জান্নাত লাভের আমল তাকওয়া
অল্পস্বল্প সময় পৃথিবীতে কাটিয়ে চিরকালীন জান্নাতের শান্তিময় আবাসের জন্য পুঁজি যোগাড় করে বেড়ানো প্রত্যেক মুসলিম নরনারীর সকল কাজকর্মের টার্গেট পয়েন্ট। সকালে ফজরের নামাজ থেকে শুরু করে রাতে বিছানায় শুয়ে “আল্লাহুম্মা বিসমীকা আমুতু ওয়া আহইয়া” বলে ঘুমোতে যাওয়া প্রত্যেক মুসলমানের স্বপ্ন এই জান্নাতকে ঘিরে।
এই সেই জান্নাত যার ব্যাপারে আল্লাহ পাক বলেন,
“সেখানে তারা স্থায়ী হবে। অবস্থানস্থল ও আবাসস্থল হিসেবে তা কতইনা উৎকৃষ্ট!”
[সূরা আল ফুরকান: ৭৬]
আর যেই আবাসস্থল স্বয়ং আল্লাহ পাক কর্তৃক উৎকৃষ্ট হিসেবে স্বীকৃত তা অর্জন করা মোটেই সহজ ব্যাপার না কেননা দুনিয়ার বিভিন্ন উদাহরণ থেকেই আমরা দেখি যেই জিনিস মতো উত্তম তথা দামী তা অর্জন করাও ততোটাই কষ্টসাধ্য। অতএব জান্নাতের মতো উৎকৃষ্ট ভূমির বুকে জায়গা পাওয়াটাও কঠিন। কিন্তু, মজার ব্যাপার হচ্ছে কঠিন হলেও মুমিন হিসেবে আপনার আমার জন্য সহজ।
কীভাবে সহজ?
চলুন জান্নাতী ব্যক্তিদের বৈশিষ্ট্য জানার চেষ্টা করি কেননা জান্নাতী ব্যাক্তিদের বৈশিষ্ট্য তাদের জান্নাত লাভের আমলগুলো নির্দেশ করবে আর সেই আমলগুলো আকড়ে ধরে আমরা আমাদের জান্নাতে যাওয়ার পথ সহজ করে নিতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন,
وَلِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ جَنَّتَانِ
“আর যে তার রবের সামনে দাঁড়াতে ভয় করে, তার জন্য থাকবে দু’টি জান্নাত।”
[সূরা আর রহমান: ৪৬]
অর্থাৎ, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জান্নাতবাসী বান্দার একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সে তার রবের সামনে দাঁড়াতে ভয় করবে আর সেই দিন হচ্ছে কিয়ামত দিবসের হিসাব গ্রহণের দিন।তার আল্লাহভীতি এতোটাই বেশি যে সংক্ষিপ্ত ইহকালীন জীবনকে অতিক্রম করে পরকালেও আল্লাহকে ভয় করছে। এরূপ ব্যাক্তির বৈশিষ্ট্য আল্লাহ পাক অন্যত্র আরো একটু বিস্তৃত করে বলেন,
“আর যে স্বীয় রবের সামনে দাঁড়ানোকে ভয় করে এবং কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজকে বিরত রাখে, নিশ্চয় জান্নাত হবে তার আবাসস্থল।”
[সূরা আন নাযিআত: ৪০-৪১]
অর্থাৎ, রবের সামনে দাঁড়াতে ভয় পাওয়া মানুষটি আল্লাহকে ভয় করে বলে নিজেকে কুপ্রবৃত্তি থেকে বিরত রাখে। এর ফলে যাবতীয় অন্যায় ও অপকর্ম থেকে বেঁচে থাকা তার জন্য সহজ হয়। আর যে ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবে এবং অন্তরে তাকওয়া ধারণ করবে তার জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ সহজ হয়ে যাবে আর আল্লাহর সন্তুষ্টি মানেই জান্নাতের পথ সুগম হওয়া।
অর্থাৎ, তাকওয়া তথা আল্লাহভীতি হচ্ছে জান্নাত লাভের একটি আমল এবং একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের জন্য সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ আমল।তাকওয়াকে ধারণ করলে ইসলামচর্চা আমাদের জন্য সহজ হয়ে যায় আর ইসলামী জীবনব্যবস্থা যখন সহজ হয়ে যাবে তখন দেখবেন আপনা আপনিই জান্নাতের মতো অতি উৎকৃষ্ট ও দামী আবাসস্থলের ঠিকানা লাভ সহজ হবে।
