Writing

তাগুত কি ও তাগুত কত প্রকার?

তাগুত এর অর্থ কি ?

তাগুত (اَلطَّاغُوْتُ) শব্দটি طُغْيَانٌ (তুগইয়ান) শব্দ থেকে উৎপন্ন। এর অর্থ হচ্ছে – সীমালঙ্ঘনকারী, বিপথে পরিচালনাকারী ইত্যাদি।
তাগুত একবচন হতে পারে আবার বহুবচনও হতে পারে, পুরুষও হতে পারে আবার মহিলাও হতে পারে।

তাগুত কাকে বলা হয় ?

طُغْيَانٌ (তুগইয়ান) শব্দের অর্থ বন্যাও হয়। নদীর পানি যখন তার তীরের সীমানা অতিক্রম করে উপরে উঠে যায় তখনই তাকে আমরা বন্যা বলি। তদ্রুপ মানুষ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে, কেবল তাঁরই ইবাদত করবে এবং তাঁরই আইন মেনে চলবে, এটিই আল্লাহর বিধান। কিন্তু ঐ মানুষ যখন আল্লাহর ইবাদত করার পরিবর্তে নিজেই অন্যের ইবাদত দাবি করে, নিজেকে ইবাদতের যোগ্য মনে করে, তখন সে তার আবদিয়্যাতের স্বাভাবিক সীমা লঙ্ঘন করে।

পারিভাষিক অর্থ : আরবি ভাষাবিদ আবু ইসহাক বলেন, 

 كُلُّ مَعْبُوْدٍ مِنْ دُوْنِ اللهِ جِبْتٌ وَطَاغُوْتٌ

তাগুত শব্দ এসেছে “তাগা” যার অর্থ “সীমা লংঘন করা”,
আল্লাহ ছাড়া যা কিছুর উপাসনা করা হয় এবং যে এতে রাজি-খুশি থাকে, তাকে তাগুত বলা হয়।

প্রত্যেক অনুসৃত অথবা আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য বাদ দিয়ে যাদের আনুগত্য করা হয় তাদেরকেও তাগুত বলা হয়। মহান আল্লাহ বলেনঃ
“আমি প্রত্যেক উম্মাত (জাতির) কাছেই রাসুল পাঠিয়েছি, যেন তারা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করে এবং তাগুত থেকে বেচে থাকে।
[সুরা আন-নাহলঃ ৩৬]

তাগুত অনেক প্রকারের আছে তার থেকে প্রধান ৫ প্রকার উল্লেখ করা হলোঃ

১. ইবলিশঃ
সে আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদতের দিকে আহব্বান করে।
“হে বনী-আদম! আমি কি তোমাদেরকে বলে রাখিনি যে, শয়তানের এবাদত করো না, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? এবং আমার এবাদত কর। এটাই সরল পথ।
[সুরা ইয়াসিনঃ ৬০-৬১]

সুতরাং আল্লাহ ছাড়া যাকিছুর উপাসনা করা হয় এর মূলে রয়েছে ইবলিশ। সেই হচ্ছে সমস্ত শিরকের হোতা।

২. আল্লাহর আইন বিরোধী অত্যাচারী শাসকঃ যে আল্লাহর বিধান পরিবর্তন করে দেয় এবং মানুষের বানানো শাসনতন্ত্র কায়েম করে। যেমন কেউ যদি বলে, “চোরের শাস্তি হাত কাটা বর্বরতা, হত্যার শাস্তি (কেসাস), জিনার শাস্তি (রজম) বর্তমান যুগে চলবেনা”…

আল্লাহ কি বলেছেন দেখুনঃ
“হে ঈমানদারগন! তোমাদের প্রতি নিহতদের ব্যাপারে কেসাস গ্রহণ করা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তি স্বাধীন ব্যক্তির বদলায়, দাস দাসের বদলায় এবং নারী নারীর বদলায়। অতঃপর তার ভাইয়ের তরফ থেকে যদি কাউকে কিছুটা মাফ করে দেয়া হয়, তবে প্রচলিত নিয়মের অনুসরণ করবে এবং ভালভাবে তাকে তা প্রদান করতে হবে। এটা তোমাদের পালনকর্তার তরফ থেকে সহজ এবং বিশেষ অনুগ্রহ। এরপরও যে ব্যাক্তি বাড়াবাড়ি করে, তার জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব। হে বুদ্ধিমানগণ! কেসাসের মধ্যে তোমাদের জন্যে জীবন রয়েছে, যাতে তোমরা সাবধান হতে পার।”
[সুরা বাকারাহঃ ১৭৮-১৭৯]

৩. আল্লাহ যা অবতীর্ন করেছেন (কুরআন+সুন্নাহ) তা বাদ দিয়ে যে বিচারক/শাসক বা নেতাগন অন্য আইন/বিধান/সংবিধান দিয়ে ফয়সালা করে। যেমন কুরান-হাদীস বিরোধী কোনো আইন রায়, কিয়াস, কারো ফতোয়া, অলিদের কথা, পীর মাশায়েখর কথা মানা, সংসদে আইন পাশ করে সমাজে চাপিয়ে দেয়া এবং বিজাতিদের মন গড়া সংবিধান মানা।

যেমন আল্লাহ বলেছেনঃ
“যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন সে অনুযায়ী ফয়সালা করে না তারাই কাফের”।
[সুরা আল-মায়িদাহঃ ৪৪]

৪. যে “ইলমে গায়েব” বা অদৃশ্য জ্ঞানের দাবী করে সে তাগুত। এদের মাঝে রয়েছে জ্যোতিষী, গণক, রাশি-চক্র ইত্যাদি।
যেমন আল্লাহ বলেনঃ
“তাঁর কাছেই অদৃশ্য জগতের চাবি রয়েছে। এ গুলো তিনি ব্যতীত কেউ জানেনা। স্থলে ও জলে যা আছে, একমাত্র তিনিই জানেন। কোন পাতা ঝরে না, কিন্তু তিনি তা জানেন। কোন শস্য কণা মৃত্তিকার অন্ধকার অংশে পতিত হয় না এবং কোন আর্দ্র ও শুস্ক দ্রব্য পতিত হয় না, কিন্তু তা সব প্রকাশ্য গ্রন্থে রয়েছে”।
[সুরা আনআ’মঃ ৫৯]

৫. আল্লাহ ছড়া যার ইবাদত/পূজা/
উপাসনা করা হয়, এবং এতে যে রাজী-খুশি থাকে সে তাগুত। এদের মাঝে রয়েছে সেইন্ট, ঠাকুর, পীর-ফকির, ধর্মীয় গুরু, নেতা ইত্যাদি যাদেরকে পূজা করা হয়। যেমন আল্লাহ বলেনঃ
“তাদের মধ্যে যে বলে যে, তিনি (আল্লাহ) ব্যতীত আমিই উপাস্য, তাকে আমি জাহান্নামের শাস্তি দেব। আমি জালেমদেরকে এভাবেই প্রতিফল দিয়ে থাকি”।
[সুরা আল-আম্বিয়াঃ ২৯]

মূলঃ শায়খুল ইসলাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহহাব (রাহিমাহুল্লহ)

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture