-কিরে ছত্তর কই যাস?
-বাজারে সাহেব।
-কাল বাড়িতে চইলা আসিস। সবাইরে মাংশ বিলামু। জানস তো।
আইচ্ছা সাহেব।
Table of Contents
||দুই||
বাবা, ও বাবা
বল মামুনি আমার।
তুমি কিন্তু গত কুরবানিতে রান্না করতে যাইয়া মাংশ পুইরা ফালাইছিলা। এবার কিন্তু ভালো হওয়া চাই।
তোমারে এবার তোমার মায়ের মত ভুনা কইরা খাওয়াবো।
সত্যি……!! লক্ষি বাবা আমার।
||তিন||
ঈদের নামাজ শেষে ছত্তর মিয়া ছোট্ট একটা ব্যাগ নিয়ে সাহেব বাড়ির সামনে চলে যায়। বিশাল বড় লাইন। সিরিয়াল ঠিক রাখার জন্য কিছু লোকও ভাড়া করা হয়েছে! ছত্তর মিয়া আছে লাইনের শেষ দিকে দাড়িয়ে। সবাইকেই দেড় কেজি করে মাংশ দিচ্ছে। ছত্তর মিয়া কিছুটা খুশি থাকলেও কপালে চিন্তার এক ভাজ পরে গেলো। সামনে এতো গুলো মানুষ দাড়ানো, দেড় কেজির একটা মাংশের পোটলা জুটবে তো.? মাংশ না পেলে মামুনিরে কি জবাব দিবো? সেই যে আগের কুরবানিতে মাংশ খাওয়াতে পারছিলাম। আর তো সম্ভব হলো না।
খুবই উৎসব মুখর পরিবেশ। এক পোটলা মাংশ পাওয়ার সাথে সাথেই এক একজনের মুখে ঈদ আনন্দের পূর্ণতা পাচ্ছে। সাহেব বাবু মাংশ তুলে দিচ্ছে খুবই শৃঙ্খলার সাথে। ক্রমশই বাড়ির আঙ্গিনায় ভিড় বাড়ছেই। ধিরে ধিরে সিরিয়ালের সামনে থেকে লোক অনেকটা কমে আসছে। সত্তর মিয়াও চলে এসেছে বেশ খানিকটা এগিয়ে। সমনে আর মাত্র অল্প কিছু লোক।।
হঠাৎ সামনের লাইনে দাড়ানো সবাই লাইন ছেড়ে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে হৈ চৈ শুরু করে দিলো।
— ব্যাপার টা কি.?
–মাংশ শেষ!!
ফিরে যাওয়া ছড়া কোন উপায়ী নেই। কয়একজন লোক খুব মিনতি করছে সাহেবের কাছে, যেন কিছু মাংশ হলেও তাদের দেওয়া হয়। কিন্তু না, এখন যা মাংশ আছে তা শুধু সাহেবের পরিবারের জন্যই।
||চার||
বাজারে ব্যাগটা বুকে জড়িয়ে হাঁটছে আনমনে। পথেই দেখা হলো আজগর আলীর সাথে, দুই পোটলা মাংশ নিয়ে হাঁসতে হাঁসতে এগিয়ে আসছে। ঈদের পুরো খুশিই যেন তার মুখ জুড়ে।
কি ছত্তর মিয়া, সাহেবের বাড়িতে মাংশ পাও নাই, শেষ হইয়া গেছে.?
হ
তাইলে এনে খাড়াইয়া আছো ক্যান.? শিগগিরি চেয়ারম্যান বাড়ি যাও। এহনো মেলা মাংশ আছে। মুই তো সাহেবের বাড়ি থেইক্কাও নিছি আবার চেয়ারম্যানের বাড়ি থেইক্কাও নিছি। হা হা হা….
এক মিনিটও দেরি না করে দৌড়ে চেয়ারম্যানের বাড়ি চলে গেলো ছত্তর মিয়া। ৪ টা গরুর মাংশের স্তুব। খুশিতে মনটা ভরে উঠলো। এখানে যত মানুষ আছে তাতে কেউ খালি হাতে ফিরে যাবে না মোটামুটি নিশ্চিত। পর্যাপ্ত মাংশ দেখাই যাচ্ছে। হাঁসি মুখে একটা লম্বা দম ছেড়ে লাইনে দাঁড়ালো। কিন্তু হঠাৎ পিছন থেকে….
কি ছত্তর মিয়া, তুমি এহানে?
জ্বি, মাংশ নিতে আইছি।
তুমি সব ভুইলা গেছো, কেমন্নে এতো হক্কালে ভুইলা গেলা.?
ক্যান, কি করছি মুই.?
চোপ হালারপো, আবার কস কি করছি.? ঔ ওরে ধর,ধর…
দ্বিতীয় জন বলে উঠলো, সোনার চাঁন পিত্লা ঘুঘু মনে নাই, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধ সাক্ষী দিছিলা.? বলছিলাম পুলিশে কিছু জিগাইলে কইবা আমি কিচ্ছু দেহি নাই। যা ব্যাটা, আবার আইছোস মাংশ নিতে…. যা ফকিন্নির বাচ্চা। মাইর খাওয়ার আগে যা কইলাম….
বসিয়ে দিলো, কষিয়ে দুই গালে দুইটা চর!
আরেক জন ঘার ধাক্কা দিয়ে ছত্তর মিয়ারে ফেলে দেয়। লাগিয়ে দিলো কয়েকটা লাথি। আশা যেন হতাশায় বালু চাপা পরে গেলো। এ যেন “গরিবের ক্ষেতে বর্ষাকালেও মরুভূমি”।
||পাঁচ||
ধুলোমলিন শরীর কিছুটা ঝেড়ে নিয়ে পাশেই একটা গাছের নিচে বসে নিরব অশ্রু জড়াচ্ছে। হঠাৎই পেছন থেকে তার মেয়ে ডাক দিলো।
বাবা…. তুমি এখানে, বাসায় যাবা না.? খিদে লেগেছে, বাসায় চলো। মাংশ ভুনা করবা।
মা রে.. মাংশ এবার পাই নাই।
কি বলো বাবা.? এই যে মাংশ।
ছোট্ট বাচ্চাটা বাবাকে জড়িয়ে খিলখিলে হেসে উঠলো। প্রতিবেশি আজগর আলি যখন দেখে ছত্তর মিয়াকে মাংশ না দিয়ে চেয়ারম্যানের মারধর করেছে। তখন সে তার দুই পোটলা মাংশ থেকে একটি ছত্তর মিয়ার মেয়েকে দিয়ে দেয়।
চোখ মুছে ছত্তর মেয়েকে কাঁধে তুলে বাড়ির পথে হাটা শুরু করলো। বাবার কাঁধে উঠে দারুণ খুশি। মেয়ে গুনগুন করে ধরলো চিকন সুরে গান,
“বাবা তুমি অনেক লক্ষ্মী,
অনেক ভালোবাসি।
বাবা তুমি আমার দু’নয়নের মনি…..
চলুন,
“আসন্ন এই কুরবানিতে শধু অর্থ ত্যাগই নয় নিজের দাম্ভিকতাকেও ত্যাগ করি।
গরিবের হক পৌছে দিয়ে আসি তার বাড়িতে গিয়ে।
দাওয়াত গ্রহন করি ধনী-গরিব সকল আত্মীয়ের এবং তাদেরকেও দাওয়াত দেই।
আমাদের সংস্কৃতি গড়ে তুলি ভেদাভেদহীন”
গল্প – এক পোটলা মাংশ
সিরিজ- জীবনের শতপাতা (গল্প- ০৩)