আপনি হয়তো ভাবছেন, আপনি যা করছেন সেটা আপনার বাচ্চা দেখছে না বা সেটা নিয়ে তারা এতোটা ভাবছে না। কিন্তু, আপনি যা করছেন, সেটা কিন্তু তার মনে রেখাপাত করছে। এই বয়সে তারা দেখে দেখে শিখে। এই বয়সে আপনাকে তারা যেটা করতে দেখবে, একটু বড়ো হয়ে সেটা করার প্রতি তাদের এমনিতেই প্রবণতা চলে আসবে।
আপনার ফেলে দেয়া নিভু-নিভু সিগারেট নিয়ে আপনার সন্তান যদি খাওয়া শুরু করে, আপনি কিভাবে তাকে সেটা ফেলে দিতে বলবেন। বড়ো হয়ে সে যদি আপনার সামনে দিয়ে সিগারেট খেতে খেতে যায়, আপনি কি তাকে ‘না’ করতে পারবেন?
উমর ইবনুল খাত্তাবের (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ছেলে ছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সম্পর্কে বলেন:
“আব্দুল্লাহ কতো দ্বীনদার এক ছেলে!”
[সহীহ বুখারী: ১১৫৭]
আব্দুল্লাহর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এমন দ্বীনদার হবার পেছনে সবচেয়ে বড়ো অবদান হলো উমরের (রাদিয়াল্লাহু আনহু)। চিন্তা করুন, উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) –এর প্রশংসায় যতোগুলো হাদীস আছে, তারমধ্যে কতোটি হাদীস আব্দুল্লাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেছেন?
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বপ্নে দেখেন, তিনি দুধপান করছেন, তারপর পেয়ালা উমরকে (রাদিয়াল্লাহু আনহু) দিয়ে দেন। স্বপ্নটি উমরের (রাদিয়াল্লাহু আনহু) জন্য প্রশংসনীয়। এই হাদীসটি কে বর্ণনা করেন?
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু)।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বপ্নে দেখেন উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বালতি দিয়ে পানি সেচ করছেন। হাদীসটি বর্ণনা করেন কে? আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু)।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’আ করেন, আবু জাহেল অথবা উমরের (রাদিয়াল্লাহু আনহু) মাধ্যমে আল্লাহ যেনো ইসলামকে শক্তিশালী করেন। এই হাদীসটি বর্ণনা করেন কে? আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু)।
উমরের (রাদিয়াল্লাহু আনহু) মতামত কুরআনের সাথে মিলে গিয়ে যেসব আয়াত নাযিল হয়েছিলো, সেই হাদীসটি কে বর্ণনা করেন? আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু)।
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বাবার প্রশংসাসূচক সবকিছু যখন বর্ণনা করছেন, তখন তো নিশ্চয়ই তিনি এটা বুঝতে পারছেন যে, তারা বাবা কতো দ্বীনদার! তাঁর বাবার ব্যক্তিগত জীবন এবং পাবলিক জীবন সম্পর্কে তো তিনি জানেন।
নিকটস্থ হুজুরের কাছে সন্তানকে পড়াশোনার জন্য পাঠানো সহজ। কিন্তু, সন্তান ২৪ ঘন্টা যাদের সাথে কাটায়, তাদের দ্বারাই সে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়। হুজুরের কাছে যতোটুকু শিখে আসে, ঘরে এসে সেটার প্রয়োগ দেখতে না পেলে সেটার প্রভাব তার মধ্যে তেমন থাকে না।
ইমাম মালিক ইবনে দিনার (রাহিমাহুল্লাহ) এক লোককে তাড়াহুড়ো করে, ভুলভাবে নামাজ পড়তে দেখলেন। এটা দেখে তিনি লোকটির সন্তানদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেন। কেনো? কারণ, লোকটির এমন নামাজ দেখবে তার সন্তানেরা, বাবার ভুলটা সন্তানের মধ্যেও ছড়িয়ে যাবে!
রামাদ্বানের মাসে এই বিষয়টি আপনাদেরকে বেশি করে ভাবতে হবে যে, আপনার সন্তানরাও আপনাকে দেখছে, আপনাকে পর্যবেক্ষণ করছে। তারা তুলনা করবে আপনার রামাদ্বান মাসের আচরণ এবং রামাদ্বান পূর্ববর্তী ও পরবর্তী আচরণ। আপনি যেমনটা করবেন, তারাও তেমনটা দেখে শিখবে। একটি প্রজন্মকে নতুন করে গড়ে তুলতে চাইলে, আগে সেই পরিবর্তন নিজের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।
পরিবর্তনের রামাদ্বান (দশম পর্ব)
আরিফুল ইসলাম