টাইম পাস
কাটেনা সময়! উফফ! কি যে করি!
আজ রাতে দেখতে হবে মুভি, খেলতে হবে পাবজি গেম, বন্ধুদের সাথে হবে চরম আড্ডা, এর সাথে একটু হৈ-হুল্লোড় ফুর্তি, ডিজে’র তালে তালে কোমর দুলিয়ে ড্যান্স, কিংবা কানে হেডফোন গুঁজে ঝুম হয়ে পছন্দের গানগুলো শোনা!
আর কিছু না হলেও অন্তত ফেসবুকটা তো আছেই আপনার! এখানে ওখানে যতো বাজেমার্কা পেইজ আছে, গ্রুপ আছে, ফেসবুক ভিডিও আছে, হাসি-তামাশার নামে যতো অশ্লীলতা নোংরামি করার শয়তানের আখড়াগুলো আছে, সবখানেই আপনার নিত্য পদার্পণ!
আর মেয়েদের সাথে হাই-হ্যালো’ থেকে শুরু করে পটকা-বাজি (মিথ্যা প্রেমের অভিনয়) বোমা-বাজি (বহুতান্ত্রিক রিলেশন) মজনু-বাজি (হারাম রিলেশনে বুদ হয়ে থাকা) তো আছেই।
চলছে ঘন্টার পর পর ঘন্টা ফোনে আলাপন, ভিডিও চ্যাটিং, প্রেমালাপ, গ্রুপ প্যানেলে হাসি-ঠাট্টা, অনর্থক নিউস ফিড স্ক্রল, ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি…
এই তো জীবন! এটাই জীবন। জীবন যেনো এভাবেই চলছে। প্রতিদিন এমনই মাদকতায় একটার পর একটা দিন চলে যাচ্ছে আমাদের। আমরা এর নাম দিয়েছি “টাইম পাস” (সময় কাটানো!)
প্রায় সব জায়গায় আজকাল “টাইম পাস” নামক অদ্ভুত ব্যাধিতে জনে জনে আক্রান্ত!
অথচ জীবনের মানে কি?
জীবন কি কাটানোর জিনিস! নাকি বানানোর জিনিস! প্রিয় নবী (ﷺ) যাদের অনুসরণ করতে বলেছেন, তাদের দিকে তো একটু তাকান—
সেই সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)’রা হেলায় খেলায় জীবনকে কাটিয়ে দেননি, বরং জীবনকে বানিয়েছেন।
হাসি-তামাশায়, হৈ-হুল্লোড়ে, অনর্থক কাজে, গুনাহের পথে জীবনকে কাটিয়ে দেননি। তারা ইমানের পিছনে মেহনত করেছেন। আমলের পিছনে মেহনত করেছেন। সুন্দর আচার-চরিত্রের পিছনে মেহনত করেছেন। সহজ-সুন্দর নির্মল জীবনকে বানিয়ে নিয়েছেন!
আমাদের তো হারাম মজায় “টাইম পাস” করতে করতে ডিপ্রেশন চলে আসে, (কারণ হারামে কখনো স্থায়ী সুখ পাওয়া যায় না, শান্তির মালিককে নারাজ করে সুখ পাওয়া তো অলীক কল্পনা মাত্র)
হ্যাঁ সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) দেরও ডিপ্রেশন ছিলো। তাদেরও চিন্তা ছিলো।
তাদের চিন্তা তো একটাই—
কি করে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচা যায়!
কি করে কবরের সাপ-বিচ্ছু থেকে বাঁচা যায়!
কি করে কয়েকটা দিন একটু কষ্ট করে চির প্রশান্তির স্থান জান্নাতে ঘর করা যায়। এগুলো ছিলো তাদের চিন্তা!
আর আমাদের চিন্তা হলো—
কি করে চোখ ধাঁধানো একটা পিক তুলে ফেসবুকে আপলোড দেওয়া যায়!
কি করে একটা জোক্স বলে মেয়েদের পটানো যায়!
কি করে রাতারাতি ফেসবুকে ফেমাস হওয়া যায়!
কিভাবে অল্প সময়ে ভাইরাল হওয়া যায়!
কি করে টিকটক, ইউটিউব ভিডিও বানিয়ে হাজার হাজার ফ্যান-ফলোয়ার বানানো যায়!
কেনো ভাই/বোন আপনাকে আমাকে কি মরতে হবে না? যে সময়টা চলে যাচ্ছে সে সময়টাকে আর কি কখনো ফিরে পাবেন! “টাইম পাস” না করে সে সময়টাতে—
একটু কি জিকির করা যায় না?
একটু কি সৃষ্টি নিয়ে গবেষণা করে আল্লাহ পাকের মহত্ত্ব উপলব্ধি করা যায় না?
একটু কি দরুদ শরীফ পড়া যায় না?
একটু কি কোরআন তেলাওয়াত করা যায় না?
একটু কি আল্লাহ পাককে খুশি করা যায় না?
আপনি নিজেই ভাবুন। জীবন তো হলো একটা পরীক্ষা ক্ষেত্র। আচ্ছা পরীক্ষা ক্ষেত্রের নির্ধারিত সময় কেউ কি শিস বাজিয়ে উড়িয়ে দেয়? না। বরং সময়কে কাজে লাগায়।
আজকে একটা হিসাব বের করে দেখুন না! আপনি প্রত্যহ ঠিক কতো ঘন্টা ফেসবুকে, গেমিংয়ে, মুভিতে, গানে বা অন্য কোনো অনর্থক কাজে অতিবাহিত করছেন?
টাইম পাসের নামে দৈনিক ৪-৫ ঘন্টা চলে গেলেও বছরে ১,৮০০ ঘন্টা চলে যায়। ধরুন আপনি ৮০ বছর বাঁচবেন। তাহলে ৮০ বছরে চলে যাবে ১৪৪,০০০ ঘন্টা। যার মানে ১৬ বছর ৩ মাস ৩৩ দিন সময় চলে যায়! ভাবুন একবার। ১৬ বছর টানা আপনি টাইম পাস করলেন!
ভাবুন একবার এই ১৬ বছরে আপনি কি কি করতে পারতেন!
কমপক্ষে ১০ হাজার রাকাআত নফল নামাজ হতো।
কমপক্ষে ২ হাজার বার কোরআন খতম।
কমপক্ষে ৮ হাজার ঘন্টা জিকির।
যার দ্বারায় আপনার নেকির পাল্লা অনেক ভারী হয়ে যেতো। জান্নাতে তিনিও রাস্তা সহজ হতো।
তাই আসুন আর নয় “টাইম পাস” বরং কাজে লাগাই সময়কে।