তাড়াতাড়ি ইফতার দু’টি কথা!
সহিহ বুখারী সহ বহু কিতাবে বর্ণিত আছে,নবিজী(স.) বলেছেন-
ﻻَ ﻳَﺰَاﻝُ اﻟﻨَّﺎﺱُ ﺑِﺨَﻴْﺮٍ ﻣَﺎ ﻋَﺠَّﻠُﻮا اﻟﻔِﻄْﺮَ
‘যতদিন পর্যন্ত মানুষ তাড়াতাড়ি ইফতার করবে ততদিন তারা কল্যাণের উপর থাকবে।’
আরো বিভিন্ন হাদিসে আছে যে বিলম্বে ইফতার করা ইয়াহুদী-নাছাড়াদের অভ্যাস।
এসব হাদিসের কারণে লামাযহাবীরা আমাদের পা কামড়ে ধরে আছে,আমাদের ইয়াহুী-নাছাড়া বলতেও দ্বিধা করছে না।
কারণ আমরা সতর্কতার স্বার্থে দু-তিন মিনিট পরে ইফতার করি!
এর প্রতিত্তোরে কথা হল-
১.তাড়াতাড়ি ইফতার করার হাদিসগুলো একথা বুঝায় যে,তাড়াতাড়ি ইফতার করা ‘মুস্তাহাব;ফরজ-ওয়াজিব’ নয়।
হাফিজ ইবনে হাজার(রহি.) বলেছেন-
ﻗَﺎﻝَ اﻟﺸَّﺎﻓِﻌِﻲُّ ﻓِﻲ اﻷُْﻡِّ ﺗَﻌْﺠِﻴﻞُ اﻟْﻔِﻄْﺮِ ﻣُﺴْﺘَﺤَﺐٌّ ﻭَﻻَ ﻳُﻜْﺮَﻩُ ﺗَﺄْﺧِﻴﺮُﻩُ ﺇِﻻَّ ﻟِﻤَﻦْ ﺗَﻌَﻤَّﺪَﻩُ ﻭَﺭَﺃَﻯ اﻟْﻔَﻀْﻞَ ﻓِﻴﻪِ ﻭَﻣُﻘْﺘَﻀَﺎﻩُ ﺃَﻥَّ اﻟﺘَّﺄْﺧِﻴﺮَ ﻻَ ﻳُﻜْﺮَﻩُ ﻣُﻄْﻠَﻘًﺎ
‘ইমাম শাফেয়ী(রহি.) বলেছেন তাড়াতাড়ি ইফতার করা মুস্তাহাব এবং দেরীতে ইফতার করা মাকরূহ নয়,তবে সেচ্ছায় এবং দেরীতে ইফতার করায় ফজিলত আছে মনে করে করলে তবে মাকরূহ হবে।ইমামের এই কথার দাবি হল দেরীতে ইফতার করা মুতলাকান মাকরূহ নয়(অন্য কারণে মাকরূহ হয়)।’
ইমাম আইনী(রহি.) বলেছেন-
ﺑﺎﺏُ ﺗَﻌْﺠِﻴﻞِ اﻹﻓْﻄَﺎﺭِ ﺃَﻱ: ﻫَﺬَا ﺑَﺎﺏ ﻓِﻲ ﺑَﻴَﺎﻥ اﺳْﺘِﺤْﺒَﺎﺏ ﺗَﻌْﺠِﻴﻞ اﻹِْﻓْﻄَﺎﺭ ﻟﻠﺼَّﺎﺋِﻢ
‘তাড়াতাড়ি ইফতার করা মুস্তাহাব হওয়ার বর্ণনা।’
প্রিয় পাঠক, এমন একটি কাজ যা মুস্তাহাব এবং নফসুল আমর মাকরূহও নয়, তা যদি একটি ফরজ ইবাদতকে নিরাপদ রাখার স্বার্থে ত্যাগ করা হয় (যদিও দু-তিন মিনিট দেরী করলে শরীয়তের দৃষ্টিতে এটা দেরী করে ইফতার করা নয়) তবে কোন সুস্থ লোক কি এর বিরোধিতা করতে পারে?
তাছাড়া কোন কারণ ছাড়াই যদি কেউ মুস্তাহাব কোন আমল ছেড়ে দেন তবুও তো শরীয়তের দৃষ্টিতে তাকে নিন্দা করা যায় না,তবে কি এই ফিতনাবাজরা আমাদের বিরোধিতার বেলায় শরীয়তের নিয়ম-নীতিকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করল না?
