Writing

ধূমপানের শরঈ বিধান : মূলনীতি ও বিশ্লেষণ

ধূমপানের শরঈ বিধান : মূলনীতি ও বিশ্লেষণধূমপান বর্তমান যুগের বড় সমস্যাগুলো একটি। ধূমপানের ফলে সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সমাজে বিভিন্ন রােগ-ব্যাধি দেখা দিচ্ছে। ধূমপায়ীরা ধীরে ধীরে রােগাক্রান্ত হচ্ছে। ধূমপান তাদের অন্তর দুর্বল ও শক্তি ক্ষয় করে দিচ্ছে। ধূমপান “নীরব ঘাতক” এ ব্যাপারে এখন কারাে দ্বিমত নেই। যারা মৃত্যুশ্বাস ধূমপান গ্রহণ করেন তাদের অবশ্যই নীরব ঘাতক ধূমপান বা তামাক সম্পর্কে জানা প্রয়ােজন, কারণ ধূমপান তাদেরকে ধীরে ধীরে কবরে নিয়ে যাচ্ছে বা রােগ-শােকের দুঃসহ ও অভিশপ্ত জীবন বয়ে আনছে তাদের জন্য। অধূমপায়ীদের জন্য শুভ বার্তা যে, আল্লাহ তাদেরকে ধূমপানের বিপদ থেকে রক্ষা করেছেন।

ধূমপানের ফলে সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সমাজে বিভিন্ন রােগ-ব্যাধি দেখা দিচ্ছে। ধূমপায়ীরা ধীরে ধীরে রােগাক্রান্ত হচ্ছে। ধূমপান তাদের অন্তর দুর্বল ও শক্তি ক্ষয় করে দিচ্ছে। ধূমপান “নীরব ঘাতক” এ ব্যাপারে এখন কারাে দ্বিমত নেই। যারা মৃত্যুশ্বাস ধূমপান গ্রহণ করেন তাদের অবশ্যই নীরব ঘাতক ধূমপান বা তামাক সম্পর্কে জানা প্রয়ােজন, কারণ ধূমপান তাদেরকে ধীরে ধীরে কবরে নিয়ে যাচ্ছে বা রােগ-শােকের দুঃসহ ও অভিশপ্ত জীবন বয়ে আনছে তাদের জন্য। অধূমপায়ীদের জন্য শুভ বার্তা যে, আল্লাহ তাদেরকে ধূমপানের বিপদ থেকে রক্ষা করেছেন।

শরীয়তের দৃষ্টিতে ধূমপান :
ধূমপায়ীরা সাধারণত একথা বলে যে, কুরআন ও হাদীসে ধূমপান নিষিদ্ধ হওয়ার কোনো প্রমাণ নেই। অথচ কুরআনের একাধিক আয়াত ও হাদীসের একাধিক ভাষ্য মতে প্রমাণিত হয় যে, ধূমপান নিষিদ্ধ।
কারণ ধূমপানের কারণে নানা ধরণের প্রাণনাশী রোগ-ব্যাধি হয়ে থাকে। তাছাড়া বিড়ি ও সিগারেটের প্যাকেটেও লেখা থাকে “ধুমপান মৃত্যু ঘটায়”।
যা একটি সুস্থ জীবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।

আল্লাহ তা’আলা বলেন- “তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না।”
[সূরা বাকারাহ : ১৯৫]

অন্য আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন- “তোমরা নিজেরাই নিজেদেরকে হত্যা করো না।”
[সূরা নিসা: ২৯]

উক্ত আয়াতদ্বয়ের মাধ্যমে আল্লাহ তা’য়ালা আত্মহত্যাকে নিষিদ্ধ করেছেন। আর জেনেশুনে ধূমপান করা মানে এক ধরণের আত্নহত্যা করা।

ধূমপান কুরআনে বর্ণিত নিষিদ্ধ খবিস বস্তুর অন্তভুর্ক্ত। ধূমপানে রয়েছে বিভিন্ন রোগের উপাদান। আল্লাহ তা’আলা বান্দার ওপর পবিত্র খাদ্য-পানীয় হালাল করেছেন। অপবিত্র ও খারাপ বস্তু তিনি বান্দার ওপর হারাম করেছেন। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন- “তারা তোমাকে প্রশ্ন করে, তাদের জন্য কি বৈধ করা হয়েছে? বল, তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে সব ভাল বস্তু।”
[ সূরা মায়েদাহ:৪, ৫ ]

