কদরের রাতে নফল সালাতে সূরা কদর তিলাওয়াত করা
কদরের রাতে নফল সালাতের প্রত্যেক রাকআতে কি সূরা কদর তিলাওয়াত করতে হয়?
এ কথায় কোনও সন্দেহ নাই যে, লাইলাতুল কদর বা শবে কদর বছরের শ্রেষ্ঠ রাত। এর মর্যাদা এক হাজার মাসের চেয়েও বেশি।
(সূরা কদর: ৩)।
এ মর্যাদাপূর্ণ রাতে ঈমানের সাথে ও সওয়াবের নিয়তে কিয়াম (নফল ইবাদত-বন্দেগি) করলে আল্লাহ তাআলা পেছনের সকল গুনাহ মোচন করে দিবেন যদি তিনি তা কবুল করেন।
যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় রমজানের সিয়াম পালন করে তার পূর্বকৃত সমস্ত গুনাহ মোচন করে দেয়া হয় আর যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় কদরের রাতে কিয়াম করে তারও পূর্বের সকল গুনাহ মোচন করা হয়।” (বুখারি ও মুসলিম)
সুতরাং যথাসম্ভব নফল সালাত, দুআ, জিকির, কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদির মাধ্যমে এ মহিমান্বিত রাত জাগরণের চেষ্টা করতে হবে।
হাদিসে এ রাতে নফল সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে (সূরা ফাতিহা ছাড়া) নির্দিষ্ট কোনও সূরা পড়ার নির্দেশনা আসে নি। সুতরাং ‘কদরের রাতে নফল সালাতের প্রত্যেক রাকাতে সূরা কদর তিলাওয়াত হবে’ এমন কোনও কথা হাদিস সম্মত নয়।
বরং সঠিক কথা হল, সূরা ফাতিহার পর কুরআনের যেখান থেকে সুবিধা হয় সেখান থেকে পাঠ করা যাবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَاقْرَءُوا مَا تَيَسَّرَ مِنَ الْقُرْآنِ
“কুরআনের যতটুকু তোমাদের জন্যে সহজ হয় ততটুকু তিলাওয়াত কর।”
(সূরা মুযযাম্মিল: ২০)
তবে এ ক্ষেত্রে যথাসাধ্য অধিক পরিমাণে কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে কিয়ামকে দীর্ঘ করা, অধিক পরিমাণে দুআ-তাসবিহ পাঠ করার মাধ্যমে রুকু ও সেজদাকে লম্বা করা উত্তম।
কেউ যদি এ রাতের সালাতে বিশেষ কোনও সূরা তিলাওয়াত করাকে সুন্নত মনে করে বা নির্দিষ্ট কোনও সূরা পড়াকে নিয়মে পরিণত করে তাহলে তা বিদআত হিসেবে গণ্য হবে। কারণ হাদিসে কোনও সূরা নির্ধারণ করা হয়নি। সুতরাং আমাদের জন্যও তা নির্ধারণ করা বৈধ নয়।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ فَهُوَ رَدٌّ
“যে ব্যক্তি দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয় এমন নতুন জিনিষ চালু করল তা পরিত্যাজ্য।
[সহিহ বুখারি, অধ্যায়: সন্ধি-চুক্তি।]
সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে:
مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ
“যে ব্যক্তি এমন আমল করল যার ব্যাপারে আমার নির্দেশ নাই তা প্রত্যাখ্যাত।”
[সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: বিচার-ফয়সালা]
আল্লাহ আমাদেরকে সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করে এবং বিদআত থেকে দূরে থেকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের তওফিক দান করুন।
আমিন।
আল্লাহু আলাম।