এক বেদুঈনের অদ্ভুত কাণ্ড: নবিজীর (সা:) প্রতিক্রিয়া। নবিজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সীরাতের ফ্ল্যাশব্যাকে চলে যাবার আগে আমাদের নিত্যদিনের একটি ঘটনা দিয়ে শুরু করি। আমাদের স্বাভাবিক আচরণ কেমন সেটা আগে দেখে নিই। তাহলে মেলাতে পারবো যে, আমারা নববী আখলাকের অনুসরণ করতে পারছি কিনা।
মনে করুন, আপনি একটি মসজিদে নামাজ পড়ছেন। সেই মসজিদে একজন বাবা তার ৩ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে এসেছেন। জুমুআর নামাজে ছেলেকে নিয়ে এসেছেন, পাঞ্জাবি-টুপি পরিয়ে আল্লাহর ঘরে নিয়ে এসেছেন। ছোটোবেলা থেকে সে মসজিদে যাওয়া-আসা করলে তার মধ্যে দ্বীনের প্রতি মহব্বত জন্ম নিবে এই আশায় বাবার মনে।
বাবা নামাজে দাঁড়ালেন। ছেলেটি বারবার বাবাকে বলছে, “বাবা হিশু করবো।” বাবা নামাজ পড়ার সময় ছেলের কথা বুঝতে পারেননি, নামাজে মন দেন। জামাত শেষ হবার পর সবাই দেখলো যে, ছোটো ছেলেটি মসজিদে পেশাব করা শুরু করছে। সে আর সহ্য করতে পারেনি।
শুধু চোখ বন্ধ করে এতোটুকু চিন্তা করে দেখুন যে, মসজিদের মুসল্লিরা কী প্রতিক্রিয়া দেখাবে? অনেকেই তেড়ে যাবে, অনেকেই ধমক দিয়ে বলবে
‘অ্যাই…অ্যাই’। বাবাকে বলবে, ‘কী মিয়া, বসে আছো কেনো? ছেলেকে নিয়ে তাড়াতাড়ি মসজিদ থেকে বের হও’।
ছোটো বাচ্চাকে নিয়ে কেনো মসজিদে আসেন এই নিয়ে বাবাকে ভৎসনা করা হবে। ছেলের এমন কাণ্ড দেখে বাবা এমনিতেই অপমানবোধ করবেন, তারউপর মানুষের এসব মন্তব্য শুনে তার রাগ হবে।
ছেলেকে মসজিদে নিয়ে আসাকে ‘ভুল’ মনে করে পরবর্তীতে এসব ‘ঝামেলা’ এড়িয়ে যাবার জন্য ছেলেকে বাড়িতে রেখেই হয়তো নামাজে যাবেন।
আপনি ছোট্ট ছেলেটার কথা চিন্তা করুন। মসজিদ সম্পর্কে তার কেমন ধারণা জন্মাবে? যেখানে গিয়ে হিশু করায় তাকে বকা দেয়া হয়েছে, তার বাবাকে অপমান করা হয়েছে, তার মা বাসায় আসার পর তাকে মেরেছে। মসজিদ সম্পর্কে কি সে ইতিবাচক ধারণা নিয়ে বড়ো হবে?
মুসল্লিদের এমন প্রতিক্রিয়া কি ইসলামের স্বার্থে, মসজিদের পবিত্রতার স্বার্থে ছিলো? নাকি তাদের এমন প্রতিক্রিয়া স্বভাবজাত মানবিক প্রতিক্রিয়া ছিলো? নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হলে কি এমনটা করতেন?
প্রশ্নগুলো মাথায় রাখুন। এবার যাই আমাদের মূল আলোচনায়।
একবার এক বেদুঈন নবিজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদে প্রবেশ করলো। বেদুঈনরা সাধারণত শহরতলীর বাইরে থাকতো, শহুরে আদব-কায়দার সাথে তারা পরিচিত ছিলো না। তাদের স্বভাবেও অনেকটা রূঢ়তা ছিলো।
ঐ বেদুঈন ছিলো মুসলিম। সে জানতো যে, তার সাথে সবাই কেমন আচরণ করে। যে তার সাথে ভালো আচরণ করে, স্বভাবত সে তার জন্য দু’আ করবে। যে তার সাথে কোমল আচরণ করে না, দয়া দেখায় না, সে তার জন্যও দয়া দেখাবে না।
সে মসজিদে ঢুকে দু’আ করলো- “হে আল্লাহ! আমার প্রতি দয়া করো ও মুহাম্মদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি দয়া করো। এছাড়া আর কারো প্রতি দয়া করো না!”
