কাবিন নিরাপত্তার মাপকাঠি নয়
টাকাই যদি নিরাপত্তার একমাত্র অবলম্বন হয়, তাহলে ২০লাখ টাকা কাবিন হওয়ার পরেও সেই সংসার টিকে না কেন? অন্যদিকে ২০হাজার টাকা কাবিনের সংসার কিভাবে মৃত্যু পর্যন্ত টিকে থাকে?
আচ্ছা ধরে নিলাম, টাকাটা নিরাপত্তার একমাত্র মাধ্যম। এই মাধ্যম কী আদৌও আমাদের জন্য উপকারী?
ধরুন! আপনি আপনার মেয়েকে একজনের সাথে বিয়ে দিলেন, নিরাপত্তা স্বরুপ কাবিন ধরলেন ১০লক্ষ টাকা, যদিও ছেলের সামর্থ্য অতটা নয়। ২ লাখটাকা উসুল ও ৮ লাখটাকা বাকিতে বিয়েটা হয়ে গেলো। কিছুদিন সংসার করার পর, মেয়ে বুঝলো যে তার স্বামী ভালো চরিত্রের নয়, পাশাপাশি মেয়ের উপর নেমে আসলো অকথ্য নির্যাতন, কিন্তু ছেলে সেই মেয়েকে ডিবোর্স দিতে রাজি নয়, কারণ ডিবোর্সের কথা আসলেই আগে কাবিন আদায়ের কথাও চলে আসবে।
ছেলে এদিকে ডিবোর্সও দিলো না, অন্যদিকে নির্যাতনও করছে! আর আপনিও না পাচ্ছেন আপনার কাবিন, আর না পাচ্ছেন ডিবোর্স, তাহলে এই নিরাপত্তা আপনার জন্য কী আসলেই উপকার হলো না, উল্টো অপকার হয়ে দাঁড়িয়েছে!
মনে মনে এখন হয়তো মামলার চিন্তা করছেন! তাহলে বলতে হয়, এটা বাঙলাদেশ, এখানে সব টাকারই খেলা। মামলা দিয়ে সেই মামলা চালানোর মতো সামর্থ্য না থাকলে তাহলে সেই মামলা বিপরীত পক্ষের টাকার স্রোতে ভেসে যাবে। আর সামর্থ্য থাকলে, সেই ৮লাখটাকা আদায়ের জন্য আপনার আরও ৩ লাখটাকা খরচ করা লাগবে। প্রতিপক্ষ যদি একটু সামর্থ্যবান হয়, তাহলে তো আর কথায় নেই, বাকিটা জীবন নিজের এবং প্রতিপক্ষের মামলা উঠা নামা করার মধ্যেই চলে যাবে। যাচ্ছেও।
আপনার কাবিনই আপনার জীবনের নিরাপত্তার বদলে নিয়ে আসবে একঝাঁক অশান্তি। সেই অশান্তির দলবদ্ধ অত্যাচারে জীবনটা হয়ে যাবে বিষাদময়। তখন হয়তো রব্বকে অভিযোগ করে বলবেন আপনার সাথেই কেন এমন হলো!
