ঈসা আলাইহিস সালাম ছিলেন বণি ইসরাইলের প্রতি প্রেরিত সর্বশেষ নবী ও রাসূল। কিন্তু অভিশপ্ত ইহুদীরা তাকে নবী হিশেবে মেনে নিতে পারেনি। তাকে নিয়ে করেছে নানা ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র। এমনকি শেষ পর্যন্ত তাকে হত্যার চেষ্টাও করে তারা। কিন্তু তাদের কৌশলের বিপরীতে আল্লাহ আরেক কৌশল করলেন। তারা ধোকায় পড়ে মনে করলো তাকে হত্যা করেছে, আদতে আল্লাহ তাকে তুলে নিয়েছিলেন আসমানে। অপরদিকে তার অনুসারী খৃস্টানরাও হয়ে গেলো পথভ্রষ্ট। অধিক ভক্তি দেখাতে গিয়ে তারা তাকে বসিয়ে দিলো খোদার আসনে। হ্যা, বলছিলাম ঈসা রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম এর কথা।
ঘটনার সূত্রপাত অনেক আগে। ইমরান, যিনি ঈসা আ. এর নানা। তার স্ত্রী তখন গর্ভবতী। তার স্ত্রী মনে মনে নিয়ত করলেন তার অনাগত সন্তানকে তিনি আল্লাহর নামে উৎসর্গ করবেন। অর্থাৎ তাকে বায়তুল মুকাদ্দাসের খেদমতে পেশ করবেন। সময় কেটে যায় সেই সাথে সন্তান ভূমিষ্ঠের দিনও ঘনিয়ে আসে। অবশেষে ইমরানের ঘর আলোকিত করে জন্ম নিলো এক ফুটফুটে শিশু। ইমরানের স্ত্রী সন্তানকে দেখে খানিকটা হতাশ হলেন।
এ যে মেয়ে! একে কী করে আমি আল্লাহর ঘরের খেদমতে পেশ করবো?
কিন্তু আরশের অধিপতি বললেন, এ কোনো ছেলে থেকে কম নয়। তিনি নাম রাখলেন ‘মারইয়াম’।
শিশু মারইয়াম বড় হতে লাগলো। একসময় রীতি অনুযায়ী লটারির মাধ্যমে শিশু মারইয়ামের দায়িত্ব অর্পিত হলো যাকারিয়া আ. এর উপর। আপাত দৃষ্টিতে লটারি হলেও মূলত এটা ছিলো আল্লাহরই হুকুম। যাকারিয়া আ. তখন বৃদ্ধ। তার কোনো সন্তান ছিলো না। তিনি সম্পর্কে মারইয়াম আ. এর খালু হোন। বায়তুল মুকাদ্দাসের পাশে মেহরাবে মারইয়াম আ. বড় হতে লাগলেন। মসজিদের খেদমত করা শুরু করলেন যখন কেউ থাকতো না। মাঝে মাঝে হযরত যাকারিয়া আ. তাকে দেখতে মেহরাবের নিকট আসলে তিনি লক্ষ্য করতেন মৌসুম ছাড়াও মারইয়াম আ. এর কাছে নানা ফলমুল থাকে। তিনি অবাক হয়ে একদিন জিজ্ঞেস করলেন, এগুলো কোথা হতে পাও?
জবাবে মারইয়াম আ. বললেন, আমার আল্লাহ আমাকে দেন।
একদিন নিয়ম মতো মারইয়াম আ. তার নির্ধারিত স্থানে পায়াচারী করছিলেন। এমন সময় হঠাৎ করে কোথা হতে এক সুদর্শন যুবকের উদয় ঘটলো। ঘটনার আকস্মিকতায় মারইয়াম আ. ঘাবড়ে গেলেন। তিনি ভয় পেয়ে যুবককে বললেন, আল্লাহকে ভয় করো। এবার যুবক মুখ খুললো।
সে বললো, আমি কোনো মানুষ নই। আমি হলাম ফেরেশতা জিবরীল। এতে মারইয়াম আ. খানিকটা আশ্বস্ত হলেন। এবার জীবরিল আ. বললেন, আল্লাহ আপনাকে সন্তানের সুসংবাদ দিয়েছেন। মারইয়াম আ. অবাক হয়ে বললেন, এটা কী করে সম্ভব?
না কোনো পুরুষ আমাকে কোনোদিন স্পর্শ করেছে আর না আমি যিনাকারিনি। জীবরিল আ. বললেন, এভাবেই। আল্লাহ হও বললে হয়ে যায়।
গর্ভে সন্তান আসার পর মারইয়াম আ. চিন্তিত হয়ে পড়লেন। লোকদের তিনি কী বলে বিশ্বাস করাবেন?
তার মনে হচ্ছিলো এর আগেই যদি তার মৃত্যু হতো। এরপর আল্লাহর হুকুমে তিনি পূর্ব দিকে রওয়ানা দিলেন। চলতে চলতে তিনি একটি খেজুর গাছের নিচে গিয়ে আশ্রয় নিলেন। ক্লান্ত শরীর নিয়ে আর পেরে উঠছেন না মারইয়াম আ.। হঠাৎ একটা আওয়াজ বলে উঠলো, তোমার পায়ের কাছে ঝর্ণা হয়েছে দেখো।
এরপর সেই কন্ঠ আবার বললো, খেজুর গাছের কান্ড ধরে নাড়া দাও গাছ থেকে খেজুর পড়বে তোমার জন্য। একদম তাই হলো। এরপর এলো সেই মহেন্দ্রক্ষণ। জন্ম নিলেন নবী ঈসা আ.। তার জন্মকে তুলনা করা হয়েছে আদম আ. এর সৃষ্টির সাথে। আদম আ. যেমন পিতা মাতা ছাড়া সৃষ্টি হয়েছেন ঈসা আ. তেমনি পিতা ছাড়া জন্ম নিয়েছেন।
শিশু ঈসা আ. কে কোলে নিয়ে মারইয়াম আ. আল্লাহর হুকুমে লোকবসতির দিকে এগিয়ে চললেন। আল্লাহ তাকে নির্দেশ করলেন, লোকে কিছু জিজ্ঞেস করলে তিনি যেন বলেন আমি রোজা রেখেছি। তখনকার সময়ে রোজা রাখলে সম্ভবত কথা বলা নিষেধ ছিলো। মারইয়াম আ. তাই করলেন।
লোকেরা তার কোলে শিশু দেখে বলতে লাগলো, তোমার পিতা তো অনেক ভালো লোক। তুমি এমন হলে কীভাবে?
মারইয়াম আ. কিছু না বলে কোলের শিশুর দিকে ইশারা করলেন। এটা দেখে লোকেরা হাসাহাসি করতে লাগলো। এমন সময় হঠাৎ করে ঈসা আ. কথা বলে উঠলে তারা বোবার মতো চেয়ে রইলো। নিজের মায়ের সতিত্বের সার্টিফিকেট দিলেন শিশু ঈসা আ.। এমন কান্ড দেখে অনেকেই ঈমান আনলেও কিছু কপট লেগে পড়লো বিরোধীতায়। অপপ্রচারে লিপ্ত হয়ে পড়লো তারা। হতভাগাদের কপালে হেদায়াত জুটেনি।