আমরা অনেকেই বই পড়ি, কিন্তু কিছুদিন পর কী পড়েছি সেটা ভুলে যাই। বইয়ে অনেক তথ্য থাকে, সবগুলো তথ্য মনে রাখা সম্ভব হয় না। এই সমস্যাটি প্রায় প্রত্যেক পাঠকের। কোনো পাঠক আছেন, তারা একটি বই পড়ার ১ বছর পর বইয়ের ২০-৩০% তথ্য মনে রাখতে পারেন, কেউবা মাত্র ৫%।
কিভাবে বই ভালোভাবে পড়তে হয় এবং মনে রাখতে হয় এই নিয়ে আজকের লেখাটি।
১। বই পড়ার আগে উদ্দেশ্য ঠিক করে নেয়া:
সবসময় যে মানুষ জ্ঞানার্জনের জন্য বই পড়ে, এমন না। কখনো মানুষ শুধুমাত্র অলস সময় কাটানোর জন্য বই পড়ে, কখনোবা বাধ্য হয়ে বই পড়ে। মানুষ যেভাবেই বই পড়ুক না কেনো, তার জ্ঞানার্জন হয়। কিভাবে?
মানুষ জ্ঞানার্জন করে সাধারণত দুইভাবে:
অবচেতনভাবে
সচেতনভাবে
অবচেতনভাবে জ্ঞানার্জনকে ইন-জেনারেল আমরা বলি ‘অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান’। অনেকক্ষেত্রে এধরণের জ্ঞানার্জন দীর্ঘস্থায়ী হয়।
সচেতনভাবে জ্ঞানার্জন হলো, প্ল্যান-পরিকল্পনা করে কোনো কিছু সম্পর্কে জানার প্রয়াস। হতে পারে কোনো কোর্স করে, কোনো বিষয়ে জানার জন্য একাধিক বই পড়ে।
একটি বই পড়ার আগে আপনি ঠিক করে নিন, এই বইটি আমি কেনো পড়ছি। এটা খুব সহজ জিনিস। কিন্তু, বেশ কার্যকর। মনে করুন, আপনি রালফ এম. লুইসের ‘Behold The Sign’ বইটি পড়ছেন। এই বইটি পড়ার পেছনে আপনার মূল উদ্দেশ্য হলো ড্যান ব্রাউনের উপন্যাসের রবার্ট ল্যাংডনের মতো সিম্বোলজি সম্পর্কে জানবেন।
তখন দেখবেন বইটি পড়তে গিয়ে মজা পাচ্ছেন। এই বই পড়া শেষ হলো এই ধরণের একাধিক বই পড়তে মন চাইবে। আপনি খুঁজে খুঁজে জে. ই. কার্লটের ‘A Dictionary of Symbols’, মাইকেল স্নাইডারের ‘Symbology: Hidden in Plain Sight. the Secret Life of Symbols’ পড়তে চাইবেন।
২। টপিক নির্বাচন করে বই পড়া:
কোনো বিষয়ে ভালো জানাশোনার জন্য ঐ টপিকে কী কী বই আছে সেটা আগে থেকে ঠিক করে নিতে পারেন। এজন্য যারা ঐ বিষয়ের বিশেষজ্ঞ, তাদের সহযোগিতা নিতে পারেন, গুগলে সার্চ দিতে পারেন, বইয়ের গ্রুপে জিজ্ঞেস করতে পারেন।
টপিক ঠিক করার পর আস্তে আস্তে ঐ টপিকের বইগুলো এক-এক করে পড়লে ঐ বিষয়ে মোটামুটি একটি ধারণা পাবেন।
যেমন: আপনি নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জীবনী পড়তে চান।
এজন্য কারো পরামর্শ নিয়ে আপনি বুকলিস্ট সাজিয়ে পড়া শুরু করতে পারেন।
তিনিই আমার প্রাণের নবী – শায়খ আলী জাবের আল ফিফী
তোমাকে ভালোবাসি হে নবী – গুরুদত্ত সিং
মহানবী – মাজিদা রিফা
সীরাহ – রেইনড্রপস পাবলিকেশন।
৩। বই পড়ার সময় দাগিয়ে পড়া:
বই পড়ার সময় কালার পেন অথবা হাইলাইটার দিয়ে দাগিয়ে পড়তে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো দাগিয়ে পড়লে পড়ার সময় যেমন মনোযোগ ধরে রাখতে পারবেন, প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো খুঁজে পেতেও সহজ হবে।
৪। নোট করা:
বই পড়া শেষে গুরুত্বপূর্ণ অংশ নোট করতে পারেন। এতে করে সেগুলো মনে থাকবে। ছোটোবেলা আব্বার কাছে শুনতাম:
“কোনো জিনিস পড়লে সেটা একবার মনে থাকে, লিখলে সেটা দশবার মনে থাকে। একবার লিখা দশবার পড়ার সমান।”
মনে করুন, আমি ‘ইসলামের বুনিয়াদী শিক্ষা’ বইটি এখন পড়বো। এই বইটি পড়তে আমার দুইদিন লাগবে (মোট ৬ ঘন্টা)। বইটি পড়া শেষে গুরুত্বপূর্ণ অংশ নোট করতে লাগবে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা। এই দুই-আড়াই ঘন্টা নোট করার সময় গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলাম, সেটার স্থায়িত্ব দিলাম।
আরেকটি কথা। নোট খাতায় না করে মোবাইল বা ল্যাপটপে করতে পারেন।
যেহেতু বইয়ের নোট যেকোনো সময় আপনার কাজে লাগবে, এটা হাতের কাছে থাকলে ভালো। তাছাড়া, খাতার লেখা কয়েক বছর পর নষ্ট হয়ে যেতে পারে, হারিয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে মোবাইলের নোটবুকে বা ল্যাপটপের ওয়ার্ডফাইলে লিখে ড্রাইভে আপলোড দিতে পারেন।
৫। অবসর সময়ে পড়া বই নেড়েচেড়ে দেখা:
অনেকসময় আপনার হাতে নতুন বই না-ও থাকতে পারে কিংবা বই পড়তে ভালো না-ও লাগতে পারে। তখন পুরনো পঠিত বইগুলো একটু উল্টেপাল্টে দেখতে পারেন। দেখবেন একবছর আগের পড়া একটি বিষয় নতুনভাবে উপলব্ধি করতে পারছেন, মনে হবে নতুন তথ্য।
কথায় আছে:
“তিনটি ভালো বই পড়ার চেয়ে একটি ভালো বই তিনবার পড়া উত্তম।”
একই বই বিভিন্ন বয়সে, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে পড়লে একেকধরণের ম্যাসেজ পাবেন।