সামর্থ্যবানরা অবশ্যই তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী কাবিন আদায় করবে, তবে এই কাবিনকে নিরাপত্তার মাপকাঠি হিসেবে ধরা যাবে না, যা বর্তমানে আমরা করছি। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে কাবিনটা স্রেফ একটা মেয়ের হক্ব হিসেবে ধরা হতো, নিরাপত্তা হিসেবে নয়। যার কারণে মেয়েরা তাদের হক্ব সামান্য পরিমাণ হলেও সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহণ করে নিত।
আপনাকে একটা জিনিস বুঝতে হবে, তালাক জিনিসটা এমনি এমনি আসে নি। ১০লাখ টাকা কারোর উপর চাপিয়ে দিয়ে তার সাথে আজীবন অকথ্য নির্যাতন সহ্য করে ঘরসংসার করার জন্য আসে নি। তালাকের কিছু নির্ধারিত সীমাপরিসীমা রয়েছে। সেই সীমা ছাড়িয়ে গেলে আপনার তালাকের আশ্রয় নিতে হবে। এখন চাপিয়ে দেওয়া কাবিনই যদি আপনাকে সেই তালাকের প্রতিবন্ধকতা হয়, তাহলে তা অবশ্যই আপনার জন্য সুফল বয়ে আনবে না।
রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ অনুযায়ী, যারযার সামর্থ্য অনুযায়ী কাবিন আদায় এবং তা নগদ পরিশোধ করার মধ্যেই সবার জন্য কল্যাণ। যেটা বর্তমানে অনেকেই বুঝতে চান না। যার হাজার টাকা কাবিন আদায়ের সামর্থ্য আছে, সে হাজার, যার লাখ আছে সে লাখ, এমনকি যার কোটি টাকা কাবিন আদায় করার সামর্থ্য আছে সে কোটি আদায় করুক, তাতে কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু তা নগদে আদায় করুক।
নিরাপত্তার নামে কারো উপর মাত্রাতিরিক্ত কাবিন চাপিয়ে দিয়ে, আমরা কেউ যেনো নিজেদের ছেলে-মেয়েদের জীবনকে বিপদগ্রস্ত না করি। কেননা কাবিন কখনোই কারোর নিরাপত্তার মাপকাঠি হতে পারে না। আর যে নিরাপত্তা জোরপূর্বক আদায় করা হয়, সে নিরাপত্তার মধ্যে শোক ছাড়া কোনো শান্তি নেই। কারণ বিয়ে জিনিসটা শারিরীকের পাশাপাশি আত্মিক শান্তির অন্যতম মাধ্যম। মনের বিরুদ্ধে কখনোই জোরাজোরি নেই, থাকলে তাতে আর সুখ নিহিত থাকে না।
গতবারে অনেকেই বলেছিলেন, কাবিনের ব্যাপারে বলি, কিন্তু যৌতুকের ব্যাপারে বলি না কেন?
কারণটা হলো যৌতুক দেয়া এবং নেয়া দুটোই সমান অপরাধ। যেই অপরাধে আপনি অন্যকে অভিযুক্ত করছেন, সেই একই অপরাধে তো আপনিও অপরাধী তাহলে বিচারটা করবো কার শুনি? তবুও যৌতুক একটি নিকৃষ্ট কাজ। এরচে নিন্দনীয় কাজ আর সমাজে নেই।
কিন্তু, তার আগে আরেকটা কথা মাথায় রাখতে হবে, যে ছেলের হাতে আমি আমার মেয়েকে বিয়ে দিব, সেই ছেলে যদি যৌতুক চায়, তাহলে সেই ছেলের মানসিকতা যে কতটা নিচু ও জঘন্য তা কিন্তু তখনই বুঝে ফেলা যায়। তো জেনে-বুঝে শুনে যৌতুক দিয়ে আবার তাকেই অভিযুক্ত করার মানে হয় না! কারণ, আপনি জেনেই একজন জঘন্য মানসিকতার মানুষের হাতে আপনার মেয়েকে তুলে দিয়েছেন। টাকার জন্য যে আপনার মেয়েকে বিয়ে করেছে, সে কীভাবে মনের বিষয় বুঝবে?
আর, যেখানে মনের মিল নেই সেখানে সুখ কীভাবে আপনি আশা করবেন বলেন আমায়। যার কারণে যৌতুকের অভিযোগ করায় একপ্রকার ভুল। যে যৌতুক চায়, সে অবশ্যই ভালো ছেলে এবং ভালো পরিবার হতে পারে না। আর যে ছেলে ভালো না তাকে আমি আমার মেয়ে বিয়ে দিব না,শেষ। আর যদি দি, তাহলে দোষটাও আমারও কোনো অংশে কম নয়।