একটা গল্প দিয়ে শুরু করি…
এক গ্রামে এক বুড়ি মা ছিলেন। সেই বুড়ি মায়ের একমাত্র কাজ ছিলো মানুষের খুঁত খুঁজে বের করা। বিশেষ করে গ্রামে নব বিবাহিতা বধুর খুঁত বের করতে সে ছিল রিতিমত অভিজ্ঞ। গ্রামে কাউকে বিয়ে করানো হলেই সে পরের দিন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে নববধূর খুঁত খুঁজে বের করতো, আর তারপর গ্রামশুদ্ধ বলে বেড়াতো-অমুক অমুকের ছেলের বউয়ের গায়ের রং কালো, নাক বোচা, দাঁত বড়, অমুকের ছেলের বউ খাটো, চেহেরা ভালো না। সেই বুড়ি মায়ের সমালোচনা আর কটুক্তির হাত থেকে রক্ষা পেতো না কোন নববধুই।
একসময় গ্রামের সবচেয়ে ভালো এবং ভদ্র ছেলেটির বিয়ের পালা এলো। বুড়ি মা সবার বউ দেখেই এটা ওটা নানা খুঁত বের করে তাই গ্রামের সব লোক মিলে সিদ্ধান্ত নিলো এই ছেলেটির জন্য এবার এমন একটি বউ নিয়ে আসবে যেন কেউ তো নয়ই, ওই বুড়িও যেন কোন খুঁত খুঁজে না পায়। আশেপাশের দশ-বিশ গ্রাম খুঁজে লাখে একটা হয় এমন একটি নিখুঁত মেয়েকে ছেলেটির বউ করে নিয়ে আসলো।
যথারীতি পরদিন সকাল থেকে এক এক করে বউ দেখতে আসতে থাকলো গ্রামের অন্যান্য মেয়েরা। সবাই সুন্দর নিখুঁত বউ দেখে প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এক এক করে দেখার পালায় একসময় ওই বুড়ি মা ও বউ দেখতে চলে আসে।
বুড়ি মা মনযোগ দিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নতুন বউকে দেখে। দীর্ঘক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে বউ দেখেও কোন খুঁত খুঁজে পায় না। বুড়িমা এবারের বউ দেখে কি কমেন্ট করে তা দেখতে অপেক্ষা করে আছে গ্রামের মানুষজন। তো একসময় বুড়ি মায়ের বউ দেখা শেষ হয়। রাস্তা দিয়ে যাবার সময় লোকজন জিজ্ঞাসা করে,
‘বুড়িমা বউ কেমন দেখলে?’
বুড়িমা উত্তর দেয়-
‘বউ তো ভালো কিন্তু বেশি ভালো ভালো না।’
গল্পটা কেন উল্লেখ করলাম এবার সে প্রসঙ্গে আসা যাক।
কিছু মানুষ আছে যাদের চোখ ভালো কিছু দেখতে পায় না, শুধু মানুষের ভুল-ত্রুটি আর খুঁতগুলোই দেখতে পায়। শতচেষ্টা করেও আপনি এসকল মানুষদের কাছে ভালো হতে পারবেন না, আর যদি হয়েও যান তখন বলবে ‘বেশি ভালো ভালো না’।
নিজের খারাপ অভ্যাস, আচরণগুলো বদলে যখন আপনি ভালো হবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তখন কিছু মানুষ বাঁকা চোখে তাকাবেই। এরা আমাদের ভালো কাজ, ভালো আচরণেও গন্ধ খুঁজে বেড়াবে। আপনি যতই ভালো হন না কেন তবুও তাদের খোঁচা থেকে মুক্তি পাবেন না। সহজ সরল ভালো মানুষ দেখলে এদের ভাবনায় আসে-
‘ও এতো ভালো কেন! নিশ্চয়ই কোন মতলব আছে।’
একটা মানুষ খারাপ হলে সমস্যা নাই, কিন্তু ভালো হলে তাকে সন্দেহ করে আমরা মতলব খোঁজা শুরু দিই, একের পর এক খোঁচা দিতে থাকি। খারাপ হওয়া যেন স্বাভাবিক আর ভালো হলেই তার ভেতর ঘাপলা খুঁজে বেড়াই। এই সমাজের নৈতিকতার এতোটাই অধঃপতন হয়েছে যে, খারাপ হওয়াটাই সকলের কাছে কাম্য আর এটাই যেন স্বাভাবিক।
এসব মানুষের কটুক্তি গায়ে মাখাবেন না, মনে রাখবেন সব মানুষের চোখেই আপনি ভালো হতে পারবেন না। আর কিছু মানুষ আপনার দোষ, ত্রুটি, খুঁত খুঁজে বের করবেই, ভেবে নেবেন তাদের চোখ ভালো কিছু দেখতেই পায় না। কোন কটুক্তিতে বিভ্রান্ত হয়ে নিজের বদলে যাওয়াকে থামিয়ে দেবেন না। আপনার পরিবর্তন যদি রবের জন্য হয় তবে লোকে কি ভাবলো তাতে কি আসে যায়?
রব তো জানে আপনার এ পরিবর্তন কার জন্যে। সারা দুনিয়ার মানুষ ভাবুক না খারাপ!
রবের চোখে ভালো হতে পারলে, কি আসে যায় মানুষের খারাপ ভাবনায়।