কোনও নাপাকি লেগে না থাকে বাহ্যত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেখা যায় তাহলে তা শরয়ী দৃষ্টিতে পবিত্র বলেই গণ্য হবে। সুতরাং সালাতের জন্য তা ধৌত করা জরুরি নয়। কেননা ইসলামি ফিকহের একটি প্রসিদ্ধ মূলনীতি হল, الأصل في الأشياء الطهارة “বস্তুর আসল হল, পবিত্র হওয়া।” সুতরাং বিনা দলিলে তাকে নাপাক বলা যাবে না।

স্বাস্থগত দিক থেকে নতুন জামা কাপড় ধোয়ার গুরুত্ব:
স্বাস্থ্য নিরাপত্তার স্বার্থে বাজারের জামা-কাপড় ধৌত করা ছাড়া পরিধান করা উচিৎ নয়। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীগণ এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন। তারা বলেন, চকচকে হলেও নতুন পোশাক না ধুয়ে পরা উচিত নয়। কেননা এতে নানাবিধ ক্ষয়-ক্ষতি হতে পারে।

নতুন কাপড় না ধুয়ে পরার ক্ষতিকর দিকসমূহ:

১. ত্বকে র‍্যাশ দেখা দেওয়া:
প্রায়শই শপিং মল কিংবা দোকানে জামা-কাপড় ঝুলানো অবস্থায় দেখা যায়। কাপড়ে যাতে ছত্রাক এর আক্রমণ না ঘটে সেজন্য ফরমালডিহাইডের মতো রাসায়নিক ছড়িয়ে দেয়া হয় অনেক সময়। ওই জামা পরলে স্পর্শকাতর ত্বকে র‍্যাশ দেখা দিতে পারে।

২. বিভিন্ন চর্মরোগে আক্রান্ত হওয়া:
সুন্দর পোশাকটি আপনার কাছে আসার পূর্বে অনেক মানুষের ছোঁয়া লাগে। তৈরি থেকে শুরু করে প্যাকেট করা বা দোকানের সেলস ম্যান অর্থাৎ বহু মানুষের হাতের স্পর্শ লেগে যায় কাপড়ে। এর মধ্যে অনেকেই চর্ম রোগে আক্রান্ত থাকতে পারে। এই রোগের জীবাণু পোশাকে লেগে যেতে পারে এবং আপনি সহজেই উক্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে যেতে পারেন।
তাই অবশ্যই নতুন পোশাক ভালো করে ধুয়ে তারপর পরুন।

৩. ত্বকের ক্যান্সারের ঝুঁকি:
শুধু অন্যের হাতের ছোঁয়াই নয়, পোশাককে নিখুঁত ভাবে আপনার সামনে উপস্থাপন করতে নানারকম রাসায়নিক ও রং ব্যবহার করা হয়। এই উপাদান আপনার ত্বকের অনেক ক্ষতি করতে পারে। এই রাসায়নিকের কারণে সামান্য চুলকানি বা রেশ থেকে শুরু করে ত্বকের ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।

৪. উকুন এর বিস্তার ঘটা:
নতুন পোশাক থেকে উকুন এর বিস্তার একটি সাধারণ বিষয়। যেসব দোকানে বিশেষ করে পোশাক ট্রায়াল করে কেনার ব্যবস্থা আছে সেখানে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।

৫. অন্যের শরীরের জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হওয়া:
পোশাক ট্রায়াল এর সময় অনেক ক্রেতা ঘামে ভেজা শরীরে ট্রায়াল দিয়ে চলে যায়। পরে আপনি যদি সেই পোশাকটিই কিনে আনেন এবং না ধুয়েই পরেন তাহলে আগে ট্রায়াল দেওয়া মানুষটির শরীরের রোগ জীবাণু আপনার শরীরে চলে আসতে পারে। আপনিও তার শরীরে থাকা জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়ে যেতে পারেন।
নতুন কাপড়ে বিভিন্ন ধরণের ক্ষতিকর ডাই ও কেমিক্যাল থাকতে পারে যা ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। তাই সুস্থ থাকার জন্য কেবল নতুন পোশাক নয়, নতুন তোয়ালে থেকে শুরু করে মোজা পর্যন্ত সবকিছুই ব্যবহারের আগে ভালভাবে ধুয়ে তারপর পরিধান করুন এবং জীবাণু ও কেমিক্যাল এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। [source: daktarbhai]

সরাংশ:
নতুন পোশাকে স্পষ্ট নাপাকি পরিলক্ষিত না হলে বা তাতে নাপাকি লেগেছে তা নিশ্চিতভাবে জানা না গেলে ধৌত করা জরুরি নয়। বরং তা বাহ্যিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে ‘পবিত্র’ বলে ধতর্ব্য হবে। বিধায় ধৌত করা ছাড়াই তাতে সালাত শুদ্ধ হবে। তবে স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায় বাজারের নতুন জামা-কাপড় ভালভাবে ধৌত করা ছাড়া পরিধান না করাই নিরাপদ।

আল্লাহু আলাম।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture