ঈদের সালাত কোথায় আদায় করা সুন্নত? মসজিদে না কি ঈদগাহে? এবং ঈদের পূর্বে দু রাকআত সালাত প্রসঙ্গ
ঈদের সালাত কোথায় পড়া রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নত? মসজিদে না কি ঈদগাহে? আর হাদিসে এসেছে, ঈদের সালাতের আগে ও পরে আর কোন সালাত নেই। কিন্তু যদি মসজিদে ঈদের সালাত আদায় করা হয় তাহলে কি বসার আগে দু রাকআত তাহিয়াতুল মসজিদ পড়া যাবে?
ঈদের সালাত ঈদগাহে পড়া সুন্নত। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবিগণ মরুভূমির খোলা প্রান্তরে ঈদগাহে সালাত আদায় করতেন বলে একাধিক হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে। যেমন:
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْرُجُ يَوْمَ الفِطْرِ وَالأَضْحَى إِلَى المُصَلَّى
আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন ঈদগাহে গমন করতেন। (সহিহ বুখারি)
অন্য হাদিসে এসেছে, (আবদুল্লাহ) ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَغْدُو إِلَى الْمُصَلَّى وَالْعَنَزَةُ بَيْنَ يَدَيْهِ تُحْمَلُ وَتُنْصَبُ بِالْمُصَلَّى بَيْنَ يَدَيْهِ فَيصَلي إِلَيْهَا. رَوَاهُ البُخَارِيّ
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকালে ঈদগাহে চলে যেতেন। যাবার সময় তাঁর সাথে একটি বর্শা নিয়ে যাওয়া হতো। এ বর্শা সামনে রেখে তিনি সালাত আদায় করতেন।”
(সহিহ বুখারি)
এসব হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ঈদের সালাত ঈদগাহে পড়া সুন্নত। কেননা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে নববী ছেড়ে বাইরে খোলা প্রান্তরে ঈদের সালাত পড়েছেন-যদিও এ মসজিদে সালাত আদায় করা কাবা শরিফ ছাড়া পৃথিবীর অন্যান্য মসজিদের চেয়ে এক হাজারগুণ সওয়াব বেশি।
এখান থেকে ঈদগাহে ঈদের সালাত পড়ার গুরুত্ব প্রমাণিত হয়।
খুলাফায়ে রাশেদিন তথা আবু বকর রা., উমর রা., উসমান রা, এবং আলী রা. প্রমুখগণও এমনটি করতেন।
শুধু তাই নয়, যুগে যুগে বিভিন্ন দেশে অদ্যাবধি এই রীতি চালু আছে। সর্বযুগের আলেমগণ এ ব্যাপারে একমত আল হামদুলিল্লাহ। ইবনে কুদামা বলেন,
أنَّه إجماعُ الناس؛ يخرجون إلى المصلَّى مع شرفِ مسجدِه
“মসজিদ মর্যাদাপূর্ণ স্থান হওয়ার পরও ঈদগাহে গিয়ে ঈদের সালাত পড়ার ব্যাপারে মুসলিমদের ইজমা রয়েছে।” (আল মুগনি ২/২৭৬)
ঈদগাহে ঈদের সালাত পড়ার উপকারিতা কি?
১. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহ এবং খুলফায়ের রাশেদার নীতির অনুসরণ।
২. ঈদগাহে ঈদের সালাত আদায়ের মাধ্যমে ইসলামের একটি বড় নিদর্শন, সৌন্দর্য এবং প্রভাব-প্রতিপত্তি প্রকাশিত হয়। কারণ মুসলিমগণ সুন্দর জামা-কাপড় পরে, আতর-সুগন্ধি মেখে তাকবীর ধ্বনি দিতে দিতে ঈদের মাঠে গমন করে-যা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক দৃশ্য-যা দেখেও অমুসলিমরা ইসলামের সৌন্দর্যে অভিভূত হয়।
৩. তাছাড়া ঈদগাহে ঈদের সালাত পড়লে সাধারণত কয়েক মসজিদ বা কয়েক গ্রাম ও এলাকার মুসল্লিগণ এক জায়গায় জমায়েত হওয়ার সুযোগ পায়। এতে একটি আনন্দ মুখর ঈমানি পরিবেশে বিভিন্ন এলাকার মুসলিমদের আন্তরিক দেখা-সাক্ষাৎ, শুভেচ্ছা ও কুশলাদি বিনিময় হয়। এর ফলে তাদের মাঝে সম্প্রতি ও ভালবাসার বন্ধন সুদৃঢ় হয় এবং ভ্রাতৃত্ব বোধ ও একতাবদ্ধ থাকার মনোভাব জাগ্রত হয় -যা মুসলিমদের জন্য অবশ্যই কল্যাণকর।
৪. হাদিসে মহিলাদেরকেও ঈদের মাঠে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে-এমনকি ঋতুমতী মহিলাদেরকেও। অবশ্য ঋতুমতী মহিলাদের সালাত না থাকার কারণে তারা মূল সালাতের স্থান থেকে দূরে অবস্থান করলেও তারা মুসলিমদের দুআ ও কল্যাণকর কাজে শরিক হওয়ার সুযোগ পাবে।
যেমন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
প্রখ্যাত সাহাবি উম্মে আতিয়া (নুসাইবা বিনতে কা’ব রা.) বলেন,
أُمِرْنَا أَنْ نُخْرِجَ، الْحُيَّضَ يَوْمَ الْعِيدَيْنِ وَذَوَاتِ الْخُدُورِ، فَيَشْهَدْنَ جَمَاعَةَ الْمُسْلِمِينَ وَدَعْوَتَهُمْ، وَيَعْتَزِلُ الْحُيَّضُ عَنْ مُصَلاَّهُنَّ. قَالَتِ امْرَأَةٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِحْدَانَا لَيْسَ لَهَا جِلْبَابٌ. قَالَ “ لِتُلْبِسْهَا صَاحِبَتُهَا مِنْ جِلْبَابِهَا ”.
ঈদের দিনে ঋতুমতী এবং পর্দানশীন মহিলাদের বের করে আনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন তারাও মুসলিমদের জামাআত ও দুআয় শরিক হতে পারে। অবশ্য ঋতুমতী মহিলারা সালাত এর স্থান থেকে দূরে থাকবে।
এক মহিলা বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের যদি কারও ওড়না না থাকে (তাহলে সে কী করবে?)
তিনি বললেন, তাঁর সাথীর উচিত তাকে ওড়না পরার ব্যবস্থা করে দেয়া (অর্থাৎ অতিরিক্ত ওড়না থাকলে তাকে ধার দিয়ে হলেও ওড়না পারানোর ব্যবস্থা করবে।) [সহীহ বুখারি, অধ্যায় ৮/ সালাত]
এ সুন্নত আরব বিশ্ব সহ পৃথিবীর বিভিন্ন মুসলিম দেশে এবং বাংলাদেশের কিছু কিছু এলাকায় অনুসরণ করা হলেও দুর্ভাগ্য জনক যে, অধিকাংশ এলাকায় মহিলাগণ মুসলিমদের এ জাতীয় উৎসব এবং ইসলামের এ কল্যাণ থেকে বঞ্চিত। কারণ আমাদের সমাজে মসজিদগুলোতে মহিলাদের সালাতের উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা নেই। আর যদি থাকেও সেখানে শরিয়তের বিধান অনুযায়ী ঋতুমতী মহিলারা দীর্ঘ সময় অবস্থান করতে পারে না।
সুতরাং ঈদের মাঠে সালাত আদায় করা হলে সর্বস্তরে মহিলাদেরকে তাতে অংশ গ্রহণ সংক্রান্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশ বাস্তবায়ন করা সহজ হবে।
ঈদের সালাতের পূর্বে কোনও সালাত নেই:
ঈদের সালাতে পূর্বে কোন সালাত পড়ার বৈধতা হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত নয় যখন তা ঈদের মাঠে পড়া হবে।
যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْرُجُ يَوْمَ الفِطْرِ وَالأَضْحَى إِلَى المُصَلَّى، فَأَوَّلُ شَيْءٍ يَبْدَأُ بِهِ الصَّلاَةُ
আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন ঈদগাহে গমন করতেন এবং সর্বপ্রথম যে জিনিসটি দ্বারা শুরু করতেন তা হল, (ঈদের) সালাত।” (সহিহ বুখারি)
এখান থেকে বুঝা গেল, ঈদের মাঠে সর্বপ্রথম করণীয় হল, ঈদের সালাত আদায়। এর আগে কোনও সালাতের কথা হাদিসে আসে নি।
মসজিদে ঈদের সালাত আদায় করা হলে দু রাকআত দুখুলুল মসিজদ/তাহিয়াতুল মসজিদ পড়ার বৈধতা:
ঈদগাহ না থাকলে বা বাইরে ঈদের সালাত পড়ার পরিবেশ না থাকলে বা বিশেষ পরিস্থিতিতে মসজিদে ঈদের সালাত পড়া জায়েজ আছে। আর যেহেতু একাধিক হাদিসে মসজিদে প্রবেশের পর বসার পূর্বে দু রাকআত সালাত (তাহিয়াতুল মসজিদ/দুখুলুল মসজিদ) আদায় ব্যতিরেকে বসতে নিষেধ করা হয়েছে তাই ঈদের সালাত মসজিদে পড়লে দু রাকআত তাহিয়াতুল মসজিদ পড়া শরিয়ত সম্মত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ فَلاَ يَجْلِسْ حَتَّى يُصَلِّيَ رَكْعَتَيْنِ
“ যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে তখন দু রাকআত সালাত আদায়ের পূর্বে বসবে না।”
(সহীহ বুখারি)
আল্লাহু আলাম।