ইস্তেগফারের গুপ্তধন

আমরা এমন এক সময়ে বসবাস করছি যখন ঈমান ধরে রাখা জ্বলন্ত কয়লা হাতে ধরে রাখার থেকেও কঠিন। আর এরকম কঠিন একটা সময়ে পরিপূর্ণভাবে গুণাহ থেকে বেঁচে থাকা কতোটা কঠিন তা প্রত্যেক মুমিনের কাছেই স্পষ্ট। আর তার উপরে কুরআনের মাধ্যমে শয়তানের প্রত্যক্ষ হুমকি তো আমাদের সামনে স্পষ্ট,

“সে বলল, ‘আপনি আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, সে কারণে অবশ্যই আমি তাদের জন্য আপনার সোজা পথে বসে থাকব। তারপর অবশ্যই তাদের নিকট উপস্থিত হব, তাদের সামনে থেকে ও তাদের পেছন থেকে এবং তাদের ডান দিক থেকে ও তাদের বাম দিক থেকে। আর আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না’।”
[সূরা আ’রাফ: ১৬-১৭]

আমরা আমাদের চতুর্দিক থেকে শয়তানের আক্রমণের শঙ্কা নিয়ে দিনযাপন করছি। তাই দেখা যায় প্রতিনিয়তই ছোটো-বড় পাপে জড়িয়ে পড়ি আর তা হয় কখনো জেনেশুনে আবার কখনোবা অজ্ঞতাবশতঃ। এবং সত্য হচ্ছে এটাই স্বাভাবিক কেননা এক তো শয়তান আমাদের ফাঁদে ফালাচ্ছে এবং দুই মানুষ স্বভাববশতঃ গুণাহ করবেই।
কেননা নবীজী ﷺ বলেছেন,

“সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ, তোমরা যদি গুনাহ না করতে তাহলে আল্লাহ তোমাদের বিলীন করে দিয়ে নতুন এমন এক জাতি সৃষ্টি করতেন যারা গুনাহ করত আবার পরক্ষণেই আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইত। তারপর তিনি তাদের ক্ষমা করে দিতেন।
[সহিহ মুসলিম, হাদীস নং ৭১৪১]

অর্থাৎ,আমরা গুণাহ করেই ফেলবো কিন্তু এরপর আমাদের কর্তব্য হচ্ছে আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করা কেননা আল্লাহ পাক চান আমরা, তার বান্দারা তাঁর নিকটবর্তী হ‌ই আর অনুতপ্তবোধ ও ক্ষমার মাধ্যমে‌ই খুব সহজে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়। আল্লাহ পাক আপনাকে আমাকে বার বার মাফ করতে চান। তিনি বলেন,

“তুমি তোমার রবের সপ্রশংস তাসবীহ পাঠ কর এবং তাঁর কাছে ক্ষমা চাও নিশ্চয় তিনি তাওবা কবূলকারী।”
[সূরা নাসর: ০৩]

আর এই ক্ষমা প্রার্থনার সবচাইতে সহজ ও সেরা একটি উপায় হচ্ছে বেশি বেশি ইস্তেগফার করা। আল্লাহ পাক আমাদের জন্য এই ইস্তেগফার পাঠকে ক্ষমা লাভের উপায় তো বানিয়েছেন‌ই, বরং এর পাশাপাশি এর মধ্যে আরো বেশি বরকত লুকিয়ে রেখেছেন।
তো কি সেই বরকতময় বিষয়সমূহ যা প্রত্যেক ইস্তেগফারের মধ্যে গুপ্তধনের মতো লুকিয়ে আছে?
আল্লাহ পাক বলেন,

“তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান- সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা।”
[সূরা নূহ:১০-১২]

সুবহানাল্লাহ!

আমাদের জীবন-জীবিকার পরিপূর্ণ বরকত ইস্তেগফারে লুকিয়ে আছে। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার বক্তব্য অনুযায়ী ইস্তেগফারের মাধ্যমে আমরা পাঁচটি জিনিস পেতে পারি,

১. মুষলধারে বৃষ্টি,
যা আমাদের ফল-ফসলের পুষ্টি ও বিকাশের প্রধানতম মাধ্যম এবং জীবন ধারণের অন্যতম উপায় পানির প্রধানতম উৎস। পাশাপাশি আমাদের চারপাশের পরিবেশকে সতেজ,নির্মল ও সহনশীল রাখার জন্য মুষলধারে উপকারী বৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই।

২. ধন-সম্পদ লাভ
যা পরিবারের সদস্যদের ভরণপোষণের জন্য এবং সমাজ‌ ও রাষ্ট্রের ব্যায় নির্বাহের জন্য সম্পদ জরুরি।

৩. সন্তান-সন্ততি লাভ
চিন্তা করতে পারেন, ইস্তেগফার সন্তান লাভের আমল হতে পারে! আজকের দিনে আমাদের আশেপাশে একটা সন্তানের জন্য মা-বাবার কতো হাহাকার শোনা যায়। কিছু না কেবল একটা সন্তান চাই তাদের আর এতেই বুঝা যায় সন্তান আল্লাহর তরফ থেকে আসা কতোবড় নিয়ামত। আর ইস্তেগফার এই নিয়ামত প্রাপ্তির পথ সহজ করতে সক্ষম।

৪. বাগ-বাগিচা লাভ,
আমাদের খাদ্যের উৎস এই বাগ-বাগিচা। আমরা ইস্তেগফার করলে আমাদের বাগানের ফল-ফুলে বরকত আসবে যা আমাদের জীবিকাকে বরকতময় করবে।

৫. নদী-নালা লাভ
স্বাদু পানির মূল উৎস নদী-নালা। আবার এই নদী আমাদের খাদ্য-পুষ্টি ও জীবিকা নির্বাহের উপায়। ইস্তেগফারের মাধ্যমে নদী-নালায় সমৃদ্ধি লাভের মাধ্যমে আমাদের জীবন-জীবিকা বরকতপূর্ণ হতে পারে।

যেই ইস্তেগফারের মধ্যে এতো এতো গুণ সেই ইস্তেগফার থেকে কিভাবে আমরা দূরে থাকতে পারি আর প্রতিনিয়তই ছোটো-বড় পাপর বোঝা থেকে মুক্তির জন্য ইস্তেগফার অপেক্ষা বড় উপায়‌ই বা কি আর হতে পারে!

লিখেছেন

John Doe

জেনারেল লাইনে পড়াশোনার ব্যস্ততায় দ্বীনি জ্ঞানার্জনের সুযোগ খুবই কম পেয়েছি তারপরও অনলাইন ভিত্তিক দাওয়াহ এবং ইসলামী ব‌ইয়ের সুবাদে ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের সুযোগ হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।
সেই জ্ঞানকে ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ইসলামের সৌন্দর্যকে উম্মাহর সামনে ফুটিয়ে তোলার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই আমার এই টুকটাক লেখালেখি।

All Posts

জেনারেল লাইনে পড়াশোনার ব্যস্ততায় দ্বীনি জ্ঞানার্জনের সুযোগ খুবই কম পেয়েছি তারপরও অনলাইন ভিত্তিক দাওয়াহ এবং ইসলামী ব‌ইয়ের সুবাদে ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের সুযোগ হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।
সেই জ্ঞানকে ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ইসলামের সৌন্দর্যকে উম্মাহর সামনে ফুটিয়ে তোলার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই আমার এই টুকটাক লেখালেখি।

Exit mobile version