একাডেমিক জীবনে একটা নির্দিষ্ট সময় পর প্রতিটা কোর্সের সময় ফুরিয়ে আসে। তখন পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু হয়। এমুহুর্তে যে পুরো কোর্স জুড়েই পড়াশুনা করেছে তার প্রস্তুতি ও পারর্ফমেন্স সবচাইতে ভালো হয় আর যে পরীক্ষার আগের দিনগুলোতে পড়ে পাশের চিন্তা করছে তার ভালো ফলাফলের থেকে বেশি পাশ নিয়ে ভাবতে হয়। তখন এই বান্দার অবস্থা থাকে নাকের জলে-চোখের জলে টাইপ অবস্থা।
খুব সহজ এই সমীকরণটাকে আমাদের দৈনন্দিন চাওয়া পাওয়ার সাথে মিলানোর চেষ্টা করলাম। আমরা পরিকল্পনা করি এবং সেই পরিকল্পনায় আমাদের চাওয়াগুলো ফুটে উঠে। আমরা জানি কখন কোনটার চাহিদা আমাদের, কিন্তু দেখা যায় যতক্ষণ না আমার সংকটকাল না চলে আসছে ততক্ষণ না আমরা আমাদের ইবাদাতে মনোযোগী হচ্ছি আর না আমরা দুআর ব্যাপারে আগ্রহী হচ্ছি।
উল্টো সুসময়ে আল্লাহকে ভুলে সেই কোর্সের সময়ে ঘুরেফিরে আনন্দ করে বেড়ানো ছেলেটির মতো আমরাও আল্লাহর থেকে দূরে সরে আছি। আর এরপরই সংকটকাল এগিয়ে আসে আর আমরা দুআ করতে করতে পাগলপ্রায় হই। তখন দেখা যায়,আমরা তাড়াহুড়ো করে দুআ করতে গিয়ে দুআর খুশু হারিয়ে ফেলি এবং দুআ কবুলের আভাস না পেয়ে হতাশার অতল গহ্বরে হারিয়ে যাই।
অথচ সুসময়ে আল্লাহর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পারলে আল্লাহ পাক অবশ্যই এই সময়ে আমাদের মনে রাখতেন।আবার এমনও হতে পারতো কোনো অভাবেরই সম্মুখীন আমাদের হতে হতো না,কেননা সর্বদা “যিকরুল্লাহ” তথা আল্লাহর স্মরণ এবং “ইহসান” তথা দুআর মতো ইবাদাতে খুশু বজায় রাখলে আল্লাহ পাক দুআ কবুলের মাধ্যমে সাহায্যের ধারা অব্যহত রাখতো।আর যদি নিয়মিত আল্লাহর তরফ থেকে অনুগ্রহ আসে তবে দুআ কবুলের ব্যাপারেও কখনো আশাহত হতে হবে না।
এমনকি ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, নবীজী ﷺ বলেছেন,
“সুসময়ে তুমি আল্লাহকে স্মরণ করো, আল্লাহতায়ালা দুঃসময়ে তোমাকে স্মরণ করবেন।”
এমনকি সুখের দিনে আল্লাহর কথা ভুলে থাকা,দুআ থেকে মুখ ঘুরিয়ে রাখা, আল্লাহর কাছে অনুগ্রহের জন্য হাত না পাতা – এই বিষয়গুলো আমাদের অকৃতজ্ঞতাকে চিহ্নিত করে। এমনকি আল্লাহ পাক বলেন,
"আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করব। আমার কৃতজ্ঞতা আদায় করো, অকৃতজ্ঞ হয়ো না।"
[সুরা বাকারা ;১৫২]
তবে যেহেতু আল্লাহ আমাদের দুর্বল করে সৃষ্টি করেছেন আমাদের অন্তর দুআ করার ব্যাপারে,আল্লাহর স্মরণের ব্যাপারে উদাসীন হয়ে যেতেই পারে-তবে এরও সমাধান আছে। নবীজী ﷺ তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে এর সমাধান দিয়েছেন, নবীজী ﷺ বলেছেন,
‘‘আমার অন্তর আল্লাহর স্মরণ থেকে নিমেষভর বাধাপ্রাপ্ত হয়। সেহেতু আমি দিনে একশত বার আল্লাহর নিকট ক্ষমা ভিক্ষা চাই।’’
[সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭০২]
অর্থাৎ,ইস্তেগফার করতে হবে।অন্তরকে আল্লাহর দিকে ঝুঁকিয়ে নিতে হবে বার বার ইস্তেগফার করে। এতে আমাদের অন্তর নরম হবে, আল্লাহর কাছে চাওয়ার ইচ্ছাটাও জাগ্রত হবে।
সকল কথার শেষ কথা আল্লাহর কাছে চাইতে হবে-সুখে কিংবা দুঃখে। সুখের দিনগুলোতে দুআ করে করে আল্লাহর কাছে নিজের অবস্থান তৈরি করতে হবে,আসন্ন কঠিন দিনগুলোর জন্য এই সময় থাকতেই চেয়ে নিতে হবে। এতে ইনশাআল্লাহ আমাদের জন্য ভবিষ্যতের দিনগুলো সুন্দর হবে, চাওয়াগুলো পূর্ণতা পাবে।আর যদি এরপরও উদাসীন রয়েই গেলাম তবে, দুআ কবুল না হলে বলতে হবে-
“আমি তো ঠিকমতো চাইতেই জানলাম না আর চাইতে না জানলে কি আমার রব আমায় দিবেন!”