কিভাবে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলবেন?
বই পড়ুয়া বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিলে আমার মধ্যে এক ধরণের আফসোস জন্মে। কিংবা ড. সলিমুল্লাহ খানের টকশো দেখার পর বই পড়ার অনেক আগ্রহ জন্মে। মনে হয়, “ইশ! অনেক বই পড়তে পারতাম যদি!”
অনেকেই বই পড়েন, কিন্তু বই পড়াকে অভ্যাস বানাতে পারেননি। হাতের কাছে বই থাকলে উল্টেপাল্টে দেখেন আরকী। খুব আগ্রহ নিয়ে বই পড়া বলতে যা বুঝায়, সেটা তারা করেন না।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, বই-আর্টিকেল পড়ে, টেডেক্সের ভিডিওগুলো দেখে কিভাবে বই পড়াকে অভ্যাসে পরিণত হয় সেটা নিয়ে কিছু পয়েন্ট শেয়ার করি।
১. নিজের পছন্দের কোনো বই হাতের কাছে রাখা:
যারা বই পড়া শুরু করতে চান, তারা কোন বইটি দিয়ে শুরু করবেন এটা ঠিক করে দেয়া যায় না। একেকজনের পছন্দ, রুচি একেকরকম। আমার কাছে একটি বই পড়ে ভালো লেগেছে, আরেকজনের কাছে ভালো না-ও লাগতে পারে।
গল্প-উপন্যাস পড়তে আমার ভালো লাগে। স্কুল-কলেজ জীবনে বিশেষ করে হুমায়ূন আহমেদের বই পড়ে আমি বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলি। একুশ শতকের বেশিরভাগ বাংলাদেশী পাঠক হুমায়ূন আহমেদের বই পড়েই বই পড়াকে অভ্যাসে পরিণত করেছে।
সেই হিশেবে বলা যায়, যে লেখকের বই পড়লে বই পড়ার প্রতি আপনার আগ্রহ বাড়ে, সেই লেখকের বই দিয়ে শুরু করতে পারেন। হতে পারে সেটা আবুল আসাদের ‘সাইমুম সিরিজ’, নসীম হিজাজীর উপন্যাস, মাজিদা রিফার ‘মহানবী’, তিন গোয়েন্দা বা মাসুদ রানা সিরিজ।
২. পড়ুয়া কারো সান্নিধ্যে যাওয়া:
প্রচুর বই পড়ে, এরকম কারো সাথে গল্প করলে দেখবেন আপনার মনেও পড়ার প্রতি আগ্রহী জাগবে। তাদের সাথে কথা বললে কতো নাম না জানা বইয়ের নাম জানা যায়। আপনি হয়তো এক জনরার বই পছন্দ করেন, তিনি হয়তো আরেক জনরার। আড্ডা দেবার সময় আপনি অন্য জনরার বইয়ের সাথেও পরিচিত হলেন।
৩. ধার করাকে ‘না’ বলা
বই পড়াকে অভ্যাস বানাতে চাইলে ধার করে বই পড়াকে ‘না’ বলতে হবে। একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে অন্তত ২-৩ টি বই কিনে পড়ুন। ২০০ টাকা দামের বই কিনতে না পারলে অন্তত ২০-৫০ টাকা দামের ম্যাগাজিন কিনুন। কিন্তু, শুরুতেই অন্যের কাছে বই ধার চাইতে যাবেন না। এটা ব্যক্তিত্বের প্রশ্ন। ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে ‘পড়ুয়া/পাঠক’ খ্যাতি লাভ করে কী করবেন?
৪. পড়ার জন্য সময় নির্ধারণ:
দিনে আপনার নানান ব্যস্ততা থাকতে পারে। আপনি একজন গৃহিণী হতে পারেন, সন্তানের মা হতে পারেন, চাকরিজীবী হতে পারেন, শিক্ষার্থী হতে পারেন, ব্যবসায়ী হতে পারেন। ২৪ ঘন্টার মধ্যে কখন আপনি ব্যস্ত থাকেন আর কখন আপনি ফ্রি থাকেন সেটা সবচেয়ে ভালো আপনিই জানেন।
২৪ ঘন্টার মধ্যে মাত্র ৩০ মিনিট বই পড়ার জন্য আলাদাভাবে বরাদ্দ করুন। হতে পারে সেটা ঘুম থেকে উঠে, রাতে ঘুমানোর আগে, দুপুরের খাবার খেয়ে শুয়ে-বসে।
৫. অবসর সময়কে কাজে লাগান:
প্রতিদিন এমন কিছু সময় থাকে, যে সময়টা আমরা কিছু না করেই কাটাই। যেমন: ক্লাসে স্যার/ম্যাম চলে যাবার পর আরেকজন স্যার/ম্যাম আসার আগে কমপক্ষে ১০-১৫ ব্রেক থাকে। কিংবা ঢাকা শহরে বাসে কোথাও যাবার সময় রাস্তায় ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যামে কাটাতে হয়।
আমি আমার জীবনে যতো বই পড়েছি, তারমধ্যে কমপক্ষে ২৫% হবে ক্লাসের ফাঁকে অথবা রাস্তায় জ্যামে বসে পড়েছি। হাতে বই থাকলে, কোনো তাড়া না থাকলে রাস্তার জ্যাম আমি খুব উপভোগ করতাম।
এই সময়গুলো এমনিতেই কেটে যায়। ব্যাগের মধ্যে একটি বই রাখুন, দেখবেন সেই সময়গুলো বই পড়ে কাটাতে পারছেন।
৬. নিজেকে গিফট দেয়া:
আমাদের প্রত্যেকেরই বিশেষ শখ, দূর্বলতা আছে। কেউ হয়তো কাচ্চি-বিরিয়ানি খেতে পছন্দ করে, কেউ হয়তো আইসক্রিম, কেউ হয়তো শুটকি ভর্তা, কেউ হয়তো কোথাও ঘুরতে যেতে, কেউ হয়তো ফেসবুকিং করতে।
আপনি ঠিক করে নিন যে, আমি ‘ইসলামি জ্ঞানে উসূলের ধারা’ বইটি পড়বো। এই বইটি পড়া শেষে নিজেকে ট্রিট দেবো!
নিজে যা খেতে ভালোবাসেন, যা করতে ভালোবাসেন বই পড়া শেষে সেই ভালো লাগার কাজটি করতে পারেন। কিংবা এমনও হতে পারে, এই বইটি না পড়ে আমি রাতের খাবার খাবো না। পড়া শেষ করেই খাবো।
এতে করে বইটি পড়তে উৎসাহ পাবেন, বইটি শেষ করতে তাড়া অনুভব করবেন। বই পড়ার অভ্যাস গড়ার প্রাথমিক পর্যায়ে এটা বেশ কার্যকর।
৭. বই পড়ার বাধা দূরীকরণ:
বই পড়ার সময় বাধা হয়ে দাঁড়ায়, এমন কিছু থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন। অনেকেই টিভি দেখতে-দেখতে, ফেসবুক-ইউটিউব চালাতে-চালাতে বই পড়েন। এতে আসলে বই পড়ায় মনোযোগ দেয়া যায় না। এগুলো বই পড়ার সময় বাধা হয়ে দাঁড়ায়, মনোযোগ বিঘ্নিত করে।
আপনি দিনে অল্প সময়ই বই পড়ুন, কিন্তু সেই সময়টাতে পুরো ফোকাস যেনো থাকে বই পড়া নিয়ে।