দেজা ভ্যু কি, এ সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?
দেজা ভ্যু কী?
দেজা ভ্যু কথাটি মূলত ফরাসি ভাষা থেকে এসেছে (Déjà vu), যার বাংলা ‘ইতোমধ্যে দেখা’।
কোনও ব্যক্তির ক্ষেত্রে একটি পরিস্থিতি বা দৃশ্য দেখে হঠাৎ করে তা আগে থেকে পরিচিত মনে হওয়ার অনুভূতিই হচ্ছে দেজা ভ্যু। এক্ষেত্রে ঘটনা, দৃশ্য, অনুভূতিটি পরিচিত মনে হলেও ব্যক্তির মধ্যে তা নিয়ে একটি অনিশ্চয়তা কাজ করে।
যেমন:
আপনি হয়তো রাস্তা দিয়ে আপনমনে হাঁটছেন। চারপাশের বাড়িঘর, মানুষজন সবই আপনার অচেনা। হঠাৎ করে কোনও বাড়ি, মানুষ বা অন্য কিছু দেখে আপনার মনে হল, আপনি এটি আগে দেখেছেন। খুব চেনা চেনা লাগছে মানুষ বা জিনিসটি। অথচ, আপনি সত্যিই তা আগে কখনো দেখেন নি। বিজ্ঞানের ভাষায়, আমাদের হঠাৎ এই প্রতিক্রিয়ার নাম হল ‘দেজা ভ্যু’ (Deja Vu)।
পৃথিবীতে এমন লোক কমই আছেন যাদের এই অভিজ্ঞতা হয়নি। সাউদার্ন মেথোডিস্ট ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী অ্যালান এস. ব্রাউন ২০০৩ সালে তার এক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে বলেন, “পৃথিবীর ৭০ ভাগের বেশি মানুষ তাদের জীবনের কোনও না কোনও সময় এই পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করেছেন।”
দেজা ভ্যু সম্পর্কে বিভিন্ন ব্যাখ্যা:
দেজা ভ্যু বিষয়টি নিয়ে অনেক গবেষকই কাজ করেছেন। অতীতে থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত অনেকেই তাদের গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে নানা রকম ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ব্যাখ্যাগুলো বিশ্লেষণ সাপেক্ষে দেজা ভ্যু হওয়ার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় ‘প্রভাবক’ হিসেবে উঠে আসে। এগুলো হল:
- স্বপ্নের প্রভাব,
- অতীত স্মৃতির প্রভাব এবং
- মস্তিষ্কের প্রভাব।
- এক্ষেত্রে সব থেকে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যাটি হচ্ছে: “দেজা ভ্যু প্রক্রিয়াটি স্মৃতির সাথে সম্পর্কিত। একটি ধ্বনি যেমন হঠাৎ করে আমাদের জিহ্বার ডগায় চলে আসে, ঠিক তেমনি কোনও স্মৃতি হঠাৎ করেই আমাদের মানস পটে চলে আসতে পারে। কিন্তু এখানে সমস্যা হচ্ছে- জাগ্রত এই স্মৃতি পুরোপুরি একটি অবচেতন প্রক্রিয়া, অনেকটা স্বপ্নের মতো।
দেজা ভ্যু সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?
বাস্তবতা হল, ইসলামে মানুষের চিন্তা-ভাবনা, অনুভব, অনুধাবন, স্বপ্ন, কল্পনা ইত্যাদি বিষয়ে অনেক বক্তব্য এসেছে কিন্তু গবেষকদের মতে ‘দেজা ভ্যু’ সম্পর্কে কুরআন-সুন্নায় কোন তথ্য পাওয়া যায় না। এমন কি পূর্ববর্তী মুসলিম মনিষীগণও এ বিষয়ে কোন কথা বলেছেন বলে জানা যায় না।
আর যেমনটি আমরা দেখলাম যে, মনস্তত্ববিদ ও বিজ্ঞানীরাও এর মূল করণ উদ্ঘাটন বা এর রহস্য বিশ্লেষণে একমত হতে পারে নি। একেকজন একেকভাবে এর ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। তাতে প্রতীয়মান হয়, এই সৃষ্টি জগতের বহু কিছুই মানুষের জ্ঞানের বাইরে। মানুষের এখনো অনেক কিছু জানা বাকি।
তাইতো আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَمَا أُوتِيتُم مِّنَ الْعِلْمِ إِلَّا قَلِيلًا
“তোমাদেরকে সামান্য জ্ঞানই দান করা হয়েছে।”
(সূরা ইসরা: ৮৫)
যাহোক, এ ধরণের দেজা ভ্যু এর কারণে যদি শরিয়া বহির্ভূত কোন কাজ সংঘটিত না হয় তাহলে এতে কোন আপত্তি নাই। তবে যদি মানসিক বা স্মৃতি বিভ্রাটের কারণে অনিচ্ছা বশত: শরিয়া বিরোধী কোন কাজ ঘটে যায় তাহলে ইনশাআল্লাহ তার কোন গুনাহ হবে না।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
رَبَّنا لا تُؤاخِذنا إِن نَسينا أَو أَخطَأناّ
“হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা যদি ভুলে যাই কিংবা হঠাৎ অনিচ্ছাবশত: কোন ভুল করে ফেলি তবে আমাদেরকে ধরিও না।”
[সূরা বাকারা: ২৮৬]
তবে সচেতন হওয়ার সাথে সাথে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা ভালো।
আরেকটি বিষয় হল, মানসিক সুস্থতার জন্য আমাদের কর্তব্য, আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা। কেননা এটি বিরাট বড় একটি নিয়ামত। সেই সাথে কর্তব্য, সব ধরণের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা এবং অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থন করা।
আল্লাহ তাওফিক দান করুন।
আমীন।