Writing

পরিবার ছেলে বা মেয়েকে বিয়েতে বাধ্য করতে পারে?

বিয়ের ক্ষেত্রে প্রত্যেকেরই একটা পছন্দ-অপছন্দ থাকে এবং অনেক সময় পছন্দ না হলে বিয়ের পর হয়ত ফিতনা হতে পারে। তাহলে বাবা মা কি ছেলে বা মেয়ে কে নির্দিষ্ট কারো সাথে বিয়েতে বাধ্য করতে পারে?

ইসলামের দৃষ্টিতে পিতা-মাতার জন্য তাদের ছেলে বা মেয়েকে এমন ব্যক্তির সাথে বিয়েতে বাধ্য করা জায়েজ নাই যাকে সে পছন্দ করে না বা যার সাথে তার বিয়েতে আগ্রহ নেই।
কারণ বিয়ের ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রীর পারষ্পারিক আকর্ষণ ও আগ্রহ বোধ থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তা যদি না থাকে তাহলে এই পবিত্র বন্ধন দ্রুতই দুর্বল হয়ে পড়ে।
এই জন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিয়ের পূর্বে বর ও কনে একে অপরকে দেখে নেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে।

যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা. বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
إِذَا خَطَبَ أَحَدُكُمُ الْمَرْأَةَ فَقَدِرَ أَنْ يَرَى مِنْهَا بَعْضَ مَا يَدْعُوهُ إِلَيْ نكاحها فَلْيَفْعَلْ
“তোমাদের কেউ যখন কোন মেয়েকে বিয়ে করার ইচ্ছা করে তখন যতদূর সম্ভব তাকে দেখে নিয়ে এ মর্মে নিশ্চিন্ত হওয়া উচিত যে, মেয়েটির মধ্যে এমন কিছু আছে যা তাকে বিয়ে করার প্রতি আকৃষ্ট করে।”
(আহমদ ও আবু দাউদ)


অন্য হাদিসে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছেন:
انْظُرْ إِلَيْهَا فَإِنَّهُ أَحْرَى أَنْ يُؤْدَمَ بَيْنَكُمَا ‏
“তাকে দেখে নাও, তোমাদের মধ্যে এটা ভালবাসার সৃষ্টি করবে।” [তিরমিযী, অনুচ্ছেদ: প্রস্তাবিত পাত্রীকে দেখা, শাইখ আলবানী হাদিসটিকে সহিহ সহিহ বলেছেন]

এ মর্মে আরও একাধিক হাদিস রয়েছে।
বিয়ের পূর্বে দেখাদেখির বিষয়ে ইসলামে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে এ কারণে যে, বর-কনে যেন একে অপরকে দেখে তাদের নিজস্ব পছন্দ ও অপছন্দের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু যদি কাউকে তার অপছন্দের ব্যক্তির সাথে জোর করে বিয়ে দেয়া হয় তাহলে সেখানে তার ব্যক্তিগত ইচ্ছা ও স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করা হল যা তাদের দাম্পত্য জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে-এ সম্ভাবনাই বেশি।

এ ছাড়া হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ- সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-বলেছেন:
لاَ تُنْكَحُ الأَيِّمُ حَتَّى تُسْتَأْمَرَ وَلاَ تُنْكَحُ الْبِكْرُ حَتَّى تُسْتَأْذَنَ قَالُوا كَيْفَ إِذْنُهَا قَالَ أَنْ تَسْكُتَ
“বিধবাকে তার মতামত ব্যতীত বিয়ে দেয়া যাবে না এবং কুমারীকে তার অনুমতি ব্যতীত বিয়ে দেয়া যাবে না। তারা বললেন, তার অনুমতি কেমন হবে?
তিনি বললেনঃ তার চুপচাপ থাকা।” [সহিহ বুখারি (তাওহীদ) হাদিস নম্বরঃ [6970] অধ্যায়: ৯০/ কূটচাল অবলম্বন (كتاب الحيل) পাবলিশারঃ তাওহীদ]
অর্থাৎ কুমারী মেয়ের নিকট বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার পর সে যদি চুপ থাকে তাহলে তা তার সম্মতি হিসেবে গণ্য হবে। যেমন বাংলা প্রবাদে বলা হয়, নীরবতা সম্মতির লক্ষণ।

পরিবার সন্তানকে বিয়েতে বাধ্য করতে পারে - Islami Lecture
পরিবার সন্তানকে বিয়েতে বাধ্য করতে পারে – Islami Lecture


এ সব হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয়, বিয়ের ক্ষেত্রে বর ও কনের নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারো জন্য আল্লাহ প্রদত্ত তাদের এ স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার অধিকার নাই। সুতরাং তাদের সম্মতি ছাড়া জোর পূর্বক বিয়েতে বাধ্য করা আল্লাহর নাফরমানির শামিল।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহ. বলেন:
“وليس للأبوين إلزام الولد بنكاح من لا يريد ، فإن امتنع لا يكون عاقاً ، كأكل ما لا يريد”
“الاختيارات” (ص 344)
“বাবা-মার জন্য তাদের সন্তানকে এমন ব্যক্তির সাথে বিবাহে বাধ্য করার সুযোগ নাই যাকে সে বিয়ে করতে চায় না। অত:এব সে যদি এ ক্ষেত্রে বাবা-মার নির্দেশ না মানে তাহলে সে ‘অবাধ্য’ হিসেবে গণ্য হবে না- বিষয়টি অনিচ্ছা স্বত্বেও খাওয়ার মত।” (উৎস: আল ইখতিয়ারাত, পৃষ্ঠা নং ৩৪৪)


সুতরাং ছেলে হোক অথবা মেয়ে হোক কাউকেই তার ইচ্ছার বাইরে কারো সাথে বিয়েতে বাধ্য করার সুযোগ নেই। কেউ যদি তার প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে অথবা মেয়েকে এমন ব্যক্তির সাথে বিয়েতে বাধ্য করে তাহলে তাদের অধিকার রয়েছে বিয়ে রাখা অথবা ভঙ্গ করার।

আর সন্তান যদি এ ক্ষেত্রে বাবা-মার নির্দেশ অমান্য করে তাহলে তাতে তার গুনাহ হবে না বরং বাবা-মা তাদের অনধিকার চর্চার কারণে আল্লাহর নিকট গুনাহগার হবে।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।
আল্লাহু আলাম

উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture