ডাক্তার হিসেবে অমুসলিম রোগীর চিকিৎসা করা
অনেক মুসলিম ডাক্তার আছেন, দ্বীন প্র্যাকটিস করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন, দাড়ি রাখেন। সেই ডাক্তারের কাছে হাতে রেখা বেঁধে একজন হিন্দু রোগী গেলো বা গলায় ক্রশ ঝুলিয়ে একজন খ্রিস্টান রোগী গেলো চিকিৎসা নিতে। দাড়িওয়ালা ডাক্তার কি বলবেন, “আস্তাগফিরুল্লাহ! আপনারা বিধর্মী, আপনাদের চিকিৎসা করতে পারবো না?”
একজন মুসলিম ডাক্তার কি শুধুমাত্র মুসলিম রোগীকে দেখবেন? উত্তর হলো- না। সামাজিক সেবামূলক কাজে মানুষকে মানুষ হিশেবে ট্রিট করতে হবে।
কে মুসলিম, কে অমুসলিম সেটা বিবেচ্য নয়। ঘরে আগুন লাগলে, প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগে ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে পড়লে মুসলিম-অমুসলিম সবারই এমন হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সহযোগিতার হাত সবার দিকে বাড়িয়ে দিতে হয়।
একজন ডাক্তারের ডিউটি হলো রোগী দেখে সঠিক চিকিৎসা করা। রোগী মুসলিম হলে ভালো চিকিৎসা পাবে আর অমুসলিম হলে খারাপ চিকিৎসা পাবে এমনটা না। তার কাছে সবাই সমান।
সাহাবীদের একটি দল একবার একটি সফরে যান। এক অমুসলিম গোত্রের কাছে গিয়ে তারা অতিথি হতে চাইলে তাদের আবদার ওরা প্রত্যাখ্যান করে। তারা মন খারাপ করে সেখান থেকে ফিরলেন।
ঐ গোত্রের নেতাকে সাপে দংশন করলো। কোনোভাবেই তার চিকিৎসা করা যাচ্ছে না। একজন পরামর্শ দিলো, ঐ দলের (সাহাবীদের) কাছে গেলে তারা হয়তো কিছু চিকিৎসার কথা বলতে পারবে।
তারা সাহাবিদের দলের কাছে এসে অনুরোধ জানালো। যারা কিছুক্ষণ আগে তাঁদেরকে অতিথি হিশেবে মেনে নেয়নি, বিপদে পড়ে তারা সাহায্যর জন্য আসছে? একজন সাহাবী বললেন, “আমি ঝাড়ফুঁক করতে পারি। কিন্তু, তোমরা তো আমাদেরকে মেহমানদারী করাও নি। আমি যদি চিকিৎসা করি, আমাকে কী পারিশ্রমিক দিবে সেটা ঠিক করে নাও।”
তারা বললো, একপাল ছাগল দিবে। সাহাবী ‘সূরা ফাতিহা’ পড়ে ঝাড়ফুঁক করলেন এবং বিষ্ময়কর ব্যাপার হলো, লোকটি ভালো হয়ে গেলো। লোকেরা তাঁদেরকে ৩০ টি ছাগল দিলো। কোনো কোনো সাহাবী বললেন সেগুলো নিজেদের মধ্যে বণ্ঠন করে নিতে, কিন্তু যিনি ঝাড়ফুঁক দেন তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে গিয়ে তারা এই বিষয়টি জিজ্ঞেস করবেন।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদের এমন চিকিৎসাকে এপ্রিশিয়েট করেন এবং ছাগলগুলো নিজেদের মধ্যে বন্ঠন করতে বলেন, তাঁকেও একটি ভাগ দিতে বলেন।
[সহীহ বুখারী: ২২৭৬]
কোনো কোনো ধর্মের মধ্যে জাতপ্রথা আছে। এক জাতের ডাক্তার আরেক জাতের রোগীর চিকিৎসা করতো না বলে ইতিহাসে পাওয়া যায়। আরেক জাতের রোগীকে স্পর্শ করলে তাদের জাত চলে যায় এমন ধারণা ছিলো। ইসলামে এমন কোনো জাতপ্রথা নেই।
মুসলিম ডাক্তার যেমন মুসলিম রোগীর চিকিৎসা করতে পারেন, তেমনি পারেন অমুসলিম রোগীর চিকিৎসা করতে।