পবিত্র কুরআনে একটানা পাঁচটি আয়াত আছে শুধুমাত্র রামাদ্বান নিয়ে। পাঁচটি আয়াত সূরা বাকারার ১৮৩-১৮৭ আয়াত পর্যন্ত। এই পাঁচটি আয়াতের মধ্যে একটি মজার বিষয় আছে। আজকে সেটি নিয়ে কথা বলবো।
১৮৩ নাম্বার আয়াত রোজা নিয়ে
১৮৪ নাম্বার আয়াত রোজা নিয়ে
১৮৫ নাম্বার আয়াত রোজা নিয়ে
১৮৬ নাম্বার আয়াত দু’আ নিয়ে
১৮৭ নাম্বার আয়াত রোজা নিয়ে।
রামাদ্বান সংক্রান্ত আয়াতগুলোর মাঝখানে হুট করে দু’আ সংক্রান্ত আয়াত। তারপর আবার রামাদ্বান সংক্রান্ত আয়াত। আল্লাহ ঐ বিশেষ আয়াতে বলেন:
“আর যখন আমার বান্দাগণ তোমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে, (তখন বলে দিও) আমি তো নিশ্চয়ই নিকটবর্তী। কেউ যখন আমাকে আহ্বান করে, আমি তখন তার আহ্বানে সাড়া দিই। সুতরাং, তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমাকে (যথার্থভাবে) বিশ্বাস করুক; যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে।”
[সূরা বাকারা ২:১৮৬]
আল্লাহ রামাদ্বান সংক্রান্ত আয়াতেও তাঁর কাছে দু’আ করার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। তাহলে, আমরা দু’আ করার সময় ঢাকনা সরিয়ে দিই। আল্লাহ তো আমাদের আহ্বান সরাসরি শুনছেন। আমরা এমন দু’আ করি, এমন কিছু আল্লাহর কাছে চাই, যেটা চিন্তার বাইরে। নবীগণ যখন আল্লাহর কাছে দু’আ করতেন, তখন এমন এমন দু’আ করতেন যেটা আপাত মনে হতো ‘অসম্ভব’। চিন্তা করুন, সুলাইমান (আলাইহিস সালাম) –এর দু’আর কথা। তিনি আল্লাহর কাছে কী দু’আ করেন?
“হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমাকে এমন এক রাজত্ব দান করুন, যা আমার পর আর কারও জন্য প্রযোজ্য হবে না। নিশ্চয়ই আপনি বড়োই দানশীল।”
[সূরা সা’দ ৩৮:৩৫]
সুলাইমান (আলাইহিস সালাম) ছোটোখাটো কোনো জিনিস আল্লাহর কাছে চাননি, একটি ছোট্ট রাজত্ব আল্লাহর কাছে চাননি। তিনি এমন রাজত্ব চেয়েছেন, যা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না। মানুষ চায় সে এমন কিছু পেতে, যা তার পূর্বে কেউ পাননি। আর সুলাইমান (আলাইহিস সালাম) এমন কিছু চাইলেন, যাতে তাঁর পরবর্তী কেউ না পায়! এমন ‘অসম্ভব’ কিছু সুলাইমান (আলাইহিস সালাম) আল্লাহর কাছে চেয়েছিলেন।
আল্লাহর প্রতি তাঁর সুধারণা ছিলো। ফলে, তিনি যা চান, আল্লাহ তাঁকে তাই প্রদান করেন। এই দু’আর পর আল্লাহ তাঁকে জ্ঞান দান করেন, হিকমত দান করেন, বাতাসকে তাঁর অনুগত করে দেন, জ্বীনকে তাঁর আয়ত্ত্বাধীন করে দেন, তাঁকে এমন একটি রাজ্য দেন যা পরবর্তীতে আর কাউকে দিবেন না।
দ্বীনদারিতা মানে এই না যে শুধুমাত্র বিনয়ের সাথে আল্লাহর কাছে কম-কম চাইবেন। আল্লাহর কাছে দু’আ করার সময় সর্বোচ্চ জিনিস চান। যে কোটিপতি, তার কাছে গিয়ে কি বলবেন, “দুটো টাকা ভিক্ষা দেন?”
বরং তার কাছে কেউ ভিক্ষা চাইতে গেলে ১০০/৫০০/১০০০ টাকা ভিক্ষা চাইবে। আর যে আল্লাহ সবকিছুর মালিক, তাঁর কাছে চাইতে গেলে কার্পণ্য করবেন কেনো?
যিনি আপনাকে যেকোনো কিছু দিতে পারেন, তাঁর কাছে যেকোনো কিছু চান, সর্বোচ্চটা চান। মানুষের কাছে কিছু চাইলে সে অপছন্দ করে, কিন্তু আল্লাহর কাছে কিছু না চাইলে বরং আল্লাহ অপছন্দ করেন।
আপনি আল্লাহ কাছে কিয়ামতের দিন হিশাব সহজ করার জন্য না চেয়ে বরং আল্লাহ কাছে চান, আল্লাহ যেনো বিনা হিশেবে আপনাকে জান্নাত দান করেন। জান্নাতের সর্বনিম্ন স্তরের জন্য আল্লাহর কাছে না চেয়ে আল্লাহর কাছে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তরের জন্য চান। যদিও আপনি মনে করেন আপনি আল্লাহর কাছে যা চান, সেটা পাবার যোগ্য আপনি নন, তবুও আপনি চান। আমরা যেকোনো কিছু পাবার আগ পর্যন্ত আমরা সেটার যোগ্য নই। সুতরাং, আমাদের চাইতে তো কোনো দোষ নেই!
আপনার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের শুধুমাত্র হেদায়তের জন্য দু’আ না করে আপনি দু’আ করুন- আল্লাহ যেনো তাদেরকে মুজাহিদ, মুস্তাহিদ বানান; যদিও আপনি মনে করছেন তাদের সেই যোগ্যতা নেই, তবুও আপনি দু’আ করুন। কেননা, তাদেরকে ‘যোগ্য’ বানানো আল্লাহর জন্য কোনো ব্যাপার না।
এই মাসে আমরা রোজা রাখবো, নামাজ পড়বো পাশাপাশি আরেকটু গুরুত্বপূর্ণ আমল করবো। সেটা হলো- আল্লাহর প্রতি সুধারণা। আল্লাহর প্রতি সুধারণার কোনো কমতি করবেন না। নিশ্চিতভাবে আপনি আল্লাহর প্রতি সুধারণা করুন।
আল্লাহ বলেন:
“আমি সেরকমই, বান্দা আমার প্রতি যেরকম ধারণা রাখে।”
[সহীহ বুখারী: ৭৪০৫]
পরিবর্তনের রামাদ্বান (তৃতীয় পর্ব)
আরিফুল ইসলাম