অন্যত্র আল্লাহ তা’আলা রাসূল (সা.) এর গুণাগুণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন- “যে তাদেরকে সৎ কাজের আদেশ দেয় ও নিষেধ করে অসৎ কাজ থেকে এবং তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করে আর অপবিত্র বস্তু হারাম করে।”
[ সূরা আরাফ, আয়াত : ১৫৭ ]

অতএব, সর্বপ্রকার ধূমপান খবিস বস্তুর অন্তভুর্ক্ত। অনুরূপ সকল প্রকার নেশাদ্রব্য বিক্রয় করা খবিস কর্মের অন্তভুর্ক্ত। তাই ধূমপানের ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবসা-বাণিজ্য মদের মতই হারাম

তামাকদ্রব্য মাকরুহ না, হারাম?
মহান আল্লাহ তা’আলা সমস্ত খাদ্যদ্রব্যকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন। যথা-
১. হালাল,
২. হারাম।

মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন – “হালাল ও হারাম কখনো এক নয়।”
[সূরা মায়েদাহ: ১০০]

এ মর্মে নু’মান বিন বাশীর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল (সা.)কে বলতে শুনেছি যে, “হালাল স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট। আর এ দু’য়ের মাঝে রয়েছে সন্দেহজনক কিছু বস্তু।”

অন্যত্র রাসূল (সা.) বলেন- “যে ব্যক্তি সন্দেহজনক বিষয়ে পতিত হল, সে যেন হারামেই পতিত হল।”
[সুনানে আবু দাউদ : ৩৩৩০, সুনানে ইবনে মাজাহ : ৩৯৪৮ ]

উল্লেখিত কুরআন এবং হাদীসের দলিল দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, বিড়ি , সিগারেট, তামাক, জর্দা হালাল নয়, বরং তা স্পষ্টই হারাম।

এ মর্মে মহানবী (সা.) বলেন- “যাবতীয় নেশা সৃষ্টিকারী বস্তু মাদক (খামার)। আর যাবতীয় নেশা সৃষ্টিকারী বস্তুই হারাম।”
[সহিহ মুসলিম : ২০০৩, সুনানে ইবনে মাজাহ : ৩৩৯০, মিশকাত : ৩৬৩৮ ]

রাসূল (সা.) আরো বলেন- “যা অধিক সেবন করলে নেশার সৃষ্টি হয় তা কম সেবন করাও হারাম।”
[ তিরমিযি : ১৮৬৫, আবু দাঊদ : ৩৬৮১ ]

সুতরাং উপরোক্ত কুরআন ও হাদিসের আলোচনা থেকে বলা যায় যে, ধূমপান কোনভাবেই হালাল হতে পারে না।এটি হারামের অন্তভুর্ক্ত।

তাছাড়া বিড়ি, সিগারেট পুষ্টিকর কিংবা ক্ষুধা নিবারণ করারও কিছুই নয়। জাহান্নামীদের খাবার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে আল্লাহপাক বলেন, “এটা তাদের পুষ্টিও যোগাবে না ক্ষুধাও নিবারণ করবে না।”
[সূরা গাশিয়াহ : ৭]

কুরআন ও হাদিসের উৎসারিত মূলনীতির আলোকে ধূমপান যে হারাম; তার মধ্যে থেকে অন্যতম কয়েকটির সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নে আলোচনা করা হলো :

মূলনীতি- ১
‘নিকৃষ্ট, খারাপ ও অপবিত্র বস্তু মুমিনদের জন্য নিষিদ্ধ।’
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন:
“তাদের জন্য উত্তম-উপাদেয় বস্তুসমূহ হালাল করা হয়েছে আর হারাম করা হয়েছে নিকৃষ্ট-খারাপ বস্তুসমূহ।” [ সূরা আরাফ, আয়াত : ১৫৭ ]

পৃথিবীর কোন সুস্থ বিবেক সম্পন্ন মানুষ স্বজ্ঞানে বিড়ি-সিগারেটকে উত্তম উপাদেয় বা উপকারী বস্তুর অন্তর্ভুক্ত করবেন না। বরং সর্ব সম্মতিক্রমেই এটা নিকৃষ্ট, খারাপ ও অপবিত্র জিনিসের অন্তর্ভুক্ত।

মূলনীতি- ২
‘ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের ও অন্যের ক্ষতি করা বৈধ নয়।’
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন: “তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না।” [ সূরা বাকারাহ, আয়াত : ১৯৫ ] অর্থাৎ ইচ্ছাকৃতভাবে এমন কোন কাজে লিপ্ত হয়োনা যা তোমাদের ধ্বংস ও ক্ষতির কারন হয়।

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত:
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “অন্যের ক্ষতি করা যাবে না এবং নিজেও ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া যাবে না।” [ সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং- ২৩৪১ ]

