আজ ভারাকান্ত হৃদয়ে আফসোসের হাঁড়ি নিয়ে কলম ধরেছি। আমরা মজার ছলে ঠাট্টার কলে দ্বীনের গুরুত্বপূর্ণ বিধানকে হাসির খোরাক বানিয়েছি। ফেসবুকে আপলোড দিয়ে লাইক, কমেন্টের ঝুড়ি নিয়ে বসেছি । হজ্ব, কুরবানির মতো গুরুত্বপূর্ণ ও ফযিলতপূর্ণ বিধানকে ঠাট্টার ছলে খেল তামাশার বস্তু বানিয়েছি। অথচ, এগুলো ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান!
কুরবানির সময় দেখা যায়— ফেসবুকে গরু জবাইয়ের লাইভ টেলিকাস্ট, জবাইকৃত পশুর উপর বসে, শুয়ে, নুইয়ে, ছেলে-মেয়ে একসাথে বসে ছবি তুলে আপলোড দেওয়া, হজ্বে গিয়ে বায়তুল্লাহকে সামনে রেখে ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড দিয়ে বারবার মোবাইলের স্ক্রিনে তাকাই লাইক কতোটা পড়েছে। নাইজুবিল্লাহ!
আজ আমাদের বিনোদন, খেল-তামাশা থেকে রেহাই পাচ্ছেনা কুরবানি ও হজ্বের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। শেষ বিদায়ের ফটককে (কবর) নিয়েও খেল তামাশায় মেতে উঠতে দ্বিধাবোধ করছিনা। আল্লাহ তাআলা এরশাদ ফরমান,
তারা স্বীয় ধর্মকে তামাশা ও খেলা বানিয়ে নিয়েছিল এবং পার্থিব জীবন তাদেরকে ধোকায় ফেলে রেখেছিল। অতএব, আমি আজকে তাদেরকে ভুলে যাব; যেমন তারা এ দিনের সাক্ষাৎকে ভুলে গিয়েছিল, এবং যেমন তারা আয়াতসমূহকে অবিশ্বাস করত।
[সূরা আ’রাফঃ ৫১]
মূলত এই আয়াতটি নাযিল হয়েছিলো মক্কার কাফিরদের জন্য। তারা হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনীত দ্বীনকে নিয়ে বিদ্রূপ করতো। দ্বীনের রুকনগুলো নিয়ে ঠাট্টা করতো, উপহাস করতো। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথাকে কটাক্ষ করতো। যার জন্য রয়েছে ক্বিয়ামতে ভয়াবহ শাস্তি। কিন্তু, আফসোস, আমরাও কোন অংশে কম নয়!
পশুকে মালা পরিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে মানুষের নজরকাড়া, হাটের বড় পশুটি কিনে বাহ্-বা কুড়ানো, ফেসবুকে আপলোড দিয়ে লাইক, কমেন্টের আশায় দিন পার করা— যেগুলো নষ্ট করে দেয় আমাদের তাক্বওয়া। নজরকাড়া গরু কিনি, মানুষ দেখে বাহ্-বা দিবে, ফেসবুকে আপলোড দিলে মানুষ কমেন্টে বাহ্-বা দিবে। কী-সব নিম্নমানের চিন্তাধারা! অথচ আল্লাহ তাআলা আমাদের থেকে শুধু এখলাসটুকু চান।
আল্লাহ তাআলা আমাদের নজরকাড়া সুঠাম দেহের পশুর দিকে চান না, চান আমাদের অন্তর। যবাইকৃত পশুর গোশত খেতে দিয়ে তো আল্লাহ আমাদের এহসান করেছেন। পূর্বের যুগে কুরবানির পশুকে আসমান থেকে আগুন এসে পুরিয়ে দিতো। আমরা পশু দেখি মোটাতাজা, পশুতে গোশত কতো মন হবে, টাকার অংকের সাথে গোশতের অংক মিলছে কী-না। নাউজুবিল্লাহ! আল্লাহ তাআলা এরশাদ ফরমান,
এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না। পৌঁছে তাঁর কাছে তোমাদের মনের তাক্বওয়া। এমনিভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের বশ করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর মহত্ত্ব ঘোষণা কর এ কারণে যে—
তিনি তোমাদের পথ প্রদর্শন করেছেন। সুতরাং সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন।
[সূরা হাজ্ব ৩৭ ]
আল্লাহ তাআলার নিকট আমাদের কুরবানির পশুর রক্তমাংস, চামড়া কিছুই পৌঁছবেনা একমাত্র তাক্বওয়া ছাড়া। কুরবানি থেকে উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর হুকুম মান্য করা। এভাবে অন্যান্য ইবাদাতেও। যেমন, আমরা রোযা রাখি, দিনে পানাহার থেকে বিরত থাকি— এর থেকে দিনে পানাহার থাকা উদ্দেশ্য নয়; উদ্দেশ্য হলো রবের হুকুম তাক্বওয়ার সাথে মান্য করা। আমরা আমাদের কুরবানি, ত্যাগ কোন নিয়তে করছি? আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে নাকি মানুষের বাহ্-বা পেতে?
উমার রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে—
‘‘যাবতীয় কার্য নিয়ত বা সংকল্পের উপর নির্ভরশীল।
[সহিহ বুখারি ০১]
যদি আমাদের নিয়তে সমস্যা হয়, তাহলে আমাদের এতো ত্যাগ তিতিক্ষা সব বিফল। পরিশেষে বলবো, আমার নামায, আমার কুরবানি এবং আমার জীবন ও মরন বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহরই জন্যে।
[সূরা আন’আম-১৬২]
আল্লাহ তাআলা আমাদের কুরবানি কবূল করুন-আমীম!