বেদুঈনের এমন অদ্ভুত দু’আ থেকেই বুঝা যায় যে, সে বাকিদের উপর কতোটা বিরক্ত। নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে সংশোধন করে দিয়ে বললেন:
“তুমি ব্যাপককে সীমিত করে দিলে।”
[সুনানে আবু দাউদ: ৩৮০]
অর্থাৎ, আল্লাহ তো সবার প্রতি দয়া করেন। যে মুসলিম, তার প্রতি যেমন আল্লাহ দয়া করেন, তেমনি যে কাফির, তার প্রতিও আল্লাহ দয়া করেন। কিন্তু, বেদুঈন লোকটি দয়াকে সীমাবদ্ধ করার দু’আ করছে। সে যখন দু’আ করেছিলো, তখন সাহাবীরাও নবিজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে ছিলেন। তারা দেখলেন যে, তাদের জন্য তো বেদুঈনটি দু’আ করেনি; উল্টো তারা যেনো আল্লাহর দয়া না পান, সেজন্য সে বদ-দু’আ করেছে।
কিছুক্ষণ পর বেদুঈনটি মসজিদের এক কোণে দাঁড়িয়ে পেশাব করা শুরু করলো। যেই মসজিদে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসে আছেন, যেই মসজিদটি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজ হাতে নির্মাণ করেছেন, সেই মসজিদে কিনা কোথাকার এক বেদুঈন পেশাব করা শুরু করলো?
সাহাবীরা রাগে অগ্নিশর্মা। তারা তেড়ে গেলেন বেদুঈনকে শায়েস্তা করতে। তাদের রাগ করাটা খুবই যৌক্তিক ছিলো। একে তো বেদুঈন মসজিদে ঢুকে তাদের বিরুদ্ধে দু’আ করেছে, তারউপর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপস্থিতিতে এমন গর্হিত কাজ শুরু করলো। এর শাস্তি তো তাকে পেতেই হবে।
কিন্তু, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদেরকে থামালেন। তিনি বললেন, “থামো, থামো। তোমরা তাকে বাধা দিও না, তাকে ছেড়ে দাও।”
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বেদুঈনকে শান্তিমতো পেশাব করতে দিলেন। নিজে যেমন বাধা দিলেন না, তেমনি সাহাবীরা বাধা দিতে গেলে বরং তাঁদেরকেই বাধা দিলেন। কারণ, এমন অবস্থায় তার পেশাব আটকালে তার শারীরিক সমস্যা হতে পারে; পেশাব আটকে যেতে পারে।
ধীরে-সুস্থে পেশাব করা শেষ হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বুঝালেন-
“এটা হলো মসজিদ। এখানে প্রসাব করা বা ময়লা আবর্জনা ফেলা যায় না; বরং এটা হলো আল্লাহর যিকির করা, নামাজ পড়া এবং কুরআন তেলাওয়াত করার জায়গা।” [সহীহ মুসলিম: ৫৪৮]
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ধরেই নিলেন যে, বেদুঈনটি মসজিদের আদব সম্পর্কে জানে না। সে মসজিদকে আর-দশটা জায়গার মতো ভেবেছে। এজন্য তাকে শাস্তি না দিয়ে উল্টো জ্ঞানদান করলেন।
আধুনিক শাস্তি আইনে সাধারণত অপরাধীর আইন সম্পর্কে অজ্ঞতাকে বিবেচনা করা হয় না। তাকে শাস্তি দেয়া হয়।
কিন্তু, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বেদুঈনের অজ্ঞতাকে বিবেচনা করে তাকে অপরাধী না বানিয়ে বরং উপদেশ দেন। সেই বেদুঈনকে এভাবে বুঝানোর পর সে কি আর কখনো এমন কাজ করতে পারে? তাকে শাস্তি দেয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি তার প্রতি এমন কোমল আচরণ করলেন, তাঁকে কি সে আপনা-আপনি ভালোবাসবে না? তাঁর প্রতি তার ভালোবাসা বেড়ে যাবে না?
নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুরো বিষয়টি বুঝানোর পর চাইলে তাকে বলতে পারতেন, “তুমি যে ভুলটা করেছো, এবার সেটার প্রায়শ্চিত্ত করো। যেখানে পেশাব করেছো, সেখানে পানি দিয়ে ধুয়ে দাও।”
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেটাও করেননি। তিনি কী করলেন? সাহাবীদেরকে, যারা বেদুঈনের কাণ্ড দেখে বিরক্ত, রাগান্বিত, তাদেরকে বললেন-
“পেশাবের উপর এক বালতি পানি ঢেলে দাও।”
সাহাবীরা যৌক্তিক কারণে রাগ করে বেদুঈনকে থামাতে গেলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাধা দেন, বেদুঈন যে অদ্ভুত কাজটি করলো, সেটা পরিষ্কার করার দায়িত্ব দিলেন সাহাবীদেরকে!
আপনি নিজেকে ঐসব সাহাবীদের জায়গায় চিন্তা করুন। অথবা আপনি চিন্তা করুন আপনার মসজিদের মুসল্লি হিশেবে; যেখানে ইমাম সাহেব আপনাকে নির্দেশ দিলেন বাচ্চাটি যেখানে পেশাব করেছে সেটাতে পানি দিতে। আপনি এমনিতেই বেদুঈন বা বাচ্চাটির উপর রাগান্বিত, তারউপর আবার আপনাকেই বলা হচ্ছে সেটা পরিষ্কার করতে!
অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই ঘটনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিচ্ছেন সাহাবীদেরকে। এতো কিছুর পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বেদুঈনকে বকাঝকা না করে, বেদুঈনের প্রতি কঠোর আচরণ না করে বরং সাহাবীদেরকে বলছেন-
“তোমাদেরকে কোমল ও সুন্দর আচরণ করার জন্য পাঠানো হয়েছে; রূঢ়, কঠোর আচরণের জন্য পাঠানো হয়নি।”
[সহীহ বুখারী: ২২০]
সীরাতের এই গল্পটি যদি আমরা ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারি, তাহলে আমাদের আচরণ অনেকটাই পরিবর্তন হয়ে যেতো। সাহাবীরা বেদুঈনকে ধরে পেটাননি, তার দিকে ঢিল ছুঁড়ে প্রসাব থামাননি, তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করেননি। সাহাবীরা বেদুঈনের দিকে শুধুমাত্র তেড়ে গিয়েছিলেন। এতোটুকুতেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদেরকে বুঝালেন যে, এমন কঠোর আচরণের জন্য তো আল্লাহ তোমাদেরকে প্রেরণ করেননি।
চিন্তা করুন, ছোটোখাটো ভুলের জন্য আমরা নিজেদের একেবারে কাছের মানুষের সাথে কেমন আচরণ করি? ছোটো বাচ্চারা কোনো ভুল করলে তাদের প্রতি কী ধরণের কঠোরতা প্রদর্শন করি? ছোটো ভাই-বোন দুষ্টুমি করলে কী প্রতিক্রিয়া দেখাই!
ভুল অনেক ধরণের হয়। কোনোটা হতে পারে ক্রিমিনাল অফেন্স। ক্রিমিনাল অফেন্সের (যেমন: কেউ কাউকে বিনা কারণে মারছে, নির্যাতন করছে) বেলায় আমাদের প্রতিক্রিয়া থাকবে একধরণের; তখন যথাসাধ্য সেটা প্রতিহত করার চেষ্টা থাকবে। কিন্তু, ছোটোখাটো ভুলের জন্য কারো প্রতি আমাদের আচরণ যেনো রূঢ় না হয় সেটা নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই ঘটনায় আমাদেরকে শেখালেন।
হঠাৎ কখনো একটা বাচ্চা মসজিদে পেশাব করলে সেটা পানি দিয়ে পরিষ্কার করা যায়। সে যদি বারবার মসজিদে এসে এমনটা করতে থাকে, তার বাবাকে এই ব্যাপারে সুন্দর করে বুঝানো যায় যে কোনো ব্যবস্থা নিতে (যেমন: নামাজের আগে পেশাব করিয়ে আনতে)। কিন্তু, তার প্রতি এমন কোনো আচরণ করা যায় না, যার ফলে সে নিজেকে এই ছোট্ট একটা ভুলের জন্য ‘অপরাধী’ মনে করে।
কোনটা ‘ভুল’ আর কোনটা ‘অপরাধ’ সেটা ঠিকমতো চিহ্নিত করতে পারলে আমাদের আচরণের প্যাটার্ন অনেকটা বদলে যেতো। আমরা বেশিরভাগ সময় ভুলকে ‘অপরাধ’ ধরে প্রতিক্রিয়া দেখাই। ফলে, কোমলতার চেয়ে কট্টরতা আমাদের মধ্যে বেশি ফুটে ওঠে।
একজন আদর্শ মানুষের চরিত্রে শতোভাগ কোমলতা যেমন থাকতে পারে না, তেমনি শতোভাগ কঠোরতাও থাকতে পারে না। মানুষকে প্রয়োজনের সময় কঠোর হতে হয়, কিন্তু কঠোরতা মানুষের চরিত্রের ‘রুল অব থাম্ব’ না।
শেক্সপিয়ারের ‘Hemlet’ নাটকে প্রিন্সের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে-
“I must be cruel, only to be kind.”
