চোগলখোর : অসংযত জিহ্বার ভয়াবহতা
জিহবা বা মূখের আরেকটি ভয়াবহ কাজ হলো চোগলখোরী করা। এইটা কবিরা গুনাহ।
তার থেকে জিহবা বা মুখকে হেফাজত করতে হবে।
চোগলখোরী হচ্ছে একের কথা অপরকে বলে উভয়ের মাঝে মনোমালিন্য সৃষ্টি করা ও ঝগড়া ফাসাদ লাগিয়ে দেয়া। সমাজের বেশী ভাগ ঝগড়া ফাসাদ চোগলখোরীর কারনেই সৃষ্টি হয়ে থাকে। গীবত যে আগুন জ্বালায় চোলখোরী তাকে বিস্তৃত করে চতুর্দিকে ছড়িয়ে দেয়। তাই ইসলামের দৃষ্টিতে এটা মারাত্মক অপরাধ।কেননা ইসলাম যে ধরনের একটি আদর্শ ও শান্তিপূর্ণ সমাজ কামনা করে। সেই সমাজে চোগলখোরের কোন অস্তিত্ব নেই। চোগলখোরের পরিণতি সম্পর্কে বোখারী ও মুসলিম এবং আবু দাউদ ও তিরমিযীতে আছে।
রাসুল (সাঃ) বলেছেন:
চোগলখোর কখনো বেহেস্তে প্রবেশ করতে পারবে না।
(বুখারী : ৬০৫৬) (মুসলিম:১০৫ )
যারা চোগলখোরী করে তাদের কথা বিশ্বাস করা যাবে না।
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে সূরা আল কালাম ১০-১১ নাম্বার আয়াতে বলেন:
=> সেই ব্যক্তির কথা মানিও না, যে অধিক শপথ করে, যে লাঞ্ছিত, যে পশ্চাতে নিন্দা করে একের কথা অপরের নিকট লাগিয়ে ফিরে। {(৬৮) সূরা আল কালাম-১০-১১)}
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন :
মুমিনগণ! যদি কোন পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোন সংবাদ আনয়ন করে, তবে তোমরা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হও।
(৪৯-হুজরাত-৬)
অতএব জিহ্বাকে সৎ ও ইসলামের কল্যাণের কাজে ব্যায় করে আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করি। সাথে সাথে রাসুল (সাঃ) এর হাদিস কে স্বরন করি।
=> রাসুল (সাঃ) একবার দু‘টি কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বললেন এ কবর বাসীদ্বয়ের আজাব হচ্ছে। তবে তারা কোন বড় রকমের পাপের জন্য শাস্তি পাচ্ছে না। তাদের একজন পেশাব থেকে পুরোপুরি পরিস্কার হতো না। আর একজন চোগলখোরী করে বেড়াত। অতপর রাসুল (সঃ) খেজুরের দু‘টি ডালা নিয়ে একটি করে উভয়ের কবরে পুতে দিলেন এবং বললেন এ দুটো শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত ওদের আজাব হয়তো কিছুটা কম হবে। (বোখারী ও মুসলিম)
এ হাদীসে তারা কোন বড় রকমের কাজের জন্য আজাব পাচ্ছে না কথার অর্থ তারা মনে করতো, তাদের এ অপরাধ অর্থাৎ পেশাব থেকে ভালো ভাবে পরিস্কার না হওয়া এবং চোগলখোরী করে বেড়ানো তেমন কোন গুরুত্ব বিষয় নয়, আসলে কিন্তু বিষয়টি গুরুতর জগন্য পাপ।
ইমাম আযহারী তার লিখিত কিতাবুল কাবায়েরে লিখেন যে হযরত ঈমাম গায্-যালী (রঃ) অভিমত ব্যক্ত করেন, যার কাছে কেউ অন্য কারো ব্যাপারে এ বলে চোগলখোরী করে যে অমুক তোমাকে বা তোমার ব্যাপারে এ রূপ মন্তব্য করেছে। তখন তার ছয়টি কাজ করাই হবে কর্তব্য।
- #প্রথম কর্তব্য :
এ কথা বিশ্বাস করবে যে, সে একজন চোগলখোর ও দুরাচারী, অতএব সে বিশ্বাস যোগ্য নয়। - #দ্বিতীয় কর্তব্য:
তাকে চোগলখোরী না করার জন্য নিষেধ করবে। এরূপ আচরনের জন্য তীব্র সমালোচনা করবে। এবং তাকে ভালো পরামর্শ দেবে। - #তৃতীয় কর্তব্য:
যেহেতু সে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে ঘৃনিত, তাই মনে প্রাণে তাকে ঘৃনা করবে। কারণ আল্লাহর ঘৃনিত জনকে ঘৃনা করা অপরিহার্য। - #চতুর্থ কর্তব্য:
চোগলখোর যার ব্যাপারে খারাপ ধারনা দিয়েছে। সাথে সাথে তার সম্পর্কে কোন খারাপ বা মন্দ ধারনা নেবে না। কেননা আল্লাহ তায়ালা ঘোষনা দিয়াছেন সুরা হুজরাতে ১২ নং আয়াতে – اجـْتَـنِـبُوا كَـثِيرًا مِّنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْـمٌ ۖ حجرات-
তোমরা বেশী ধারণার বসবর্তী হওয়া থেকে বিরত থাক। কারণ কোন ধারণা পোষন করায় পাপ হয়।(হুজরাত) - #পঞ্চম কর্তব্য:
তার কথিত কথায় এতটা গুরুত্বারোপ করবে না যে, তা যাচাইয়ের জন্য খোজ খবর নেয়া শুরু করবে। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেন
ولاَ تَــجَــسَّــسُــو তোমরা গোপনীয় বিষয়ে সন্ধান কর না। - #ষষ্ঠ কর্তব্য:
চোগলখোরের প্রতি আপন পরামর্শ নিজেই ভঙ্গ কর না। অর্থাৎ চোগলখোরের কথিত বিষয় নিয়ে নিজেই কারো সাথে শলা পরামর্শ করো না।