অন্যত্র রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন প্রতিবেশীকে (পার্শ্ববর্তী ব্যক্তিকে) কষ্ট না দেয়” [ সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৮৩ ]

ধূমপান যে কোন ধরনের কল্যান বয়ে আনেনা। বরং এটা যে, ধূমপায়ী ও তার আশপাশের মানুষের জন্য অত্যন্ত ক্ষতির কারন তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। যে কোন সচেতন মানুষ মাত্রই এ ব্যাপারে অবগত।

মূলনীতি- ৩
‘অপচয় ও অপব্যয় করা নিষেধ।’
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, “নিশ্চয় অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই আর শয়তান তার রবের ব্যাপারে কুফুরী করেছে। [ সূরা বনী ইসরাইল,আয়াত : ২৭ ]

অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, “তোমরা (তোমাদের জিম্মায় থাকা/পোষ্য) নির্বোধদের (বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি) হাতে সম্পত্তি অর্পণ করোনা” [ সূরা নিসা, আয়াত : ৫ ]

অর্থাৎ যাতে করে তাদের নির্বুদ্ধিতার কারনে আল্লাহর দেয়া এই সম্পদের অপচয় ও অপব্যবহার না হয়।

ধূমপানের বিষয়টা আগাগোড়াই অপচয়। এর মাধ্যমে সময়, শারীরিক সক্ষমতা ও টাকা পয়সার অপচয় অপব্যবহার ছাড়া আর কোন ধরনের কল্যান নেই।
আল্লাহর দেয়া অন্যান্য নেয়ামতের পাশাপাশি শারীরিক সক্ষমতা, টাকা পয়সার অপচয় ও অপব্যবহার কোরআনে কারীমের বিভিন্ন আয়াতের আলোকেই নিষিদ্ধ।

আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি ও সম্পদকে শুধুমাত্র তার সন্তষ্টির জন্য শরীয়ত অনুমোদিত ক্ষেত্রগুলিতে ইসলাম সম্মত পন্থায় ব্যয় করতে হবে। এর অপব্যবহার করলে আল্লাহ পাকের সামনে কেয়ামতের দিন জবাবদিহি করতে হবে এবং তিনি ক্ষমা না করলে শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। এ সংক্রান্ত আয়াতসমূহ একত্রিত করে বিশ্লেষন করলে একটি নাতিদীর্ঘ পুস্তিকা রচনা করা যায়।

মূলনীতি- ৪
‘মুমিনদের জন্য দুর্গন্ধযুক্ত বস্তু পরিহার করা বাঞ্ছনীয়।’
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কাঁচা পেঁয়াজ, রসূন, কুররাছ (পেঁয়াজ জাতীয় একপ্রকার ফল) আহার করেছে সে যেন আমাদের মসজিদে (মসজিদে নববীতে) প্রবেশ না করে। কারণ যা দ্বারা মানুষের কষ্ট হয় (দুর্গন্ধের কারণে) ফেরেশতাদেরও তা দ্বারা কষ্ট হয়।” [ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং- ১৬৪৪ ]

অধিকাংশ ধূমপায়ীদের জামা কাপড় সহ শরীর থেকে যে গন্ধ আসে তা তাদের নিকটস্থ সুস্থ সাধারণ ব্যক্তিদের জন্য পীড়াদায়ক। যে কার্যকারণের ভিত্তিতে কাঁচা পেঁয়াজ, রসূন খেতে নিষেধ করা হয়েছে তা ধূমপানের ক্ষেত্রেও পূর্ণমাত্রায় উপস্থিত। তাই ইসলামী আইন শাস্ত্রের মূলনীতি অনুযায়ী ঐ একই বিধান অর্থাৎ হারাম হওয়ার বিষয়টা এক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

এবার আপনিই সিদ্ধান্ত নিন-
এই ধুমপান করবেন, নাকি ছাড়বেন?

আল্লাহ আমাদেরকে এ সর্বনাশা নিরব ঘাতক থেকে দূরে রাখুন।
আ-মি-ন।

লিখেছেন

Picture of আলী ওসমান শেফায়েত

আলী ওসমান শেফায়েত

জীবনের অসংখ্য পথ ও কল্পিত দর্শনের গোলকধাঁধার মধ্যে চিন্তা ও কর্মের, সরল ও সুস্পষ্ট রাজপথের সন্ধানে...

All Posts

জীবনের অসংখ্য পথ ও কল্পিত দর্শনের গোলকধাঁধার মধ্যে চিন্তা ও কর্মের, সরল ও সুস্পষ্ট রাজপথের সন্ধানে...

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture