পৃথিবী গতিশীল। পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে মধ্যাকর্ষণ শক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে সুনির্দিষ্ট একটি পথে। নিজের অক্ষের উপর ঘুরতে থাকে অবিরাম।গণিতবিদ টলেমি বলেছেন, আদিম যুগ থেকে মানুষের মনে একটি ধারণা ছিল যে, পৃথিবী স্থির একটি গ্রহ। মহাবিশ্বের সকল কিছু পৃথিবী কে কেন্দ্র করে ঘুরপাক খায়।
পিটারসনের পিথাগোরাস পৃথিবীর ঘূর্ণয়নের কথা বললেও তিনি এ মতবাদ প্রমাণ করতে সক্ষম হননি। ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষে সপ্তম শতাব্দীর শুরুর দিকে গ্যালিলীও পৃথিবীর ঘূর্ণয়নের ব্যাপারে প্রমাণ করতে দূরবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার করেন। এবং কেপলার নামে আরেকজন জ্যোতির্বিদ সপ্তদশ শতাব্দীতে পৃথিবীর জ্যোতিষ্ক মন্ডলীর ঘূর্ণনের ব্যাপারে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পেশ করেন।
বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা: অয়ন বৃত্তে পৃথিবী ঘন্টায় ১৬৭০ কিলোমিটার বেগে ছুটে চলে। অতঃপর ধীরে ধীরে তার গতি কমে আসে। ৫০ অক্ষাংশে তার গতি প্রতি সেকেন্ড প্রতি ৩১২ মিটারে চলে আসে। যে তথ্য সম্প্রতি জানা গেছে তা হলো, পৃথিবী সহ গোটা সৌরজগৎ এপেক্স অভিমুখে পরিভ্রমণ করে তাহলে পৃথিবীর মূল দুটি গতির পাশাপাশি আরও দুটি গতি অর্থাৎ মোট চারটি গতি আমাদের সামনে প্রতিভাত হচ্ছে।
১.আহ্নিকগতি,
২.বার্ষিক গতি,
৩.সৌর গতি ,
৪.সূর্যাক্ষের গতি
Table of Contents
আহ্নিক গতি কি
পৃথিবী কমলালেবুর মত গোল, এই তথ্য আমাদের কারো অজানা নয়৷ ধরে নেওয়া যাক, গোলাকার পৃথিবীর মাঝ বরাবর একটি রেখা টেনে দেওয়া হল। এই রেখাটিকে বলা হয় মেরু রেখা। পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে তার নির্দিষ্ট গতিতে অবিরাম ঘুরতে থাকে৷ নিজ অক্ষের চারদিকে আবর্তিত হতে পৃথিবীর সময় লাগে ২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট ৪ সেকেন্ড বা ২৪ ঘণ্টা অর্থাৎ এক দিন। এটিকে বলা হয় সৌরদিন। নির্দিষ্ট গতিতে পৃথিবীর পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে দিনে একবার আবর্তিত হওয়া আহ্নিক গতি নামে পরিচিত।
পৃথিবী পুরোপুরি গোল না। রাত আস্তে আস্তে এবং ক্রমান্বয়ে দিনে রূপান্তরিত হয়, অনুরূপভাবে দিন ও আস্তে আস্তে এবং ক্রমান্বয়ে রাতে পরিবর্তিত হয়। পৃথিবী গোলাকৃতির হলেই কেবল এ ঘটনা ঘটতে পারে ।
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সূরা হিজরে ১৯ নং আয়াতে এরশাদ করেন:
وَ الۡاَرۡضَ مَدَدۡنٰهَا وَ اَلۡقَیۡنَا فِیۡهَا رَوَاسِیَ وَ اَنۡۢبَتۡنَا فِیۡهَا مِنۡ کُلِّ شَیۡءٍ مَّوۡزُوۡنٍ
আমি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছি, তাতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি, আর আমি তাতে সব কিছু উদ্গত করেছি সুপরিমিতভাবে।
আধুনিক বিজ্ঞানের বহু আগে কোরআনের এ আয়াত পাঠ করে ইমাম ইবনে হাজম আন্দালুসি (রহ.) পৃথিবী গোলাকার হওয়ার কথা বলেছেন।
আল্লাহ সূরা যুমার ৫ নং আয়াতে বলেনঃ
خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ يُكَوِّرُ اللَّيْلَ عَلَى النَّهَارِ وَيُكَوِّرُ النَّهَارَ عَلَى اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُسَمًّى أَلَا هُوَ الْعَزِيزُ الْغَفَّارُ
তিনি আসমান ও জামিন কে সৃষ্টি করেছেন যথার্থভাবে। তিনি রাতকে দিন দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং রাত দ্বারা আচ্ছাদিত করেন।
যেসব কক্ষপথে নক্ষত্রসমূহ, সূর্য ও চন্দ্র ঘুর্ণয়মান রয়েছে সেগুলো আল্লাহ তায়ালাই নির্ধারণ করে দিয়েছেন। পৃথিবী নিজের অক্ষের ওপর ঘুর্ণয়নের পাশাপাশি সূর্যের কক্ষপথে আবর্তিত হওয়ার কারণে দিন-রাত সৃষ্টি হচ্ছে এবং ঋতু পরিবর্তিত হচ্ছে। নিঃসন্দেহে বিশ্বজগতের এই সুনির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন সৃষ্টির বৃহৎ কোনো লক্ষ্য আছে এবং সে লক্ষ্যেই এগুলো পরিচালিত হচ্ছে। এই মহা জটিল কর্মযজ্ঞ ও বিস্ময়কর মহাজাগতিক ক্রিয়াকলাপ দৈবক্রমে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা হতে পারে না।
রাত ও দিনের আবর্তন তখনই সম্ভব যখন পৃথিবী গোলাকার হয়। পৃথিবী বলের মত গোলাকার নয়, বরং মেরুকেন্দ্রিক চেপ্টা।
আল্লাহ বলেন:
وَ الۡاَرۡضَ بَعۡدَ ذٰلِکَ دَحٰىه
“তিনি পৃথিবীকে এর পরে বিস্তৃত করেছেন। ”
সূরা নাযিআত -৩০
উটপাখীর ডিমের আকৃতির মতই পৃথিবীর আকৃতি মেরুকেন্দ্রিক চেপ্টা ।
কোরআন এভাবেই পৃথিবীর আকৃতি বিশুদ্ধভাবে বর্ণনা করেছে। অথচ যখন কোরআন যখন নাযিল হয় তখন প্রচলিত ধারনা ছিল পৃথিবী হচ্ছে চেপ্টা।
এ কারণে এর পৃষ্ঠ সব জায়গায় সমান নয়। তাই, পৃথিবীপৃষ্ঠের সব স্থানের আবর্তন বেগও সমান নয়। নিরক্ষ রেখায় পৃথিবীর পরিধি সবচেয়ে বেশি। এ জন্য নিরক্ষরেখায় পৃথিবীর আবর্তনের বেগও সবচেয়ে বেশি। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, পৃথিবীর এক প্রান্তে দিনতো অন্য প্রান্তে রাত। এটি হয় শুধুমাত্র আহ্নিক গতির কারণে। পৃথিবীর যে অংশ সূর্যের সামনে আসে সে অংশে দিন হলে অপর অংশে হয় রাত৷
আল কুরআনে সূরা লুকমানের ২৯ আয়াতে বলা হয়েছে,
أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ يُولِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَيُولِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي إِلَى أَجَلٍ مُسَمًّى وَأَنَّ اللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ ★ ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْحَقُّ وَأَنَّ مَا يَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ الْبَاطِلُ وَأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْعَلِيُّ الْكَبِيرُ ★
“তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করেন এবং দিবসকে রাত্রিতে প্রবিষ্ট করেন? তিনি চন্দ্র ও সূর্যকে কাজে নিয়োজিত করেছেন; প্রত্যেকেই নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত পরিভ্রমণ করে। তুমি কি আরও দেখ না যে, তোমরা যা কর, আল্লাহ তার খবর রাখেন?”
প্রথম যুগে মানুষ বিশ্বাস করত যে, পৃথিবী চেপ্টা ছিল। বহু শতাব্দীব্যাপী মানুষ দূরে সফরে যেতে ভয় পেত কি জানি পৃথিবীর কিনারা থেকে পড়ে যায় কিনা। কিন্তু স্যার ফ্রনকিস ড্র্যাক প্রথম প্রমান করেন যে, পৃথিবী গোলাকার । তিনি ১৫৯৭ সনে পৃথিবীর চারপাশে নৌভ্রমন করেন।
মহান আল্লাহ সূরা লোকমান ৩০ নং আয়াতে ইরশাদ করেন:
ذٰلِکَ بِاَنَّ اللّٰهَ هُوَ الۡحَقُّ وَ اَنَّ مَا یَدۡعُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِهِ الۡبَاطِلُ ۙ وَ اَنَّ اللّٰهَ هُوَ الۡعَلِیُّ الۡکَبِیۡرُ
“(এসব বিষয়) এটাই প্রমাণ (করে) যে, আল্লাহ-ই সত্য এবং তিনি ব্যতীত তারা যাদের পূজা করে সব মিথ্যা। আল্লাহ সুউচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন, সুমহান।”
আগের আয়াতগুলোর ধারাবাহিকতায় বিশ্বজগত সৃষ্টিতে মহান আল্লাহর আরো কিছু নিদর্শনের প্রতি ইঙ্গিত করে বিশ্বনবী (সা.) ও মুমিনদের উদ্দেশ করে বলা হচ্ছে: চন্দ্র ও সূর্যকে নির্দিষ্ট কক্ষপথে আবর্তনের মাধ্যমে দিন ও রাতের সৃষ্টি এবং ঋতুর পরিবর্তন মহান আল্লাহই ঘটান। তিনিই চন্দ্র ও সূর্যকে নির্ধারিত কাজে নিয়োজিত করে দিয়েছেন। আল্লাহর ইচ্ছায় দিন ও রাত্রির একের পর এক আবির্ভাব সম্ভব হয়েছে যা মানুষসহ সব প্রাণী ও উদ্ভিদের বেঁচে থাকার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।
আয়াতের পরের অংশে বলা হচ্ছে, দিন ও রাতের এই আবর্তন চিরস্থায়ী নয়। এর জন্য আল্লাহ নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তিনি যেদিন ইচ্ছা করবেন সেদিন এই বিশ্বজগতের সব নিয়মকানুন ওলটপালট হয়ে কিয়ামত সংঘটিত হবে। তখন দিবারাত্রির এই আবর্তন বর্তমান সময়ের মতো থাকবে না।
আহ্নিক গতির ফলাফল
১.আহ্নিক গতির কারণে পৃথিবীতে দিন-রাত্রি হয়৷ না হলে দেখা যেত পৃথিবীর এক প্রান্তে চিরকাল দিন থাকতো আর অন্য প্রান্তে সারা বছর রাত।
২.নদী বা সমুদ্রে দিনে দুবার জোয়ার হয় আর দুবার ভাটা৷ আহ্নিক গতির কারণে এই জোয়ার ভাটার সৃষ্টি।
বার্ষিক গতি কি?
মহান আল্লাহ সূরা নামল ৮৮ নং আয়াতে এরশাদ করেন:
وَتَرَى الْجِبَالَ تَحْسَبُهَا جَامِدَةً وَهِيَ تَمُرُّ مَرَّ السَّحَابِ صُنْعَ اللَّهِ الَّذِي أَتْقَنَ كُلَّ شَيْءٍ إِنَّهُ خَبِيرٌ بِمَا تَفْعَلُونَ ★
তুমি পর্বতমালাকে দেখে অবিচল মনে কর, অথচ এগুলি চলে মেঘমালার মত। এটা আল্লাহর কারিগরী। যিনি সবকিছুকে করেছেন সুসংহত।
কুরআন মাজিদের এই আয়াতটি মেঘমালার মত পর্বতমালার গতির উল্লেখের মাধ্যমে বর্ণনা দেয় যে, পৃথিবী নিজেও ঘুরে। কথিত আছে, পৃথিবী তার বর্তমান রূপ ও অবস্থা লাভ করেছে আনুমানিক পাঁচ বিলিয়ন বছর পূর্বে। যখন মহাবিশ্বের বয়স ছিল ১০ বিলিয়ন বছর। এর ব্যাস ৮,০০০ মাইল এবং তা সূর্য থেকে ৯৩ মিলিয়ন বা ৯ কোটি ৩০ লক্ষ মাইল দূরে অবস্থিত। এখন এটা প্রমাণিত যে, পৃথিবী সূর্যের চারদিকে আবর্তিত হয়। বিজ্ঞানীরা এই আবর্তনের গতিও হিসেব করেছেন।
পৃথিবী চন্দ্রকে সঙ্গে নিয়ে সূর্যের চারদিকে আবর্তিত হয় ঘণ্টায় ৬,০০০ মাইল বেগে এবং সূর্যের চারদিকে একটি আবর্তন সমাপ্ত করতে সময় নেয় প্রায় ৩৬৫ দিন ৬ ঘন্টা, ৪৬ মিনিট ৪৮ সেকেন্ড। এবং বছরে বিভিন্ন ঋতুর পরিবর্তন ঘটায়। যখন কোরান মাজিদ অবতীর্ণ হয়, তখন বিশ্বাস করা হত, সূর্যই ঘোরে, পৃথিবী স্থির। ষষ্ঠ শতাব্দীতে কোপানির্কাসই প্রথম বলেন, পৃথিবীও ঘোরে। অথচ কোরান মাজিদে এই সত্য অবতীর্ণ হয়েছে, বিজ্ঞানযুগের অনেক পূর্বে।
পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে তার নির্দিষ্ট গতিতে ক্রমাগত পাক খেতে খেতে কক্ষপথ ধরে সূর্যের চারিদিকে আবর্তন করছে৷ এ গতিটাকে বলা হয় পৃথিবীর বার্ষিক গতি। এই আবর্তনে পৃথিবীর সময় লাগে ৩৬৫ দিন ৬ ঘন্টা ৫৬ মিনিট ৫৪ সেকেন্ড। বার্ষিক গতির ফলে ঋতু পরিবর্তন হয়৷ বার্ষিক গতি না থাকলে ঋতু পরিবর্তন হতো না।
বার্ষিক গতির ফলাফল
১. বার্ষিক গতির কারণে ঋতু পরিবর্তন হয়৷
২. দিন ও রাতের সময়ের দৈঘ্যের পার্থক্য সাধারণত বার্ষিক গতির কারণে হয়ে থাকে৷
৩. কর্কটসংক্রান্তি ও মকরসংক্রান্তির মধ্যে পার্থক্যের প্রধান কারণ হচ্ছে বার্ষিক গতি।
৪. বার্ষিক গতির কারণে নক্ষত্রের স্থান পরিবর্তিত হয়।
সৌর গতি
সৌরজগতের তৃতীয় নিকটতম গ্রহ হল পৃথিবী। সূর্য তার পরিবারের সকল গ্রহ, উপগ্রহ গ্রহাণুপুঞ্জের সহ এক নির্ধারিত মঞ্জিলের দিকে ধাবিত হচ্ছে এটাকে বলে সৌর চূড়া।
সৌরজগৎ হল সূর্য ও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সূর্য-প্রদক্ষিণকারী তথা পরস্পরের প্রতি অভিকর্ষজ টানে আবদ্ধ মহাজাগতিক বস্তুগুলিকে নিয়ে গড়ে একটি ব্যবস্থা।
মহান আল্লাহ সূরা ইয়াসিন ৩৮ নং আয়াতে এরশাদ করেন:
وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَهَا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ
“এবং সূর্য তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ আল্লাহর বিধান (ও পরিমাপ) অনুযায়ী সম্পন্ন হয়।”
এ আয়াতের মাধ্যমে বুঝা যায় যে,চাঁদ, সূর্য ও পৃথিবীর ঘুর্ণয়ণ এবং রাত ও দিনের সৃষ্টি মহান আল্লাহর অসীম জ্ঞান ও ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। নিজ নিজ কক্ষপথে চন্দ্র, সূর্য ও পৃথিবীর আবর্তন সুনির্দিষ্ট ও সূক্ষ্ম হিসাবনিকাশের ফসল যা কেবল মহান স্রষ্টা আল্লাহ তায়ালার পক্ষেই সম্ভব। দৈবক্রমে এমন সুবিন্যস্ত প্রকৃতি সৃষ্টি হয়নি।
ক্ষুদ্রাকৃতির চাঁদের ক্রমেই পরিপূর্ণ চাঁদ হয়ে ওঠা আল্লাহ তায়ালার একটি মহান নিদর্শন। কুরআনে কারিমের অন্যত্র বলা হয়েছে, দিন, মাস ও বছর গণনার জন্য মহান আল্লাহ এ ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
সূর্যাক্ষের গতি:পৃথিবী নিজ অক্ষের উপর ২৪ ঘন্টায় একবার আবর্তিত হয় সূর্যের চারদিকে ৩৬৫ দিনে একবার ঘুরে আসে।সূর্যের অক্ষে ঘুরে আসতে পৃথিবীর সময় লাগে ২৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ।
মহান আল্লাহ সূরা আম্বিয়া ৩৩ নং আয়াতে ইরশাদ করেন:
وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ كُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ
“আর তিনিই রাত ও দিন এবং সূর্য ও চাঁদ সৃষ্টি করেছেন; সবাই নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করে”।
পবিত্র কোরআনে কারিমের ভাষ্যমতে প্রতিটি গ্রহ-নক্ষত্রের নিজস্ব গতি আছে। আপন আপন কক্ষপথে সেগুলো সন্তরণ করছে অনবরত।
মহান আল্লাহ সূরা ইয়াসিন ৩৮নং আয়াতে এরশাদ করেন:
وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَهَا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ
‘সূর্য নিজ অবস্থানস্থলের (গন্তব্য) দিকে চলতে থাকে। ’
আয়াতে সূর্যের গন্তব্য বুঝানোর জন্য আরবি ‘মুস্তাকার’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। শব্দটির অর্থ হচ্ছে, অবস্থানস্থল এবং অবস্থানকাল। শব্দটি কখনও ভ্রমণের শেষসীমার অর্থেও ব্যবহৃত হয়। বিরতি না দিয়ে পুনরায় ভ্রমণ শুরু করার অর্থও শব্দটি প্রদান করে।
‘অবস্থানকাল’ অর্থ হলে আয়াতের মর্ম হবে, সূর্য তার চলার নির্ধারিত সময় পর্যন্ত সন্তরণ করতে থাকবে। আর সেই সময়টি হলো, কেয়ামতের দিন। অর্থাৎ সূর্য একটি সুনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাপনায় নিজ কক্ষপথে পরিভ্রমণ করছে। এক মুহূর্তের জন্যও এতে হেরফের হয় না। তবে সূর্যের এই সন্তরণ অনন্তকালের জন্য নয়। বরং এই চলারও একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে। এক সময়ে এর গতি স্তব্ধ হায়ে যাবে। তখনই কেয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে। এই তাফসির বিখ্যাত তাবেয়ি হজরত কাতাদা রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত।
আর যদি আয়াতে ব্যবহৃত শব্দ ‘মুস্তাকার’ দ্বারা অবস্থানস্থল উদ্দেশ্য হয়, তাহলে অর্থ হবে- সূর্য সৃষ্টিলগ্ন থেকে তার কক্ষপথের যে স্থানটি থেকে আবর্তন শুরু করেছে, বৃত্তাকারে সেদিকেই সেটি চলতে থাকে। ঠিক সেখানে গিয়ে তার একবারের প্রদক্ষিণ শেষ হয়। এভাবে আবার দ্বিতীয় ঘূর্ণনপ্রক্রিয়া শুরু হয়।
অপর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে,
لَا الشَّمْسُ يَنْبَغِي لَهَا أَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ
‘সূর্য ও চন্দ্র নিজ নিজ কক্ষপক্ষে সন্তরণ করে। ’
[সূরা ইয়াসিন: ৪০]
‘ফালাক’ শাব্দের অর্থ ‘আকাশ’ নয়, বরং যে কক্ষপথে গ্রহ নক্ষত্র বিচরণ করে তাকেই ‘ফালাক’ বলে। এই আয়াতের আলোকে বলা যায়, চন্দ্র (ইত্যাদি গ্রহ-নক্ষত্র) আকাশের গায়ে প্রোথিত নয়। যেমনটি গ্রীক দার্শনিকদের অভিমত। তবে আধুনিক গবেষণা কোরআনে কারিমের বাণীকে চাক্ষুস প্রমাণে উন্নীত করেছে।
প্রায় পনের শত বছর পূর্বে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও এক্ষেত্রে কোরআনে কারিমের সঙ্গে আধুনিক গবেষণার অপূর্ব মিল রয়েছে। এ জাতীয় অসংখ্য আধুনিক গবেষণার ফলাফল কোরআন মজিদের সঙ্গে মিলে যায়। বিজ্ঞানের এ জাতীয় গবেষণা মেনে নিতে ইসলামি শরিয়তেরও কোনো বাঁধা নেই।
আলহামদুলিল্লাহ।