ঈসা আলাইহিস সালাম- ২য় পর্ব

যেখানে যে বিষয় প্রসিদ্ধ ছিলো আল্লাহ সেখানে প্রেরিত নবীগণকে তার সাথে সম্পর্কিত মুজেজা প্রদান করতেন। যেমন, মুসা আ. এর সময়ে যাদুবিদ্যা প্রসিদ্ধ ছিলো তাই তাকে সেরকম মুজেজা দেয়া হয়েছিলো। তেমনিভাবে ঈসা আ. এর সময়ে তার জাতি চিকিৎসাবিদ্যায় খুব পারদর্শী ছিলো বিধায় ঈসা আ. কে আল্লাহ চিকিৎসা সম্পর্কিত মুজেজা দেন। তিনি অন্ধকে সুস্থ করতে পারতেন, কুষ্ঠরোগ সারাতে পারতেন, মাটির পাখিতে প্রাণ সঞ্চার, মৃতকে জীবিত করা ছিলো তার মুজেজা। আর এর সবই ছিলো আল্লাহর হুকুমের অধীন।

ধারণা করা হয় ঈসা আ. অন্যান্য নবীগণের মতো ৪০ বছরে নবুওয়ত না পেয়ে বরং আরো আগেই পেয়েছিলেন। নবুওত প্রাপ্তির পর ঈসা আলাইহিস সালাম লেগে পড়লেন দাওয়াতি কাজে। দিনরাত এক করে ঘরে ঘরে পৌছে দিতে লাগলেন হেদায়াতের অমীয় বাণি। প্রয়োজনে প্রদর্শন করলেন আল্লাহর দেয়া মুজেজা। তিনি বললেন, ‘আমি এসেছি তাওরাতের বিধানের পূর্ণতা প্রদানে। আমি এসেছি কতক হারামকে হালাল করতে।’

উল্লখ্যে, বণি ইসরাইলীদের অবাধ্যতার কারণে কতক হালাল জিনিস তাদের উপর শাস্তিস্বরুপ হারাম ককরে দেয়া হয়েছিলো। এতে যারা বুঝদার তারা ঈমান আনলো। কিন্তু বণি ইসরাইলের অধিকাংশ লোক তাদের স্বভাব অনুযায়ী অন্যান্য নবীগণের মতো ঈসা আ. এর পিছনেও লেগে পড়লো। করতে লাগলো নানাবিধ ষড়যন্ত্র।

তাদের ষড়যন্ত্রে অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেন ঈসা আ.। পদেপদে তারা তাকে লাঞ্ছনার উপায় খুজতো। তাই একদিন ঈসা আ. তার সঙ্গীদের ডেকে বললেন, ‘কারা প্রতি মুহূর্তে আমার সঙ্গ দিতে প্রস্তুত?’
তাদের মধ্য থেকে বারোজন তার হাতে বায়াত নিলো। এই বারোজনকে বলা হয় ‘হাওয়ারি’। এরা সবসময় ঈসা আ. এর সঙ্গে থাকতেন। এবার ঈসা আ. সব ষড়যন্ত্রকে উপেক্ষা করে হাওয়ারিদের সঙ্গে নিয়ে নতুন উদ্যোমে দাওয়াতি কাজ চালিয়ে যেতে লাগলেন। কিন্তু বসে নেই দুনিয়ার মোহে অন্ধ ইহুদিরাও। তাদের বিরোধিতার মূল কারণ তারা মনে করেছিলো ঈসা আ. তাদেরকে রাজত্ব দিবেন, সম্পদশালী করবেন। কিন্তু তা না হওয়ায় তারা ক্ষোভে ফেটে পড়লো।
.
একদিন ঈসা আ. এর অনুসারীরা আবদার করলো তারা আসমান থেকে আগত খাদ্য খাবে। তারা দাবি করলো আসমান থেকে যেন তাদের প্রতি খাঞ্চা ভর্তি খাদ্য নাযিল করা হয়। ঈসা আ. তাদেরকে বিরত করতে চাইলে তারা বললো, আমরা আমাদের অন্তরকে তৃপ্ত করতে চাই। এতে আমরা নির্দ্বিধায় আপনার প্রতি ঈমান আনতে পারবো। অত:পর ঈসা আ. আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন খাদ্যের জন্য। আল্লাহ তার দোয়া কবুল করলেন। আসমান থেকে নাযিল হলো খাঞ্চা ভর্তি সুস্বাদু খাদ্য। কিন্তু শর্ত ছিলো কেউ তা সঞ্চিত করে রাখতে পারবে না। কিছু হতভাগা শর্ত না মেনে লুকিয়ে সঞ্চিত করলো। ফলে তারা আল্লাহর গযবে পতিত হলো।

