ওষুধ খাওয়ার আগে আল্লাহ শাফী, আল্লাহ কাফী, আল্লাহ মাফী বলার বিধান। ওষুধ খাওয়া সময় আমরা সাধারণত আল্লাহ শাফী, আল্লাহ কাফী, আল্লাহ মাফী বলি। এটি কি জায়েজ?
ঈমনদারের কর্তব্য, যে কোনও আমলের পূর্বে তা বিশুদ্ধ সূত্রে হাদিস দ্বারা প্রমাণিত কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া। দলিল বহির্ভূত, মনগড়া, ভিত্তিহীন, সমাজে প্রচলিত, লোকমুখে শোনা, মুরুব্বীদের থেকে শেখা ইত্যাদি আমল করলে তা হবে গোমরাহি ও ধ্বংসের কারণ।
সুতরাং আমাদের জীবনের ছোট-বড় সকল ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহ অনুসন্ধান করা অপরিহার্য।
খাদ্য-পানীয় গ্রহণের পূর্বে কোন দুআ পড়া সুন্নত?
যেকোনো হালাল খাদ্য-পানীয় গ্রহণের পূর্বে বিসমিল্লাহ (আল্লাহর নামে শুরু করছি) বলতে হবে। এটাই সুন্নাহ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ طَعَاماً فَلْيَقُلْ بِسْمِ اللَّهِ، فَإِنْ نَسِيَ فِي أَوَّلِهِ فَلْيَقُلْ بسمِ اللَّهِ فِي أَوَّلِهِ وَآخِرِهِ
“তোমাদের কেউ যখন খাওয়া শুরু করে সে যেন বলে, বিসমিল্লাহ (অর্থ: নামে শুরু করছি) আর যদি, শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে ভুলে যায় তাহলে সে যেনো বলে:
“বিসমিল্লাহি ফী আওয়ালিহী ওয়া আখিরিহী”
(অর্থ: শুরুতে ও শেষে আল্লাহর নামে)
[হিসনুল মুসলিম ২২৬ পৃষ্ঠা, হাদিসটি নেওয়া হয়েছে সুনানে আবু দাউদ থেকে]
অন্য বর্ণনায় এসেছে:
بسم الله أَوَّلَه وآخرَه
“বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু”
[অর্থ: শুরুতে ও শেষে আল্লাহর নামে]
এমনকি খাওয়া শেষ হওয়ার সাথে সাথে অথবা সামান্য একটু পরও যদি মনে পড়ে তাহলেও তা বলা জায়েজ আছে। কাশশাফুল কেনা’ গ্রন্থে এসেছে:
وظاهره ولو بعد فراغه من الأكل
“উক্ত হাদিসের বাহ্যিক অর্থ হল, খাবার শেষ করার পরও যদি তা স্মরণ হয় তাহলেও উক্ত দুআটি (বিসমিল্লাহি ফী আওয়ালিহী ওয়া আখিরিহী) পাঠ করা যাবে।”
[কাশশাফুল কেনা ৫/১৭৩]
নিহায়াতুল মুহতাজ গ্রন্থে বলা হয়েছে:
لا يأتي بها ( أي التسمية ) بعد فراغ وضوئه ، بخلاف الأكل فإنه يأتي بها بعده
“(ওজুর শুরুতে বলতে ভুলে গেলে) শেষ করার পর তা (বিসমিল্লাহ) বলবে না। কিন্তু খাবার ব্যাপারটি ব্যতিক্রম। এ ক্ষেত্রে শেষ করার পর হলেও বিসমিল্লাহি (তথা বিসমিল্লাহি ফি আওয়ালিহী ওয়া আখিরিহী) বলবে।
[নিহায়াতুল মুহতাজ ১/১৮৪]
সুতরাং ওষুধ সেবনের পূর্বেও বিসমিল্লাহ (আল্লাহর নামে শুরু) বলতে হবে। শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়তে ভুলে গেলে মনে হওয়ার সাথে সাথে “বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু” বা “বিসমিল্লাহি ফী আওয়ালিহী ওয়া আখিরিহী” পড়া কর্তব্য।
ওষুধ সেবনের পূর্বে “আল্লাহ শাফী, আল্লাহ কাফী, আল্লাহ মাফী” পড়ার বিধান কি?
আমাদের সমাজে কিছু মানুষ বলে থাকে যে, ওষুধ সেবনের পূর্বে বিসমিল্লাহ পড়লে ওষুধের কার্যকারিতা হারিয়ে যায় বা রোগ বেড়ে যায় ! তাই বিসমিল্লাহ বলা ঠিক নয়! (নাউযুবিল্লাহ)
এটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা ও মূর্খতা সুলভ বিশ্বাস। বরং সঠিক কথা হল, বিসমিল্লাহ বলে ওষুধ সেবন করলে দ্রুত আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ রোগ-ব্যাধিতে আল্লাহই সুস্থতা দান কারী। আর ওষুধ তাঁরই দেয়া নেয়ামত। সুতরাং তার নাম নিয়ে ওষুধ সেবন করলে দ্রুত সুস্থতা বা আরোগ্য পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা, বিসমিল্লাহ মূলত আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য প্রাপ্তি এবং বরকত লাভের দোয়া।
অথচ দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, আমাদের সমাজের দীনের সঠিক জ্ঞান বঞ্চিত অনেক মানুষকে ঔষধ সেবনের পূর্বে নিম্নোক্ত কথাগুলো শোনা যায়:
আল্লাহ শাফী (আরোগ্য দান কারি),
আল্লাহ কাফী (আল্লাহ যথেষ্ট),
আল্লাহ মাফী (এ শব্দটি মূলত: মুআফি শব্দের অপভ্রংশ) (আল্লাহ সুস্থতা দান কারি)
কিন্তু সব কথাবার্তা বলার বিষয়টি কোন হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয় নি। বরং তা মানুষের মনগড়া ও ভিত্তিহীন।
ডঃ শাইখ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহ. হাদিসের নামে জালিয়াতি গ্রন্থে বলেন,
“আরও কিছু ভিত্তিহীন প্রচলিত কথা:
১৬. ঔষধ খাওয়ার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ না বলে ‘আল্লাহ শফি, আল্লাহ কাফি, আল্লাহ মাফি’ বলতে হবে। ‘বিসমিল্লাহ’ বলে ঔষধ খেলে ঔষধ পানি হয়ে যায়।”
অত:এব, ঔষধ সেবনের পূর্বে এই সকল বানোয়াট কথাবার্তা উচ্চারণ করাকে শরিয়তের বিধান মনে করলে তা দীনের ভিতরে নব সংযোজিত বিদআত হিসেবে পরিগণিত হবে। আর প্রতিটি বেদআতই গোমরাহি। আর প্রতিটি গোমরাহির পরিণতি জাহান্নাম। (আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন।)
সুতরাং আমাদের কতর্ব্য, ঔষধ সেবনের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ (আল্লাহর নামে শুরু) পাঠ করা এবং এ ছাড়া অন্যান্য সকল বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কথাবার্তা পরিত্যাগ করা।
আল্লাহ তওফিক দান কারী।