ইসলামী বিধান চিরস্থায়ী। তামাম দুনিয়াবাসী যদি বলে, মদ হালাল, তাতে মদ হালাল হয়ে যাবে না। কারণ ‘‘আল্লাহর বিধান কখনোই পরিবর্তনশীল নয়”।
বর্তমানে প্রচলিত অজুহাত!
১. অধিকাংশ মানুষই কি ভুল করে আসছেন?
২. বাপ-দাদারা কি এতদিন ভুল করে এসেছেন?
৩. এতো বড় বড় আলেমরা তো এভাবেই বলে আসছেন, আমল করে আসছেন! তারা কি ভুল করে গেছেন?
মূলত এই তিনটি অজুহাতের দোহাই দিয়ে বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর দাওয়াতকে পরিত্যাগ করতেছে। মনে রাখতে হবে “অধিকাংশ” কোন দলীল নয়; দলীল হল কুরআন ও সহীহ হাদিস। আল্লাহ তা’য়ালা ভালো করেই জানেন (তিনি পূর্ব পর সবই অবগত) ভবিষ্যতে এমন প্রশ্ন আসবে তাই তিনি (আল্লাহ সুবহানাল্লাহু ওয়াতাআ’লা) নিদর্শন রেখে অজুহাত বন্ধ করে দিয়েছেন।
আসুন অধিকাংশের ব্যাপারে মহান আল্লাহ্ তায়ালা আল-কুরআনে কি বলেছেন একটু দেখে নিই-
“অধিকাংশ মানুষ প্রকৃত ব্যাপার সম্পর্কে অবগত নয়।”
[ সূরা ইউসুফ: ৬৮ ]
“অধিকাংশ লোকই অবগত নয়।”
[সূরা আনআম: ৩৭ ]
“অধিকাংশই অজ্ঞ।”
[ সূরা আনআম: ১১১ ]
“অধিকাংশই জানে না।”
[ সূরা আরাফ:১৩১ ]
“তুমি যতই প্রবল আগ্রহ ভরে চাও না কেন, মানুষদের অধিকাংশই ঈমান আনবে না।”
[ সূরা ইউসুফ : ১০৩ ]
“আমি তোমার নিকট সুস্পষ্ট আয়াত নাজিল করেছি, ফাসিকরা ছাড়া অন্য কেউ তা অস্বীকার করে না; বরং তাদের অধিকাংশই ঈমান রাখে না।”
[ সূরা বাকারাহ: ৯৯, ১০০ ]
“আমি তো তোমাদের কাছে সত্য নিয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু তোমাদের অধিকাংশই ছিলে সত্য অপছন্দকারী।”
[ সূরা যুখরুফ: ৭৮ ]
“তাদের অধিকাংশকেই আমি প্রতিশ্রুতি পালনকারী পাইনি, বরং অধিকাংশকে ফাসিকই পেয়েছি।”
[ সূরা আরাফ : ১০২ ]
“তুমি যদি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের অনুসরণ করো তাহলে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করে ফেলবে, তারা কেবল আন্দাজ-অনুমানের অনুসরণ করে চলে; তারা মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই করেনা।”
[ সূরা আনআম: ১১৬ ]
‘’তাদের অধিকাংশই কেবল ধারণার অনুসরণ করে, প্রকৃতপক্ষে সত্যের মোকাবেলায় ধারনা কোন কাজে আসে না।”
[ সূরা ইউসুফ: ৩৬ ]
“অধিকাংশ মানুষ আল্লাহকে বিশ্বাস করে, কিন্তু সাথে সাথে শিরকও করে।’’
[ সূরা ইউসুফ: ১০৬ ]
“আমি কি তোমাদের বলবো যে, কাদের নিকট শয়তান অবতীর্ণ হয়? তারা অবতীর্ণ হয় প্রত্যেকটি চরম মিথ্যুক ও পাপীর নিকট, ওরা কান পেতে থাকে আর তাদের অধিকাংশই মিথ্যাবাদী।’’
[ সূরা শু’আরা : ২২১, ২২২, ২২৩ ]
“তারা তাদের পিতৃ-পুরুষদের বিপথগামী পেয়েছিল। অতঃপর তাদেরই পদাংক অনুসরন করে ছুটে চলেছিল। এদের আগের লোকদের অধিকাংশই গোমরাহ হয়ে গিয়েছিল”
[ সূরা সাফফাত : ৬৯, ৭০, ৭১ ]
উপরোক্ত আয়াতসমূহ যদিও ইসলামের প্রাথমিক যুগের কাফের-মুশরিক ও তাদের দোসর মুনাফিকদের জন্য নাযিল হয়েছিল, তারপরেও পরোক্ষভাবে আয়াতগুলো বর্তমান যারা কুরআন ও সহিহ হাদিসের দাওয়াতকে অধিকাংশের অজুহাত দিয়ে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে তাদের জন্যও একই বিধান প্রযোজ্য। যা উপরোক্ত আয়াতসমূহে আল্লাহ সুবহানাল্লাহু ওয়াতাআ’লা পরিষ্কার ভাষায় ঘোষণা করেছেন।
আসুন বাপ-দাদার দোহাই দেওয়া লোকদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ তায়ালা আল-কুরআনে কি বলেছেন একটু দেখে নিই-
‘‘আর যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার আনুগত্য করো তখন তারা বলে, আমরা আমাদের বাপ-দাদাকে যে রীতির ওপর পেয়েছি তার আনুগত্য করবো। শয়তান যদি তাদেরকে জ্বলন্ত আগুনের দিকেও আহ্বান করতে থাকে তবুও কি তারা তারই আনুগত্য করবে?”