এদিকে ইহুদিরা যখন দেখলো নানাবিধ ষড়যন্ত্রের পরেও ঈসা আ. তার পথ থেকে পিছু হটছেন না তখন তারা নতুন চাল চাললো। তারা বাদশার নিকট অভিযোগ করলো যে, ঈসা আ. ধর্মদ্রোহী। তাদের কানপোড়ায় বাদশা ছাতিয়ুনুস নবী ঈসা আ. এর প্রতি গ্রেফতারি পরওয়ানা জারি করলেন। এবার ঈসা আ. কে হত্যার জন্য আর কোনো বাধা রইলো না ইহুদিদের। তারা একদিন পরিকল্পনা করে ঈসা আ. এর বাড়ি ঘেরাও করে বসলো।

ঐদিন ঈসা আ. তার ঘরের মধ্যেই ছিলেন। তারা তাদের একজনকে ঘরের ভিতর পাঠালো ঈসা আ. কে ধরে নিয়ে আসার জন্য। কিন্তু আল্লাহ তাদের জন্য তৈরি করলেন ধাঁধার জাল। ঈসা আ. কে আল্লাহ উঠিয়ে নিলেন আসমানে আর ঘরে ঢুকা লোকটির চেহারা করে দিলেন ঈসা আ. এর মতো। ফলে ইহুদিরা ঈসা আ. মনে করে তাদের সঙ্গীকেই হত্যা করলো। কিয়ামতের পূর্বে তিনি আবার এই পৃথিবীতে ফিরে আসবেন এবং ইমাম মাহদিকে সাথে নিয়ে দাজ্জালকে হত্যা করে সারা দুনিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন। অত:পর তার স্বাভাবিক মৃত্যু হবে। তিনি নবী হিশেবে না বরং মুহাম্মদ সা. এর উম্মত হিশেবে আগমন করবেন।

ঈসা আ. এর প্রস্তানের পর তার অনুসারীদের মধ্যে ধীরে ধীরে ফিতনা শুরু হলো। কেউ তাকে খোদার আসনে বসালো, কেউ বললো তিনি খোয়ার পূত্র। খুব অল্পসংখ্যক লোক তার প্রকৃত অনুসারী হিশেবে থেকে গেলো। তাদের এই অপবাদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা ঈসা আ. কে কিয়ামতের দিন জিজ্ঞাসা করবেন। ঈসা আ. তার নির্দোষিতার ব্যাপারে বলবেন আল্লাহকে। এক বর্ণনায় পাওয়া যায়, ঐদিন আমরা ঈসা আ. এর পক্ষে স্বাক্ষী দিবো।

লিখেছেন

নাবিল হাসান

সিলেটে থাকি, পড়ালেখা সিলেটেই। পড়ছি কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে। আর ভালোবাসি লিখালিখি করতে।
Writer and selector at জাগরণ - Jagoron
সসীমের পথ ছেড়ে ছুটি অসীমের পানে

All Posts

সিলেটে থাকি, পড়ালেখা সিলেটেই। পড়ছি কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে। আর ভালোবাসি লিখালিখি করতে।
Writer and selector at জাগরণ – Jagoron
সসীমের পথ ছেড়ে ছুটি অসীমের পানে

Exit mobile version