কোমলতার প্রয়োজনেও আমাদেরকে মাঝেমধ্যে কঠোর হতে হয়; কিন্তু কঠোরতা আমাদের সার্বক্ষণিক আচরণ না। আমাদের সার্বক্ষণিক আচরণ হলো কোমলতা।
নবিজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জীবনী পড়লে দেখা যায় যে, তিনি যেমন কোমলতা দেখিয়েছেন, তেমনি প্রয়োজনে কঠোরতাও দেখিয়েছেন। তিনি শুধুমাত্র মানুষকে দ্বীনের দাওয়াত দেননি, যুদ্ধও করেছেন।
কিন্তু, নবিজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সীরাতে সামগ্রিক আচরণ কী ছিলো? নবিজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জীবন থেকে ১০০ টি ঘটনা বাছাই করলে দেখবেন যে, ৫-৭ টি কঠোরতার বিপরীতে ৯০ টিরও বেশি কোমলতা, উদারতার ঘটনা পাবেন। তাঁর সামগ্রিক আচরণে কঠোরতার উপর কোমলতা বিজয়ী হয়।
নবিজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই গুণ সম্পর্কে আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন:
“অতঃপর আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমতের কারণে তুমি তাদের প্রতি কোমল আচরণ করেছিলে। আর যদি তুমি কঠোর স্বভাবের, কঠিন হৃদয়সম্পন্ন হতে, তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়তো।”
[সূরা আলে-ইমরান ৩:১৫৯]
নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাদের প্রতি কোমল ছিলেন? সাহাবীদের প্রতি। তিনি নবী হওয় সত্ত্বেও যদি সাহাবিদের প্রতি কঠোর আচরণ করতেন, তাহলে আল্লাহ বলছেন যে, সাহাবীরা তাঁকে ছেড়ে চলে যেতো।
আমাকে-আপনাকে নাম ধরে আল্লাহ নির্দিষ্ট করে কোনো দায়িত্ব দিয়ে পাঠাননি, মানুষকে বলে দেননি যে আমার-আপনার কথা শুনতে হবে, মানতে হবে। অথচ রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ সেই দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছিলেন, মানুষকে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে তাঁকে অনুসরণ করতে হবে। তবুও আল্লাহ মানুষের সাইকোলজির কথা বলছেন যে, যদি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কঠোর হতেন, মানুষ তাঁকে পর্যন্ত ছেড়ে চলে যেতো!
তাহলে আমি-আপনি কিভাবে আশা করি যে, আমরা মানুষের প্রতি কঠোর আচরণ করে দ্বীনের দাওয়াত দেবো আর মানুষ আমাদের কথা শুনবে?
আমরা নিজেদের ১০০ টি পোস্ট আর ১০০ টি কমেন্ট বিশ্লেষণ করতে পারি। আমরা দেখতে পারি যে, আমাদের সার্বক্ষণিক আলোচনায় কোমলতা ফুটে উঠছে নাকি কঠোরতা ফুটে উঠছে। ১০০ টি কন্টেন্টের মধ্যে কতোটি কন্টেন্টে আমরা অন্যের দোষ-ত্রুটি নিয়ে আলোচনা করেছি, অন্যের ভুল ‘Expose’ করেছি, অন্যকে গালাগালি করেছি, ট্যাগ দিয়েছি।
যদি দেখা যায় যে, আমাদের বেশিরভাগ কন্টেন্টই ছিলো কঠোরতার বহিঃপ্রকাশ, যদি দেখা যায় যে, পজিটিভিটির চেয়ে আমরা নেগেটিভিটির বেশি চর্চা করেছি, তাহলে নবিজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ হাদীসটি আবারো নিজেকে এবং আপনাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি-
“তোমাদেরকে কোমল ও সুন্দর আচরণ করার জন্য পাঠানো হয়েছে; রূঢ়, কঠোর আচরণের জন্য পাঠানো হয়নি।”
[সহীহ বুখারী: ২২০]