দাওয়াহ্ ……….. ???

দাওয়াহ্ ……….. ???
জ্বি ইসলামের দাওয়াতের কথায় বলছি।
আমরা যারা হঠাৎ করেই ইসলাম বুঝতে শুরু করেছি এক কথায় হিদায়াতের পথে রয়েছি বলে মনে করি তাদের একটা কমন প্রবলেম হলো সবাই কে দাওয়াত দেওয়ার চেষ্টা করি।
যেমন — নিজের বন্ধু বান্ধবী কে ফ্যামিলি মেম্বার কে যখন যেখানে যাকে পাই, হাদিস না হয় আয়াত শোনাতে শুরু করি।
আমি কাওকে দোষারোপ করছি না। আমি নিজের এক্সপিরিয়েন্স থেকেই বলছি। জানিনা আপনাদের সাথে এমন হয়েছে কি।

আসলে কাওকে হাদিস শোনানো যে খারাপ জিনিস সেটাও বলছি না। আল্লাহর দ্বীন প্রচার করা অনেক ভালো, আলহামদুলিল্লাহ্।
কিন্তু আমরা প্রথম প্রথম একটা ভুল করি তা হলো দাওয়াত দিতে গিয়ে এমন ভাবে বলি যেন আমরাই সত্যটা জানি সামনের জন কিছুই জানে না, বুঝে না………
তারা খারাপ কথা বললে আমরা চট্ করে রেগে গিয়ে অনেক কথা শুনিয়ে দিই। তর্কে জড়িয়ে পড়ি, এমনকি রাগের মাথায় অনেক অশ্লীল ভাষা (গালি) পর্যন্ত প্রয়োগ করে ফেলি।

গেলাম কি করতে, আর করলাম কি…!!
আমরা ভাবি ““ এই যে আমি একটা হাদিস শোনালাম ধুমপান হারাম তাও সে আমার সামনে স্মোকিং করেই যাচ্ছে। লোকটা ভারি বেয়াদব তোহ্, সত্য জানা সত্ত্বেও কথা শোনে না, ছিঃ জাহান্নামে যাবে এই লোক। ”’’

আবার অনেক ক্ষেত্রে আমরা কমেন্টে ও দেখতে পাই, কিছু ভাই হাদিস দিতে দিতে একসময় ধৈর্য্য হারিয়ে একে অপরকে গালাগালি দিতে শুরু করেছে।
থামুন…..!! ✋

একটা দীর্ঘ শ্বাস নিন, এক গ্লাস ঠান্ডা পানি খান। নিজের ব্লাড প্রেসার বাড়ানোর কোনো দরকার নেই।
একটা কথা মনে করুন তো …..
কয়েক মাস আগের কিংবা কয়েক বছর আগের কথা যখন আমি আপনি আল্লাহর অবাধ্য ছিলাম , কেউ যখন বলতো
““ এই তুমি মেয়ে হয়ে পর্দা করো না কেনো… এই ছেলে দাড়ি রাখবা আর ফজরে নামাজ আদায় করতে মসজিদে আসবা কাল থেকে, এসব ছেড়া জিন্স প্যান্ট পরবা না এগুলো হারাম….ব্লা! ব্লা! ”’’ ।

এবার ভাবুন আপনি কতোদিন এ এসব অভ্যাস ত্যাগ করেছেন, আপনি কি হঠাৎ করেই পারফেক্ট হয়ে গেছেন নাকি, কেউ যখন বলেছে নামাজ পড়ো !!
আমরা কি সাথে সাথে শুনে নিয়েছিলাম, নাকি তার কথা এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে অন্য কান দিয়ে বের করে দিয়েছিলাম….??

‌আজ আমরা বুঝতে শিখে গেছি বলে এটা নই যে আমরা অন্যকে হেও করবো, তুচ্ছ ভাববো। হতে পারে সে ও হেদায়াত প্রাপ্ত হবে , এমন ও হতে পারে তার কাছে এমন কোনো আমল আছে যার কারনে সে জান্নাত লাভ করবে। তাই কাওকে তাচ্ছিল্য করা আমাদের সাজে না।

‌একটা কথা বলি “ আপনি যদি দাওয়াত দিতে গিয়ে বিরক্ত , রাগান্বিত হয়ে যান তাহলে আপনার দাওয়াত দেওয়ার দরকার নেই, কারন দাওয়াত আপনার জন্য না।

আপনি দাওয়াত না দিয়ে আল্লাহর জিকির করুন, নিজের আমল করুন এটাই উত্তম আপনার জন্য।

‌আল্লাহর রাস্তায় দাওয়াত দিতে গেলে কিছু জিনিস আগে জানতে হবে আর তা আল্লাহর কিতাব থেকেই, তিনি আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন কিভাবে আমরা দাওয়াত দিবো।

‌আল্লাহ তাআলা বলেন

ادْعُ إِلِى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ
আপন পালনকর্তার পথের প্রতি আহবান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উপদেশ শুনিয়ে উত্তমরূপে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন পছন্দ যুক্ত পন্থায়। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তাই ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষ ভাবে জ্ঞাত রয়েছেন, যে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে এবং তিনিই ভাল জানেন তাদেরকে, যারা সঠিক পথে আছে।
‌[সূরা নাহল : ১২৫]