[ সুরা লুকমান : ২১ ]
বাপ-দাদার ধর্মের সম্মান রক্ষার জন্য নবীজি (সা.) এর প্রিয় চাচা আবু তালেব কাফির অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেছে! বাপ-দাদার ধর্ম টিকিয়ে রাখার জন্য আবু জাহেল, আবু লাহাব’রা কাফের অবস্থায় মরেছে! অথচ আমাদের সমাজে এখনো সে একইরকম ভাবে বাপ-দাদার অজুহাত দেয়া হয়। আবু তালিবের মৃত্যুর সময় এই আবু জাহেল, আবু লাহাব’রা-ই বলেছিল কালেমা পড়ে বাপ-দাদার মুখে চুনকালি দিওনা, এজন্য আবু তালিব ঈমান নিয়ে মরতে পারে নাই।
যদিও তিনি নবীজি (সা.) এর প্রিয়তম চাচাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। আবু তালেব নিজেও জানতো ও বিশ্বাস করতো যে, কুরআন আল্লাহর বাণী, মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর প্রেরিত সত্য নবী, তবুও তাঁর নসীবে ঈমান জোটেনি!
এখনো সমাজে যারা বাপ-দাদাদের কৃতকর্মের দোহাই দিয়ে ইসলামের চিরন্তন সত্য কুরআন ও হাদিসের আনীত বিধানের পরিপন্থী কাজ করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত তাদের জন্যও একই বিধান প্রযোজ্য।
আসুন বড়-বড় আলেমদের দোহাই দেওয়া লোকদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ তায়ালা আল-কুরআনে কি বলেছেন একটু দেখে নিই-
“হে ঈমানদারগণ! আনুগত্য করো আল্লাহর এবং আনুগত্য করো রাসূলের আর সেই সব লোকের যারা তোমাদের মধ্যে দায়িত্ব ও ক্ষমতার অধিকারী। এরপর যদি তোমাদের মধ্যে কোন ব্যাপারে বিরোধ দেখা দেয় তাহলে তাকে আল্লাহ ও রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও। যদি তোমরা যথার্থই আল্লাহ ও পরকালের ওপর ঈমান এনে থাকো। এটিই একটি সঠিক কর্মপদ্ধতি এবং পরিণতির দিক দিয়েও এটিই উৎকৃষ্ট।”
[ সূরা আন-নিসা : ৫৯ ]
এ আয়াতটি ইসলামের সমগ্রীক ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক জীবনের বুনিয়াদ। জীবন-যাপনের ক্ষেত্রে কার আনুগত্য করতে হবে এবং কতটুকু করতে হবে এআয়াতে সে সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, উক্ত আয়াতে আল্লাহ ও তাঁর প্রেরিত রাসূল (সা.) এর পূর্ণ আনুগত্যের পর সর্তসাপেক্ষ এমন সব আলেমদের অনুসরণ করতে বলা হয়েছে, যারা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা’য়ালা ও রাসূল (সা.) কর্তৃক আনীত বিধানের অনুকরণে কথা বলেন।
আর তাঁরা যত বড় আলেম বা মুহাদ্দিস হোক না কেন তাঁদের কথার মধ্যে যদি কোনো ধরনের বিরোধ বা বৈপরীত্য দেখা দেয় তাহলে তাঁদের কথা বাদ দিয়ে কুরআন ও সুন্নাহর দিকে ফিরে যেতে হবে যদি আল্লাহ ও পরকালের ওপর ঈমান থাকে।
অর্থাৎ বর্তমানে কুরআন ও সহিহ সুন্নাহর সকল প্রকার দলিল প্রমাণ থাকার পরেও যারা বড়-বড় আলেমদের দোহাই দিয়ে বা অজুহাত দেখিয়ে ইসলামের চিরন্তন সত্য কুরআন ও হাদিসের আনীত বিধান সরাসরি বা পরোক্ষভাবে প্রত্যাখ্যান করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে প্রতিনিয়ত, তাদের অন্তরে যদি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস থাকে তারা যেন এরথেকে বিরত থাকে।
অন্যত্র আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, “তারা (ইয়াহুদী ও নাসারাগণ) আল্লাহ তায়ালাকে বাদ দিয়ে তাদের আলেম, তাদের পীর-দরবেশদের মাবুদ বানিয়ে নিয়েছে।”
[ সুরা আত্ তাওবা : ৩১)
“তোমাদের নিকট যদি কেউ কোনো বার্তা নিয়ে আসে, তাহলে সেটা যাচাই-বাছাই ও পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নাও।”
[ সুরা হুযরাত : ৬ ]
হাসান বসরী (রহ.)বলেন, ‘অন্ধ আমলকারী পথহারা পথিকের ন্যায়। সে কল্যানের চেয়ে অকল্যানই বেশি করে। অতএব তুমি এমনভাবে জ্ঞান অর্জন করো-যাতে আমল ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।”
[ ইবনে হাজার আসকালানী, ফাতহুল বারী- ১/২২৮পৃ. ]
“তোমরা বিশুদ্ধ চিত্তে আল্লাহর ইবাদত কর।”
[ সুরা আয-যুমার : ২ ]
মনে রাখতে হবে ‘অধিকাংশ’, ‘বাপ-দাদা’ ও ‘বড়-বড় আলেম’ কোন দলীল নয়; দলীল হল ‘কুরআন ও সহিহ সুন্নাহ্’।
সুতরাং হে আমার মুসলিম ভাই ও বোনেরা!আমরা অধিকাংশের, বাপ-দাদার ও বড়-বড় আলেম’দের অজুহাত বাদ দিয়ে কুরআন-সুন্নাহর অনুসরন করি। আর সেটাই সকলের জন্য উত্তম ও কল্যাণকর।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সকলকে দ্বীনের উপর অটল ও অবিচল রাখুন।
আ-মী-ন।