আমরা প্রত্যেকেই আমাদের বন্ধুদের কোনো গোপন কথা জানি। যে গোপন কথা হয়তোবা আমি ছাড়া আর কোনো মানুষ জানে না। হতে পারে সেই বন্ধুটি একসময় মেমোরিকার্ড, পেনড্রাইভ আদান-প্রদান করতো। কিংবা ধরুন, একদিন তার মোবাইল কেড়ে নিয়ে দেখলাম সে আপত্তিকর কোনো কিছু দেখছে। এখন যে দ্বীন মানার চেষ্টা করছে, অতীতে তো তার দু-চারজন গার্লফ্রেন্ড ছিলো। তার সেইসব ছবিও তো আমার কাছে আছে।
এখন আমি কী করবো?
তার অতীতের পাপ কিংবা তার গোপন পাপগুলো সবাইকে বলে বেড়াবো?
তাকে ‘Roast’ করবো?
একজন মানুষের গোপন পাপ দেখে ফেলার পর তার দোষচর্চা হলে কোনো লাভ হয়?
বরং যার দোষচর্চা হয় সে লজ্জা পায়, মানুষ তাকে কী ভাববে এই চিন্তায় সে মনে মনে দগ্ধ হয়। পাপ কাজটি করার জন্য সে অনুতপ্ত না হয়ে বরং পাপ কাজটি প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় সে অনুতপ্ত হয়। প্রাইভেসি হুমকিতে পড়ে অনেকেই আত্মহত্যার কথাও চিন্তা করে!
তারমানে একজন মানুষ গোপনে পাপ করলেও সে প্রাইভেসি নিয়ে কনসার্ন। সে চায় না তার পাপের কথা সবাই জানুক। কিন্তু কেউ যদি তাকে দেখে ফেলে?
ইসলাম এই বিষয়টি খুব সুন্দর করে সমাধান করেছে। প্রথমত, ইসলাম গোপন বা প্রকাশ্য কোনো ধরণের পাপকে সমর্থন করেনা। কিন্তু, এসব ক্ষেত্রে ইসলাম গোপন পাপীর প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করে। যে তার পাপটি দেখে ফেললো, সে যেনো তাকে সময়-সুযোগ বুঝে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে, বুঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু, সে যেনো পাপীর পাপের কথা সবাইকে বলে না বেড়ায়, ভাইরাল না করে, রোস্ট না করে।
দেখুন, একজনকে গোপনে পাপ করতে দেখলে স্বভাবত মন চায় সবাইকে গিয়ে বলি, এইতো সুযোগ পেলাম তাকে ‘কালার’ করার, তাকে নিয়ে মজা করার। বন্ধুর গোপন পাপের কথা সবাইকে জানাতে হাত-মুখ নিশপিশ করে। তবুও, হাত-মুখ চেপে রাখতে ইসলাম আমাদেরকে উৎসাহিত করে। একজন পাপীরও প্রাইভেসির কথা ইসলাম চিন্তা করে।
আমরা এতো কষ্ট করে একজনের পাপের কথা গোপন রাখলাম। বিনিময়ে আমাদের লাভ কী?
নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে সেই পুরস্কারের কথা জানিয়ে দেন। তিনি বলেন:
“যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ ঢেকে রাখবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ ঢেকে রাখবেন।”
[সহীহ বুখারী: ২৪৪২]
অর্থাৎ, আমি যদি আমার বন্ধুর গোপন দোষ ঢেকে রেখে তাকে বুঝানোর চেষ্টা করি, তাহলে আল্লাহ কিয়ামতের দিন আমার দোষ ঢেকে রাখবেন। আর সেদিন যদি আমার দোষ ঢেকে রাখা হয়, তাহলে তার বিনিময়ে আমি কী পাবো?
সুবহানাল্লাহ!