এখন প্রশ্ন হল কবর জিয়ারতের মূল্য কি, মৃতদের সালাম দেওয়ার মূল্যই বা কি? তারা কি আমাদের সালাম শুনতে পায়, এবং আমাদের উপস্থিতি অনুভব করতে পারে? কবরস্থান পরিদর্শনের নিয়ম আসলে দেরীতে এসেছে। রাসুল (ﷺ) বলেছেন, ‘আমি আপনাদের কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করতাম, কিন্তু পরবর্তীতে কবর জিয়ারতের অনুমতি দিলাম কারণ তা মৃত্যুর কথা মনে করিয়ে দেয়।’
এই আলোচনাটি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
মৃতদের কিন্তু প্রয়োজন নেই যে আমরা তাদের পরিদর্শন করি বা তাদের কবর জিয়ারত করি। এর মানে কি?
আমরা জানি যে আমাদের সালাম রাসুলের (ﷺ) কাছে পৌঁছে যায় আমরা যেখানেই থাকি না কেন, এবং এটি কেবলমাত্র রাসুলের (ﷺ) জন্য প্রযোজ্য।
আর অন্য সবার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা কি রকম?
যারা ঈমানদার ছিলেন, জীবিত অবস্থায় যারা নেক আমল করেছেন, এবং যাদের ভাল কাজগুলো এখনও অব্যাহত রয়েছে, আপনি যেখানেই থাকুন না কেন তাদের জন্য আপনার দু’আ গণ্য হবে। এমন নয় যে কবরস্থানে দু’আ করা, ঘরে বসে দু’আ করার চেয়ে উত্তম। তাদের পক্ষ থেকে যেকোনো ভাল কাজ আপনি যেকোনো জায়গা থেকেই করতে পারেন। এর প্রয়োজন তাদের কাছে অনেক বেশী, অন্য সব কিছুর চেয়ে। কবরের বাসিন্দাদের জন্য যে কবর পরিদর্শনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছিল তা কিন্তু নয়, বরং কবর পরিদর্শনকারীর জন্য কবর জিয়ারতের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, যাতে তারা মৃত্যুর কথা স্মরণ করতে পারে।
মনে আছে, আমর ইবনে আস (রা:) মৃত্যুর সময় তাঁর সন্তানদের কিছুটা সময় কবরের পাশে অপেক্ষা করতে বলেছিলেন। তিনি বলেছিলে, ‘তোমরা কিছুটা সময় আমার কবরের পাশে থেকো, যাতে আমার প্রভূর বার্তাবাহক আমার কাছে আসার আগ পর্যন্ত আমি কিছুটা স্বস্তি পেতে পারি।’ এমন কিছু বর্ণনা আছে যা আমর ইবনে আসের (রা:) কথার সাথে মিলে যায়।
যখন কোন মুমিন কবরস্থানে তার প্রিয় ভাই ও বোনদের সাথে দেখা করতে যায়, তখন কবরের বাসিন্দারা তাঁর উপস্থিতি অনুভব করে এবং তারা তার সালামের উত্তর দেয়। এ বিষয়ে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। এতদসত্ত্বেও আমরা কবরের বাসিন্দাদের সালাম দেই, তাদের জন্য দু’আ করি, এবং তাদের পরিদর্শনের মাধ্যমে নিজেদের মৃত্যুর কথা স্মরণ করি, কারণ আমরা এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে আমাদের দু’আ এবং নেক আমল তাদের কাছে পৌঁছে যায় আমরা যেখানেই থাকি না কেন।
তাহলে মৃতদের শ্রবণশক্তি সম্পর্কে আমরা কি ধারণা করতে পারি? আমরা জানি যে তারা পৃথিবীর সবকিছু শুনতে পায় না, তারা জীবিতদের মতো নয়। তারা ঘুরে বেড়াতে পারে না, তারা আপনার কক্ষেও প্রবেশ করতে পারে না। তারা যেখানেই থাকুক না কেন, পৃথিবীর সবকিছু তারা শুনতে পায়না। তাহলে প্রশ্ন হল – তাদের অবস্থানে থেকে অর্থাৎ কবর থেকে তারা কতটুকু শুনতে পায়?
সবার আগে জানাজার ব্যাপারে আমরা রাসুলের (ﷺ) সুন্নত থেকে আসলে কি প্রতিষ্ঠা করতে পারি? রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘মৃত ব্যক্তি জানাজা ছেড়ে যাওয়া শেষ পদধ্বনি শুনতে পায়।’ বদর যুদ্ধের পরের হাদিসেও এসেছে যখন মুমিনদের মৃত্যু হয়, রাসুল (ﷺ) একে একে ইসলামের শত্রুদের সবার নাম ধরে ডাকতে শুরু করেন। তিনি বললেন, ‘ওহে অমুক….. অমুক, অমুকের ছেলে অমুক…… তোমরা কি আল্লাহর প্রতিশ্রুতিকে সত্য দেখতে পাচ্ছ? কারণ তোমাদের জন্য আল্লাহর প্রতিশ্রুতি আজ সত্য হয়েছে।’
যখন রাসুল (ﷺ) এ কথা বললেন, সাহাবারা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ (ﷺ)! আপনি যা বলছেন তারা কি তা শুনতে পাচ্ছে?’ তখন রাসুল (ﷺ) বললেন, ‘তোমরা যা শুনছো, তারা তোমাদের থেকেও ভালো শুনতে পাচ্ছে।’ কাজেই রাসুল (ﷺ) যা বলছিলেন আল্লাহ তাদের তা শুনিয়েছিলেন।
এই সব তথ্য থেকে আমরা কি উপসংহারে আসতে পারি?
একটি উপসংহার হল তারা তাই শুনতে পায়, যা আল্লাহ তাদের শুনাতে চান। তাদের পক্ষ থেকে করা আপনার নেক আমল, এবং দু’আ এখনও তাদের কাছে পৌঁছাতে পারে। মৌলিক এবং গৌণ প্রমাণের আধিক্যের ভিত্তিতে আমরা এই ধারণাটাকে প্রতিষ্ঠা করতে পারি যে আমরা যখন কবরস্থানে গিয়ে কবরের বাসিন্দাদের সালাম জানাই, এর বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে আমরা কিছু প্রত্যাশা করিনা, তাদেরকে আমরা আমাদের জন্য দু’আও করতে বলি না, তবে তাদের প্রতি আমাদের সালাম তাদের জন্য কিছুটা স্বস্তি বয়ে আনে, এবং তা আরও বেড়ে যায় যখন আমরা তাদের জন্য দু’আ করি।
পর্ব : ১৬
মূল: ড. ওমর সুলাইমান