দীনের পথে ফিরে আসায় মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে

এক বোন দীনের পথে ফিরে আসায় মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে…কুরআন পড়া, পর্দা পালন করা ইত্যাদি তার নিকট অতিরিক্ত কষ্টকর মনে হচ্ছে… এক বোন জানতে চেয়েছেন, তিনি যত বেশি আল্লাহ তায়ালার দিকে রুজু হন তিনি তত বেশি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি কুরআন তিলাওয়াত করতে পারছেন না। আর পর্দা করা তার জানের উপর জুলুম হয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় তার করণীয় কী?

দুআ করি, মহান আল্লাহ যেন উক্ত বোনকে সমস্যা থেকে মুক্তি দান করেন এবং দীনের পথে টিকে থাকতে সাহায্য করেন।
আমিন।
এ সমস্যার পেছনে বিশেষ কোন কারণ থাকতে পারে। সে জন্য তার অবস্থা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানা প্রয়োজন। যাহোক, এমনও হতে পারে যে, মানুষ যখন বিশেষ কোন একটা অবস্থার উপর দীর্ঘ সময় থাকে তখন সে অবস্থার সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়। ফলে হঠাৎ পরিবর্তন অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। নতুন পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানো সহজ হয় না। এতে মানসিকভাবে চাপ অনুভব করে। কিন্তু মনে রাখা আবশ্যক যে, আল্লাহর পথে টিকে থাকতে মনকে বাধ্য করতে হয়, মনের সাথে যুদ্ধ করতে হয় এবং এ জন্য আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করতে হয়। এভাবে কিছু দিন করতে পারলে ইনশাআল্লাহ সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে দৃঢ়ভাবে আশা করি।

যদি বেশি সমস্যা মনে হয়, তাহলে মনের উপর অতিরিক্ত প্রেশার না দিয়ে ধীরে ধীরে পরিবর্তনের পথে হাঁটতে হবে। মনে রাখতে হবে, জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর পথে ফিরে আসার বিকল্প নাই। তাই যত কষ্টই হোক তবুও পরম ধৈর্যের সাথে আখিরাতে প্রতিদানের আশায় তাঁর কাছেই আত্মসমর্পণ করতে হবে। তাহলে আল্লাহ তাআলা দীনের পথে টিকে থাকতে সাহায্য করবেন, গুনাহ মোচন করবেন এবং আখিরাতে মহা পুরস্কারে ভূষিত করবেন ইনশাআল্লাহ।

এ ক্ষেত্রে কিছু পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা:

১) বেশি বেশি শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা তথা আউযুবিল্লাহি মিনাশ শায়ত্বানির রাজীম (”বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি”) ও ইস্তিগফার (আসতাগফিরুল্লাহ “আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি”) পাঠ করুন।

২) অধিক পরিমাণে দরুদ (দরুদে ইবরাহিম-যা সালাতের শেষ বৈঠকে পাঠ করতে হয়) পাঠ করুন। এতে আল্লাহর তরফ থেকে বান্দার প্রতি অবারিত রহমত বর্ষিত হয়। আর বলার অপেক্ষা রাখে না, আল্লাহর রহমত ছাড়া দীনের পথে টিকে থাকা সম্ভব নয়।

৩) নামাজে সেজদা অবস্থায়-বিশেষ করে ভোর রাতে তাহাজ্জুদ সালাতের সেজদায় আল্লাহর নিকট ক্রন্দন করুন এবং আল্লাহর পথে টিকে থাকার জন্য সাহায্য প্রার্থনা করুন। দুআ মানুষের জীবনে অকল্পনীয় পরিবর্তন আনতে পারে।

৪) ফরজ সালাত, সিয়াম ইত্যাদি ফরজ ইবাদতগুলোর বাইরে যে সকল নফল ইবাদত করা সহজ মনে হয় এবং যে সব ইবাদতে মানসিকভাবে বেশি তৃপ্তি লাভ হয় সেগুলো বেশি করে করুন।

৫) পাশাপাশি অধিক পরিমাণে মহান আল্লাহর জিকির করুন। জিকিরের মাধ্যমে মনের অশান্তি, অস্থিরতা এবং মানসিক সমস্যা বিদূরিত হয় এবং অন্তরে পরম প্রশান্তি ও পরিতৃপ্তি জাগ্রত হয়।

৬) ভালো আলেমদের ঈমান ও তাকওয়া বৃদ্ধি, তওবা, পাপের ভয়াবহতা, মৃত্যু, কবরের অবস্থা, আখিরাতের বিভীষিকাময় পরিস্থিতি ইত্যাদি বিষয়ে বক্তব্য শুনুন বা এ সংক্রান্ত বই-পুস্তক পাঠ করুন।

৭) দীনের জ্ঞানার্জন করুন। কারণ দীনের সঠিক ইলম (জ্ঞান) ছাড়া দীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা কষ্টকর। জ্ঞানহীন আবেগ কখনো স্থায়ী হয় না।

৮) কুরআন তিলাওয়াতের চেষ্টা করুন (তরজমা ও তাফসির সহ পাঠ করা অধিক উপকারী)। তা সম্ভব না হলে অন্তত: পছন্দের কারীদের কুরআন তিলাওয়াত শুনুন।

৯) ভালো মহিলা আলেম বা সৎ, বিশ্বস্ত ও দীনদার বোনদের সাথে সম্পর্ক গড়ুন, তাদের সাথে কথা বলুন, সমস্যাগুলো শেয়ার করুন এবং তাদের নিকট পরামর্শ গ্রহণ করুন।

১০) প্রয়োজনে সমস্যাগুলোর বিষয়ে একজন ভালো ও বিশ্বস্ত আলেমের সাথে কথা বলুন।

১১) মানসিক সমস্যা বৃদ্ধি পেলে ভালো কোনও মানসিক ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

আল্লাহ আপনাকে সাহায্য করুন-এই দুআ করি।
আল্লাহু আলাম।

Exit mobile version