২.’তাড়াতাড়ি ইফতার করা মুস্তাহাব এবং দেরীতে ইফতার করা মাকরূহ’ এটা বুঝলাম কিন্তু ‘তাড়াতাড়ি’ আর ‘দেরী’র কি কোন সীমারেখা নাই?
নাকি তাড়াতাড়ি বললে তাড়াতাড়ি আর দেরী বললে দেরী হয়ে যায়?
বুখারীর হাদিসে আছে-
‘তাড়াতাড়ি ইফতার করার কথা এবং দেরী ইফতার করা ইয়াহুদী-নাছাড়ার অভ্যাস।’
এখন কথা হল এই তাড়াতাড়ির সীমা কতটুকু?
আসুন আমরা হাদিস থেকে জেনে নেই ‘তাড়াতাড়ি’ বলতে নবিজী(স.) কি বুঝিয়েছেন আর কথিত লামাযহাবীরা কি বুঝেছে!
নবিজী(স.) বলেছেন-
«ﻻَ ﺗَﺰَاﻝُ ﺃُﻣَّﺘِﻲ ﻋَﻠَﻰ ﺳُﻨَّﺘِﻲ ﻣَﺎ ﻟَﻢْ ﺗَﻨْﺘَﻈِﺮْ ﺑِﻔِﻄْﺮِﻫَﺎ اﻟﻨﺠﻮﻡ»
(المستدرك الحاكم؛1584)
‘আমার উম্মাত ততদিন পর্যন্ত আমার সুন্নাতের উপর থাকবে যতদিন তারা তারকা দেখা যাওয়ার আগে আগেই ইফতার করবে!’
হাদিসটিকে ইমাম হাকেম সহিহ বলেছেন এবং ইমাম ইবনে হাজার ও আইনী(স.) স্ব স্ব কিতাব এই হাদিস দ্বারা দলিল পেশ করেছেন!
প্রিয় পাঠক,বুকে হাত রেখে বলুন তো,সূর্যাস্তের দুই-তিন মিনিট পরেই কি তারকা দেখা যায়?
৩.আমরা তো সূর্যাস্তের দু-তিন মিনিট পরে ইফতার করি বলে আমাদের ইয়াহুদী নাসারা বলে অথছ আমিরুল মুমিনীন ওমার ও উসমান(স.) রমযানে সূর্যাস্তের পর আগে মাগরীবের নামাজ পড়তেন তার পর ইফতার করতেন!
ইমাম মালিক তার মুয়াত্তায় বলেছেন-
ﻣﺎﻟﻚ، ﻋﻦ اﺑﻦ ﺷﻬﺎﺏ، ﻋﻦ ﺣﻤﻴﺪ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ اﻟﺮﺣﻤﻦ؛ ﺃﻥ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ اﻟﺨﻄﺎﺏ ﻭﻋﺜﻤﺎﻥ ﺑﻦ ﻋﻔﺎﻥ، ﻛﺎﻧﺎ ﻳﺼﻠﻴﺎﻥ اﻟﻤﻐﺮﺏ، ﺣﻴﻦ ﻳﻨﻈﺮاﻥ ﺇﻟﻰ اﻟﻠﻴﻞ اﻷﺳﻮﺩ، ﻗﺒﻞ ﺃﻥ ﻳﻔﻄﺮا. ﺛﻢ ﻳﻔﻄﺮاﻥ ﺑﻌﺪ اﻟﺼﻼﺓ. ﻭﺫﻟﻚ ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ.
‘উমার ও উসমান(রযি.) ইফতারের আগেই মাগরিবের নামাজ পড়তেন তার পর ইফতার করতেন।’
(মুয়াত্তা ইমাম মালিক,হাদিস নং-১০১৩,আজমী)
এই হাদিস দিয়ে ইস্তেযকার কিতাবে ইমাম ইবনে বার(রহি.) ইফতারের বিলম্বের বিষয়টি পরিষ্কার করতে দলিল দিয়েছেন কিন্তু এর সনদ নিয়া কোন আলাপ করেন নাই এবং আত-তাহমিদেও এর সনদ নিয়ে কিছু বলেন নি,সুতরাং এই হাদিসের সনদ নিয়ে লামাযহাবীদের ফালতু আপত্তিকে আমরা থোড়াই কেয়ার করছি!
প্রিয় পাঠক,আমরা দুই-তিন মিনিট দেরী করলে যদি আমাদের ইয়াহুদী নাসারা বলতে পারে তবে উমার ও উসমানের এত দেরীর বিষয়ে তারা কি বলে এখন চিন্তা করুন!
লিখেছেন
Mawlana Jahangir Alom