‌আল-আলা বলেন, আপনি দাওয়াত দিন সবচেয়ে সুন্দর মাধ্যমে, মানে যাকে দাওয়াত দিবেন তার সামনে ইসলাম কে সুন্দর ভাবে তুলে ধরুন, নিজেকে নরম করে, কোমল ভালোবাসা মিশ্রিত কন্ঠে .. আর আপনার উপদেশ হবে এতোই সুন্দর যে সবাই উপদেশ গ্রহণ না করলে ও যেনো তার অন্তরে আপনার কথা গুলি গেথে যায় আপনি কতো সুন্দর করে ইসলাম কে উপস্থাপন করলেন। এমনকি তর্ক করলেও উত্তম পন্থা অবলম্বন করুন।

‌দাঈ বা দাওয়াত দানকারী দাওয়াত দিতে গিয়ে তর্কের সম্মুখীন হতে পারেন। বিশেষতঃ আহলে কিতাবদের (ইহুদী ও খ্রিস্টান) সাথে। যদি তর্কের পর্যায়ে পৌঁছে যায় সেক্ষেত্রে আল্লাহ আমাদেরকে উত্তম পন্থায় তর্ক করার নির্দেশ দিয়েছেন। উত্তম তর্ক হচ্ছে- কোমলতা ও দয়ার মাধ্যমে, ইসলামের বুনিয়াদি দিকগুলো তুলে ধরার মাধ্যমে, ঠিক যেভাবে নির্মলভাবে কোনরূপ জোর-জবরদস্তি ব্যতিরেকে এ বুনিয়াদগুলো এসেছে।
‌এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন:

وَلَا تُجَادِلُوا أَهْلَ الْكِتَابِ إِلَّا بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِلَّا الَّذِينَ ظَلَمُوا مِنْهُمْ وَقُولُوا آمَنَّا بِالَّذِي أُنزِلَ إِلَيْنَا وَأُنزِلَ إِلَيْكُمْ وَإِلَهُنَا وَإِلَهُكُمْ وَاحِدٌ وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ
তোমরা কিতাবধারীদের সাথে তর্ক-বিতর্ক করবে না, কিন্তু উত্তম পন্থায়; তবে তাদের সাথে নয়, যারা তাদের মধ্যে বে-ইনসাফ। এবং বল, আমাদের প্রতি ও তোমাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে, তাতে আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আমাদের উপাস্য ও তোমাদের উপাস্য একই এবং আমরা তাঁরই আজ্ঞাবহ।
[সূরা আনকাবুত : ৪৬]

‌আমাদের রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ও ঠিক এই জিনিসটা করতেন, ওনার কথা- আচার আচরণ এতোটাই উত্তম ছিলো যে শত্রুরা ও ইসলাম গ্রহণ করেছিল।

‌আমাদের আগে শেখা উচিৎ কিভাবে ইসলামকে সুন্দর করে উপস্থাপন করতে হয়।
‌রাসুলুল্লাহ সাঃ এর যুগেই ইসলামের আসল সৌন্দর্য ফুটে উঠে, আর সাহাবীদের আচরণের সৌন্দর্য ইসলাম কে সবচেয়ে সুন্দর করে তোলে, যা আমরা আজকাল হাদিস গুলোতে পড়ে থাকি।

‌আমরা হলাম ব্যর্থ উম্মাহ্। আমরাই ইসলামের মতো শান্তির ধর্ম কে খারাপ ভাবে উপস্থাপন করে আসছি বহুকাল ধরে। নাহলে আজ বে-ধর্মীদের সাহস হতোনা ইসলাম কে খারাপ জঙ্গিবাদি বলার।

রাসুলুল্লাহ সাঃ ও সাহাবী (রাঃ)-রা যে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করে গেছিলেন তা নষ্ট আমরাই করেছি আর এখোনো করে যাচ্ছি ।

‌আমদের তিক্ত কথা, কম ইলেম, অকথ্য ভাষা, রাগ, ধৈর্য্য হীনতা, মাজহাবের বিভেদ, নানা ধরনের ভুল ফতোয়া, নিজেকে উত্তম মনে করা, অন্তরে অহংকার পোষণ করা, নিজেকে সবজান্তা ভাবা, অন্য ধর্মের মানুষের প্রতি খারাপ আচরণ…..
‌আজ ইসলাম কে জগতের সামনে খারাপ ভাবে 𝐑𝐞𝐩𝐫𝐞𝐬𝐞𝐧𝐭 করেছে। তার জন্য দায়ী এই উম্মাহ।

‌প্রত্যেক মুসলিম একে অপরের ভাই ভাই, আমরা প্রত্যেকেই আদম সন্তান,এমনকি যারা বে-ধর্মী তারাও আদম সন্তান মনে রাখবেন।

‌ভুল আমাদের হবেই, তাই নিজের ভুল শুধরানোর সাথে সাথে অন্যের ভুল গুলি সুন্দর ভাবে শুধরে দিবেন। কোনো খারাপ কথা না, কোমল মিষ্টভাষী হোন।

‌আর না হলে চুপ থাকতে শিখুন।

কারন আপনার একটা খারাপ কথা অন্য কাউকে ইসলামের পথে আনতে তোহ পারেই না, উপরন্তু মুসলিম দের ইসলামের প্রতি ক্ষোভ আর ধর্ম ত্যাগ করার মনোভাবোনা সৃষ্টি করে।

আলহামদুলিল্লাহ্ আলা কুল্লি’হাল !!

লিখেছেন
ওয়াহিদা সুলতান

Exit mobile version