কুরবান কার জন্য – শাইখ আহমাদুল্লাহ
আমরা পৃথিবীর মানুষ এতো বেশি স্বার্থের পেছনে অন্ধ যে, থুথু ফেললেও চিন্তা করি কোথায় ফেললে আমার একটু লাভ বেশী হবে। পাশের জমি ওয়ালার জমিতে যদি একটু থুথুটা ফেলি, তাহলে আমার জমিটা অন্তত কিছুটা থুথু থেকে বাঁচবে।
আমরা হলাম সেরকম মানুষ। এরকম সময়ে এসে আর্থিক ইবাদাত গুলোকে খাঁটি করা খুব কঠিন একটা কাজ। এটার জন্য স্ট্রাগল করতে হয়। এটার জন্য নিজের সঙ্গে নিজের যুদ্ধ করতে হয়।.
দান একটি আর্থিক ইবাদাত। দানের ক্ষেত্রে দেখবেন যে মানুষ শুনাতে দেখাতে খুব পছন্দ করে। এটা মানুষের অভ্যাস। আমি চাঁদা দিয়েছি মাদ্রাসার জন্য, আমি এতগুলো মাসজিদ করেছি, আলহামদুলিল্লাহ। বলার আবার স্টাইল আছে। এগুলো বলতে গিয়ে আবার খুব সুন্দর করে বুঝানো হয় যে, মানে আমার নিয়্যাতের মধ্যে কোন ভেজাল নেই। আমি আপনাকে দানের কথা, ইবাদাতের কথা শুনাতে চায় নাই। কথার কথা বলে ফেললাম আরকি। একটি উদাহরণ। অনেকে এভাবে বলে, ভাই! আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা আমাকে দিয়ে করিয়েছেন। আমি আর কি করবো ! পাঁচটি মাসজিদ আল্লাহ আমাকে দিয়ে করিয়েছেন। আমার কিছু না।
কুরবানীটা আসলে একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার সন্তুষ্টির জন্য। নিজের সকল সুখ ত্যাগ করার শিক্ষা দেয় কুরবানী। গরু জবাই করে কুরবানীর গোস্ত বাসায় উঠিয়ে আমারা খায়। সেটা ঠিকআছে। কিন্তু কুরবানীর মানে কি?
সে শিক্ষাটা আমাদের ভেতর একটুও আসে না!
কুরবানীর মানে পুরোপুরি ত্যাগ। আপনি বাজার থেকে তরতাজা গরু এনে জবাই করে তাজা গোস্ত নিয়ে ফ্রিজে রাখলেন, খেলেন, খাওয়ালেন এটাতো ভোগ। এখানেতো ত্যাগের কিছুই নেই। ত্যাগ হলো ইব্রাহীম আলাইহিস সালাতু ওয়াসসালাম আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার নির্দেশকে পূরণ করতে গিয়ে সকল কিছুকে ত্যাগ করেছেন। জবাই করেছেন। এমনকি নিজের সন্তানের গলায় চুরি দিতেও রাজি হয়েছেন। যদিও সন্তানকে কুরবানী দেওয়া লাগে নাই। কিন্তু তিনি দিতেও রাজি হয়েছিলেন।
সে শিক্ষাটাই হলো কুরবানীর শিক্ষা। এ শিক্ষা নিয়েই যদি আপনি ফজরের সলাতের সময় আরামের ঘুম ত্যাগ করতে পারেন। এটাই ত্যাগ। আপনি হারাম নিতে পারেন, হাতছানি আছে। বিশাল বড় লোভনীয় হারাম অফার আছে । চাইলেই ঘুষটা নিতে পারেন। চাইলেই সুদের কারবার করতে পারেন। চাইলেই চুরি করতে পারেন। চাইলেই দুর্নীতি করতে পারেন। কিন্তু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার ভয়ে করছেন না। এর নাম ত্যাগ। এটাই কুরবানী শিক্ষা দেয়।
[চলবে, ইন শা আল্লাহ ]