হান্না বিনতে ফাকুয নামের একজন নারী আল্লাহর কাছে একটি ‘মানত’ করেন। তিনি মানত করেন যে, তাঁর যদি একজন সন্তান হয়, তাহলে তাকে আল্লাহর পথে উৎসর্গ করবেন, তাকে বায়তুল মোকাদ্দাসের খাদিম বানাবেন।
তিনি যখন সংকল্প করেন, তখন মনে মনে ভেবেছিলেন যে, তাঁর একজন পুত্র সন্তান হবে। কিন্তু, হলো তার বিপরীত। তিনি একজন কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। একজন কন্যা সন্তান কিভাবে বায়তুল মোকাদ্দাসের খাদিম হবে?
হান্না বিনতে ফাকুয তাঁর মেয়ের নাম রাখলেন- ‘মারইয়াম’। ইতিহাসে যিনি পরিচিত মারইয়াম বিনতে ইমরান (আলাইহাস সালাম) নামে।
মায়ের মানত অনুযায়ী তাঁকে বায়তুল মোকাদ্দাস, যে মসজিদটি ছিলো সকল নবীদের ক্বিবলা, সেই মসজিদের খেদমতে উৎসর্গ করা হয়। মসজিদে তাঁর থাকার জন্য আলাদা তাঁবু স্থাপন করা হয়। মারইয়াম (আ:) বড়ো হোন এবং বেড়ে ওঠেন মসজিদেই।
মারইয়াম (আ:) –এর ভরণপোষণের দায়িত্ব নেন যাকারিয়া (আলাইহিস সালাম); যিনি ছিলেন আল্লাহর একজন নবী। যাকারিয়া (আ:) মারইয়াম (আ:) –এর কী হোন? এই বিষয়ে দুটো মত পাওয়া যায়।
যাকারিয়া (আ:) ছিলেন তাঁর খালু।
যাকারিয়া (আ:) ছিলেন তাঁর দুলাভাই।
মারইয়াম (আ:) মসজিদেই থাকতেন, এর বাইরে যাওয়া লাগতো না। কিন্তু, তাঁর কাছে অসময়ের ফল পাওয়া যেতো। অসময়ের ফল বলতে যে মৌসুমে যে ফল পাবার কথা না, সেই মৌসুমে সেই ফল পাওয়া যেতো। শীতকালে গ্রীষ্মকালের ফল, গ্রীষ্মকালে শীতকালের ফল।
যাকারিয়া (আ:) একদিন এমন ফল দেখে অবাক হলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “এগুলো কোথায় পেলে?”
মারইয়াম (আ:) বললেন, “এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে অপরিমিত জীবিকা দান করেন।”
মারইয়াম (আ:) বলেননি, আমি পেয়েছি, আপনি পাবেন না। তিনি জানিয়ে দিলেন- আমাকে যেমন আল্লাহ দিয়েছেন, আপনাকেও দিতে পারেন, অন্য যে কাউকে দিতে পারেন।
পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত মানুষ হলেন নবী-রাসূলগণ। প্রত্যেক নবী-রাসূলই ছিলেন পুরুষ। নারীদের মধ্যে কোনো নবী-রাসূল ছিলেন না। নবী-রাসূলের পর সর্বোত্তম উপাধি হলো ‘সিদ্দিক-সিদ্দিকা’। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ মারইয়ামকে (আ:) উপাধি দেন ‘সিদ্দিকা’; যা একজন নারীকে আল্লাহর দেয়া সর্বোত্তম উপাধি।
নারী জাতির উপর মারইয়ামের (আ:) শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করে আল্লাহ ফেরেশতাদের মাধ্যমে জানিয়ে দেন:
وَإِذْ قَالَتِ الْمَلَائِكَةُ يَا مَرْيَمُ إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَاكِ وَطَهَّرَكِ وَاصْطَفَاكِ عَلَىٰ نِسَاءِ الْعَالَمِينَ
আর যখন ফেরেশতা বলল হে মারইয়াম!, আল্লাহ তোমাকে পছন্দ করেছেন এবং তোমাকে পবিত্র পরিচ্ছন্ন করে দিয়েছেন। আর তোমাকে বিশ্ব নারী সমাজের উর্ধ্বে মনোনীত করেছেন।
[সূরা আলে ইমরান:৪২]
আল্লাহ তাঁকে ঈসা (আলাইহিস সালাম) –এর জন্মের সুসংবাদ দেন। তিনি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন, “আমাকে তো কেউ স্পর্শ করেনি, আমি কিভাবে ‘মা’ হবো?” ফেরেশতারা জানান, আল্লাহর জন্য এটা সহজ।
পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম মিরাকল হলো ঈসার (আ:) জন্ম। আদম (আলাইহিস সালাম) ও হাওয়া (আলাইহাস সালাম) –কে আল্লাহ মা-বাবা ছাড়াই সৃষ্টি করেন। আর ঈসাকে (আ:) বাবা ছাড়া। সন্তান জন্মদানের সময় শারীরিক এবং মানসিক যন্ত্রণায় মারইয়াম (আ:) এতোটাই ভঙ্গুর হয়ে পড়েন যে, তিনি বলেন, “এরচেয়ে যদি আমি মারা যেতাম!”
সমাজের লোকজন তাঁকে কী অপবাদ দিবে সেটা তিনি জানতেন। আল্লাহর তাঁর কোলের শিশু ঈসার (আ:) মাধ্যমে তাঁর নিষ্কলুষতার সাক্ষ্যের ব্যবস্থা করেন। পৃথিবীর ইতিহাসে যে কয়েকজন কোলের শিশু কথা বলেন, ঈসা (আ:) ছিলেন তাঁদের অন্যতম।
ঈসা (আ:), খ্রিস্টানরা যাকে নিয়ে নানান বিতর্কে লিপ্ত, তাঁকে জন্ম দেন মারইয়াম (আ:)। ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের কাছে তিনি ‘ভার্জিন ম্যারি’ নামে পরিচিত।
পবিত্র কুরআনে ঈসা্র (আ:) চেয়ে মারইয়ামের (আ:) নাম বেশি এসেছে।
ঈসার (আ:) নাম এসেছে পবিত্র কুরআনের ২৫ জায়গায়।
মারইয়ামের (আ:) নাম এসেছে পবিত্র কুরআনের ৩৪ জায়গায়।
একমাত্র নারী, কুরআনে যার নাম আছে