উক্ত আয়াতের ব্যাখায় একটা ঘটনা উল্লেখযোগ্য।
তখন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা উমার রা: এর শাসনামলের সময়। এক যুবক খুব দ্বীনদার এবং আল্লাহভীরু জীবনযাপন করতো। সে মসজিদেই অধিকাংশ সময় কাটাতো আর পাশাপাশি তার বৃদ্ধ পিতার সেবাযত্ন ও করতো।
ঐ যুবকের আসা যাওয়ার পথে ছিলো এক যুবতীর বাসস্থান। উর্বশী, রূপবতী এই যুবতী উক্ত যুবকের প্রেমে পড়লো। সে বরাবরই তার রূপ দিয়ে যুবককে আকৃষ্ট করতে চেষ্টা চালালো কিন্তু, যুবকের তাকওয়া প্রতিবারই বাধা হয়ে দাঁড়ালো। কিন্তু, যুবতী চেষ্টা চালিয়ে যায় এবং একসময় কামিয়াভ হয়।
এবার যুবতী যুবকটিকে আকর্ষণ করে নিয়ে যাচ্ছে তার ঘরের দিকে। দীর্ঘদিনের যে ইচ্ছে তা পূরণের প্রচন্ড সম্ভাবনার দ্বারে দাঁড়িয়ে আছে যুবতী, এই তো আরেকটু পথ এগিয়ে গেলেই তারা চলে যাবে যুবতীর ঘরে। কিন্তু, আল্লাহ পাক যেন অন্য কোনো পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন।
দরজার কাছাকাছি আসতেই যুবকের স্মরণে আসলো কুরআনের আয়াত-
“নিশ্চয় যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে যখন তাদেরকে শয়তানের পক্ষ থেকে কোন কুমন্ত্রণা স্পর্শ করে তখন তারা আল্লাহকে স্মরণ করে। তখনই তাদের দৃষ্টি খুলে যায়।”
[সূরা আল আ’রাফ: ২০১]
তার মনে আল্লাহ ভীতি জেগে উঠলো আর সে যেন মুহুর্তে সংবিৎ ফিরে পেলো। উপরের আয়াত খানা পাঠ করেই সে মুর্ছা গেল।
যুবতীর রঙিন স্বপ্নে মুহূর্তে ধুয়ে গেল, আল্লাহ পাক তাঁর বান্দাকে রক্ষা করলেন। যুবতী অবস্থা প্রতিকূলে দেখে যুবকটিকে তার ভৃত্যের সাহায্যে যুবকটির বাড়ির সামনে রেখে আসলো। পরবর্তীতে যুবকটির পরিবার পরিজন ধরে ঘরের ভেতর নিয়ে যায়।
যুবকের জ্ঞান ফিরলে সে তার পিতার কাছে পুরো ঘটনা বর্ণনা করে এবং সেই একই আয়াত তিলাওয়াত করে আবার মুর্ছা যায়। বেশ অনেকটা সময় পার হয়ে গেলেও যুবকের জ্ঞান ফিরে না। পরবর্তীতে সবাই বুঝতে পারে সে আসলে ঐ জ্ঞান হারানোর মধ্য দিয়েই ইহলোক ত্যাগ করেছে।
পরবর্তী দিন খলীফা উমার রা: এর কাছে যুবকটির ঘটনা পৌঁছে। তিনি যুবকটিকে পছন্দ করতেন তাই খানিকটা কষ্ট পেলেন। পরবর্তীতে তিনি যুবকটির কবর দেখতে যায় এবং পাঠ করে এই আয়াত-
وَلِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ جَنَّتَانِ
“আর যে তার রবের সামনে দাঁড়াতে ভয় করে, তার জন্য থাকবে দু’টি জান্নাত।”
[সূরা আর রহমান: ৪৬]
আর সাথে সাথেই কবর থেকে পর পর দু’বার উত্তর আসে- “হে উমর! আমার রব আমাকে জান্নাতে দুটি উদ্যান দান করেছেন।”
সুবহানাল্লাহ!
আল্লাহ তাআলা তাঁর কথা রেখেছেন,জান্নাত লাভের আমল তাকওয়া অবলম্বন করায় তিনি তাঁর বান্দাকে জান্নাতের উদ্যানে স্বাগত জানিয়েছেন।