জানাজার নামাজ (পর্ব-১)
আপনি যখন এই পৃথিবীতে এসেছেন তখন আজান দেওয়া হয়েছিল এবং কোন সালাত আদায় হয়নি, আপনি যখন এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবেন তখন সালাত আদায় করা হবে এবং কোন আজান দেওয়া হবে না। আপনার পুরো জীবনটি যেন আজান এবং সালাতের মধ্যবর্তী সময়ের মতো।
সুবহানাল্লাহ! যখন আপনি মায়ের গর্ভে থাকেন তখন একই কলম দিয়ে ফেরেশতা আপনার মৃত্যুর তারিখ এবং আপনার আয়ু লিখেন। কাজেই যখনই এই পৃথিবীতে আপনার আগমন ঘটে তখনই কিন্তু এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার পথটিও আপনার জন্য তৈরি হয়ে থাকে। এটি আমাদের জন্য একটি গভীর অনুস্মারক যেন আমরা নিয়মিত নামাজ পড়ি যতক্ষণ না আমাদের জানাজার নামাজ পড়া হয় এই সংক্ষিপ্ত জীবনে আসা-যাওয়ার পথে।
সালাতুল জানাযা অর্থাৎ জানাজার নামাজ একজন মুসলমানের উপর অন্য মুসলমানের অধিকার। এটি আমাদের প্রিয়জনকে বিদায় জানানোর এবং নিজেদেরকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার একটি উপায় যে একদিন আমরাদেরকেও একই পথ অনুসরণ করতে হবে। প্রকৃত জ্ঞানীতো সেই ব্যক্তি যে নিজের জানাজাকে স্মরণে রাখে এবং সেই সালাতুল জানাযা অনুযায়ী জীবন অতিবাহিত করে।
আমাদের রাসুল (ﷺ) শিখিয়েছেন কিভাবে জানাজার নামাজ পড়তে হয় খুব অনন্য একটি উপায়ে। আমরা সালাতুল জানাজায় চার তাকবির পড়ি। প্রথম তাকবিরের পর আমরা সুরা আল ফাতিহা পাঠ করি, দ্বিতীয় তাকবিরের পরে আমরা রাসুলের (ﷺ) উপর সালাওয়াত পাঠ করি যেভাবে আমরা নামাজে পড়ে থাকি, দুরুদে ইব্রাহীম –
اَللّهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَّعَلى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدُ
আল্লা-হুম্মা স্বাল্লি আলা মুহাম্মাদিঁউ ওয়াআলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা স্বাল্লাইতা আলা ইবরা-হীমা অ আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকাহামীদুম মাজীদ
এভাবে জানাজার নামাজে সালাওয়াত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আপনি পড়বেন। এরপর তৃতীয় তাকবির করবেন এবং মৃত ব্যক্তির জন্য দু’আ করবেন। রাসুলের (ﷺ) কাছ থেকে প্রাপ্ত দু’আ গুলোর একটি হলো –
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيرِنَا وَكَبِيرِنَا وَذَكَرِنَا وَأُنْثَانَا
হে আল্লাহ! আমাদের জীবিত, আমাদের মৃত, আমাদের মধ্যে উপস্থিত ও অনুপস্থিত, আমাদের ছোট ও বড়, আমাদের পুরুষ ও নারী সবার গুনাহ ক্ষমা করে দিন।
اللَّهُمَّ مَنْ أَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَأَحْيِهِ عَلَى الإِسْلاَمِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الإِيمَانِ
হে আল্লাহ! আপনি যাদের জীবিত রেখেছেন তাদেরকে ইসলামের উপর জীবিত রাখুন। আপনি যাদের মৃত্যু দেন, তাদের ঈমানের সঙ্গে মৃত্যু দান করুন।
এভাবে আমরা মৃত ব্যক্তির জন্য দু’য়া করি যেভাবে রাসুল (ﷺ) আমাদের শিখিয়েছেন। আমরা মৃত ব্যক্তির জন্য আন্তরিকভাবে তাকবিরে তাকবিরে এই দু’আ করি। ৪র্থ তাকবিরের পর আপনি উম্মতের জন্য এবং নিজের জন্য দু’আ করবেন, এবং আপনি চাইলে মৃত ব্যক্তির জন্য দুআ চালিয়ে যেতে পারেন। কিছু আলেমরা যে উপায়ে দু’য়া করার কথা উল্লেখ করেছেন তা হল –
اللَّهُمَّ لاَ تَحْرِمْنَا أَجْرَهُ وَلاَ تُضِلَّنَا بَعْدَهُ
হে আল্লাহ, আমাদেরকে তার সাওয়াব থেকে বঞ্চিত করবেন না। এবং তার মৃত্যুর পর আমাদেরকে গোমরাহ বা বিপদে ফেলবেন না।
তারপরে তাসলিমের ব্যাপারটি আসছে, এক তাসলিম বা দুই তাসলিম। এ নিয়ে আমরা একটু পরে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। কিন্তু আমি চাই আপনারা এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করুন সালাতুল জানাজায় আমরা যা পড়ি তা কেন পড়ি? আলেমগণ এর কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন, তার মধ্যে একটি হল যদি আপনি মনোযোগ দিয়ে লক্ষ করেন তবে দেখবেন সালাতুল জানাযা মূলত সালাতের সংক্ষিপ্ত রূপ।
আপনি যেভাবে আপনার সালাত আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামীন দিয়ে শুরু করেন, সানা দিয়ে এবং তারপর সুরা ফাতিহা দিয়ে শুরু করেন এবং যেভাবে আপনি সালাত শেষ করেন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে, এই জানাযার সালাতও একই রকম। এটা হল আলেমদের একটি অভিমত কেন আমরা জানাজার নামাজ এভাবে পড়ি।
আরেকটি বিষয় যা আলেমগণ উল্লেখ করেছেন তা হল একটি গ্রহণযোগ্য দু’য়ার সব উপাদান এতে রয়েছে। গ্রহণযোগ্য দু’আ আসলে কি?
হামদ – যা আল্লাহ সুবহানা তা’লার প্রশংসা এবং তারপর নবীর (ﷺ) উপর সালাওয়াত দিয়ে শেষ হয়। তাই সালাতুল জানাজায় গ্রহণযোগ্য দু’য়ার একটি নিখুঁত সূত্র রয়েছে যা নিশ্চিত করে যে এতে আল্লাহর প্রশংসা আছে এবং আমাদের প্রিয়জন এবং সমগ্র উম্মাতের জন্য দু’য়া করার আগে আমাদের নবীর প্রতি সালাওয়াতও রয়েছে।
অনেক আলেম উল্লেখ করেছেন যে কিছু মাযহাবের মতে জানাজার নামাজে একটি তাসলিম প্রযোজ্য কারণ এটি সম্পূর্ণ সালাত নয়। যদি আপনি কারও পিছনে জানজার নামাজ আদায় করেন তবে তারা যা করবে আপনি তাই করবেন। তারা যদি এক তাসলিম করে আপনিও এক তাসলিম করবেন, আর তারা যদি দুটি তাসলিম করে তবে আপনিও তাই করবেন। এতে কোন সমস্যা হবে না।
জানাজার নামাজ (পর্ব:১)
মূল: ড. ওমর সুলাইমান
অনুবাদ: ফাহমিনা হাসানাত